Sunday, June 8, 2025
HomeCurrent Newsব্যথিত হৃদয়ে সুভাষের মৃত্যুতে শোক তর্পণ করলেন ফুটবলাররা

ব্যথিত হৃদয়ে সুভাষের মৃত্যুতে শোক তর্পণ করলেন ফুটবলাররা

Follow Us :

কোভিড বিধিকে মান্যতা দিয়ে সুভাষ ভৌমিককে শেষ দেখা দেখতে পেল না ময়দান। একে তো বেশ অকালেই চলে গেলেন সুভাষ ভৌমিক, তার উপর শেষ দেখাটা দেখতে না পাওয়ায় কলকাতা ময়দান শুধু শোকস্তব্ধই নয়, খানিকটা বিহ্বলও বটে। আমরা কথা বললাম সুভাষ ভৌমিকের সহ খেলোয়াড় এবং তাঁর সন্তানপ্রতিম ফুটবলারদের সঙ্গে। প্রতিবেদনে তুলে ধরা হল তারই নির্যাস।

শ্যাম থাপা : সুভাষ নেই এটা বিশ্বাসই হচ্ছে না। শুনেছিলাম ও অসুস্থ। হাসপাতালে আছে। কিন্তু এভাবে চলে যাবে ভাবিনি। আমার সঙ্গে ওর বন্ধুত্ব ছিল বহু দিনের। সেই বন্ধুত্ব ছিল শেষ দিন পর্যন্ত। কলকাতা মাঠে লোকে আমাকে চেনে মোহনবাগানের জার্সি গায়ে ইস্ট বেঙ্গলের জালে ব্যাক ভলিতে গোল করার জন্য। কিন্তু মনে রাখেনি সেই পাসটা বাড়িয়েছিল সুভাষ। ওরই ব্যাক সেন্টার থেকে ব্যাক ভলিতে গোলটা করেছিলাম আমি। আমাদের সময়ে কলকাতার তিন প্রধানে তারকার ছড়াছড়ি ছিল। কাকে ছেড়ে কার কথা বলব? আমি কলকাতায় এসে দুবার আবার বোম্বাইতে চলে যাই। ১৯৭৫ সালে ফেরার পর এখানেই থেকে যাই। সে বছর যখন ইস্ট বেঙ্গলে আসি তখন দুই উইঙ্গার ছিল সুভাষ ভৌমিক আর সুরজিৎ সেনগুপ্ত। প্রদীপদা কোচ। হাবিব-আকবর চলে গেছে মহমেডানে। গোল করার দায়িত্ব আমার। সুভাষ সাহস দিল। তুই কোনও চিন্তা করিস না। আমরা বল বাড়াব, তুই শুধু গোল করবি। শেষ পর্যন্ত তাই হল। সুভাষ আর সুরজিতের বাড়ানো বল থেকে গোলের পর গোল করেছি। আই এফ এ শিল্ড ফাইনালে মোহনবাগানকে আমরা ৫-০ গোলে হারাই। আমার দুটো গোল ছিল। এর সঙ্গে একটা পেনাল্টি মিস করি আমি। সুভাষ সে ম্যাচটায় দারুণ খেলেছিল। কোচ হিসেবে সুভাষের সাফল্যও বলার মতো। সারা ভারতের সব ট্রফি জিতেছি। এর সঙ্গে ছিল আসিয়ান কাপ। আমাদের বন্ধুদের মধ্যে ফুটবলার এবং কোচ হিসেবে সুভাষ যা সাফল্য পেয়েছে তার ধারেকাছে কেউ নেই। ওর জন্য সারা জীবন গর্ব অনুভব করব আমি। শুধু একটা ভাবনাই কুড়ে কুড়ে খাবে। সুভাষ আর নেই।

গৌতম সরকার : সুভাষ ভৌমিক যে এত তাড়াতাড়ি আমাদের ছেড়ে চলে যাবে তা কিছুতেই মানতে পারছি না। ও বরাবরই আনপ্রেডিক্টেবল। কখন কী করবে, কখন কী বলবে তা আগে থেকে অনেক সময় ধরা যেত না। মৃত্যুর সময়েও সেই স্বভাবটা বজায় রাখল। কত কথা মনে পড়ছে। পঁচাত্তরের সন্তোষ ট্রফি কালিকটে। হাবিব আকবর টিম ছেড়ে চলে গেছে। ফাইনালে কর্নাটকের সঙ্গে প্রথম দিন ড্র। সুভাষই আমাদের ভরসা। পরদিন ব্রেক ফাস্ট টেবলে সুভাষ নেই। ঘুম থেকে উঠে এল দশটার সময়। আমার সঙ্গে দেখা হতেই পেছনে একটা লাথি মেরে বলল, প্রথম বলটা আমায় দিবি। ওর কথা অমান্য করবে কে? প্রথম বলটাই ওকে দিলাম। তিনজনকে কাটিয়ে রঞ্জিত মুখার্জিকে দিয়ে গোলটা করাল। ফাইনালে প্রথম যে গোল করবে তার জন্য ছিল মারফি পুরস্কার। সেটা নিজে না নিয়ে রঞ্জিতকে পাইয়ে দিল। খুব বড় মনের মানুষ ছিল সুভাষ। কারুর বিপদ হয়েছে শুনলে ঝাঁপিয়ে পড়ত। কোচ হিসেবেও সুভাষ প্রচুর সাফল্য পেয়েছে। