তেনার বিরুদ্ধে একটা নয়, দু’ দুটো নারী শ্লীলতাহানির অভিযোগ, উনি রাজ্যপালের রক্ষাকবচ পরে সেই অভিযোগের জন্য এখনও জেলে যাননি, সেই রক্ষাকবচের জন্যই তেনার বিরুদ্ধে তদন্তই শুরু করা যায়নি। সেই তিনি বাংলার তিলোত্তমা নিয়ে শিউরে শিউরে উঠছেন। একেই বলে, চালুনি বলে সূচকে তোর ইয়েতে কেন ফুটো। আদৌ ভদ্রলোক হলে যাঁর পদত্যাগ করে বাড়ি চলে যাওয়ার কথা, বলার কথা, আমি পদত্যাগ করলাম, আপনারা তদন্ত করুন, নির্দোষ হলে আবার ফিরব। সে সব না করে চেয়ারখানি এঁটে দিব্যি বসে রয়েছেন এবং শিউরে শিউরে উঠছেন। ওনারই রাজ্যে কয়েকজন চলচ্চিত্র পরিচালক প্রযোজক ইত্যাদির বিরুদ্ধে যৌন হেনস্থার খবর বেরিয়েছে, তাঁরা সারি দিয়ে পদত্যাগ করে জানিয়েছেন, তদন্ত হোক, সত্যিটা সামনে আসুক। তাঁরা বিখ্যাত মানুষজন। আর ইনি নামের পিছনে ময়ূরপুচ্ছের মতো বোস এঁটে শ্লীলতাহানির অভিযোগ মাথায় নিয়ে শ্লীলতাহানির প্রতিবাদ করছেন, এরকম নির্লজ্জ খুব একটা দেখা যায় না। সেই তিনিই গতকাল এক ভিডিও ক্লিপ জারি করেছেন, সন্ধ্যেবেলায় গগলস পরে বানানো এই ক্লিপ ইতিমধ্যেই অনেকে দেখেছে, শুনেছে। উনি যা যা বলেছেন, খানিক আগে ডিটো ওই কথাগুলোই বিজেপি রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার কিংবা রাজ্যের বিরোধী দলনেতা কাঁথির খোকাবাবু বলেছেন। তিনি বলেছেন এক অগণতান্ত্রিক সরকার চলছে, তারা মানুষের শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদের বিরুদ্ধে জলকামান আর টিয়ার গ্যাস নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। আসলে উনি রাজ্যপাল নন, এক মুখোশ পরা বিজেপি ক্যাডার, আর তাই সেটাই আমাদের বিষয় আজকে, রাজ্যপাল শুভেন্দুর ভাষায় কথা বলছেন।
গতকাল একটা অদ্ভুত নবান্ন অভিযান হয়েছে, শুভেন্দু অধিকারীর মুরোদ ছিল না নিজের নামে, দলের নামে নবান্ন অভিযান করার, কিন্তু পরিকল্পনা ছিল সাধারণ ছাত্রের নামে এক ক্যাওস তৈরি করে সরকার পুলিশ প্রশাসনকে গুলি চালাতে বাধ্য করবে। সেই অনুযায়ী বাকি ছকও কষা ছিল, আমরা তো মাঠে নামিনি, সাধারণ ছাত্র নেমেছিল, পুলিশ তাদেরও গুলি করে মারল, এটাই হত ন্যারেটিভ। সেসব ন্যারেটিভ শেখানোও ছিল রক্তপিপাসু মিডিয়াকে।
আরও পড়ুন: Aajke | শুভেন্দুর সুপার ফ্লপ নবান্ন অভিযান!
বিকেল পাঁচটাতে সুকান্ত মজুমদারের লালবাজার অভিযান, শুভেন্দু যাবেন রাজভবন, রাজ্যপাল বয়ান দেবেন আর পরের দিন বনধ ডাকা হবে। সবটাই একটা বড়সড় পরিকল্পনার অঙ্গ ছিল। সেই হিসেব মেনেই রাজ্যপাল তাঁর বিবৃতি দিলেন, জানালেন এটা শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ ছিল, মানুষের শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদের উপর সরকার অগণতান্ত্রিকভাবে জলকামান, টিয়ার গ্যাস চালিয়েছে। রাজ্যপাল একবারও জানার চেষ্টা করেছেন যে ১) এই নবান্ন অভিযানকে কেন আগেই বেআইনি ঘোষণা করেছিল? ২) কতটা শান্তিপূর্ণ ছিল এর প্রস্তুতি? ৩) আগের দিনই নাশকতার ছক কষা হয়েছিল, তার ভিডিও ভাইরাল? ৪) বেলা বাড়তেই ছাত্রসমাজের নামে কারা নেমেছিল অশান্তি করতে? ৫) কেন ২৬ জন পুলিশকর্মী আহত হলেন যার মধ্যে ৪ জনের আঘাত গভীর, তাঁরা হাসপাতালে? এসব না জেনেই তিনি যা করছেন তাকে স্রেফ রাজনীতি করা বলে অথচ শিরদাঁড়াতে তেমন জোরও নেই যে উনি দাঁড়িয়ে রাজনীতি করবেন। দুপুর বেলা থেকে যারা সোডার বোতল, পাথর আর ইট নিয়ে হামলা চালাল জায়গায় জায়গায়, সেটা ওনার চোখে পড়েনি, পড়েছে এক ষাটোর্ধ্ব মানুষের হাতের পতাকা, তাঁর উপরে লাঠি চালানো হয়নি, জল লেগেছে জলকামানের, হ্যাঁ হাতে ঝান্ডা ছিল, তো? হাতে ঝান্ডা নিয়ে গুন্ডামি করার লাইসেন্স থাকে নাকি? হাতে একটা ঝান্ডা নিলেই যা খুশি তাই করা যায়? কোথায় ছিলেন এই কালাচাঁদ যখন আমাদের কৃষকরা একজন নয়, দলে দলে হাতে জাতীয় পতাকা নিয়ে দিল্লি বর্ডারে মার খাচ্ছিলেন? লাঠির ঘা? মারা গেছেন? কোথায় ছিলেন তখন? সেদিন হাতে ঝান্ডা চোখে পড়েনি? এমন নির্লজ্জ একচোখোমি বন্ধ করে সাহস থাকলে একটা মিউনিসিপালিটি নির্বাচনে প্রার্থী হয়ে জিতে দেখান, ফ্রিতে রাজভবনে থেকে, সেখানে বসেই বাংলার বিরুদ্ধে চক্রান্ত করবেন, উসকানি দেবেন এসব মানুষ সহ্য করবে না। আমরা আমাদের দর্শকদের জিজ্ঞেস করেছিলাম, গতকাল ছাত্রসমাজের নাম করে যে নবান্ন অভিযানের ডাক দেওয়া হয়েছিল তাকে সামলাতে রাজ্য সরকার কি কোনও অগণতান্ত্রিক পদ্ধতির সাহায্য নিয়েছিল? রাজ্য সরকার কি যথেষ্ট ধৈর্যের সঙ্গেই অবস্থার মোকাবিলা করেননি? শুনুন মানুষজন কী বলেছেন।
গতকাল ওই ছাত্রসমাজের ডাকা নবান্ন অভিযানে একজন ছাত্রও গুরুতর আহত নন, অন্তত চারজন পুলিশ গুরুতরভাবে আহত, তারপরেও হঠাৎই এক বনধ ডেকে দেওয়া হল, কোনও প্রস্তুতি ছাড়াই। গতকালও নেট পরীক্ষা ছিল, আজও আছে, আমাদের গগলস পরা রাজ্যপালের এসব চোখেও পড়েনি, মাথাতেও ঢোকেনি, উনি আপাতত বিজেপির বি টিম হিসেবেই একচোখ বন্ধ করে রাজভবনেই দিন কাটাবেন।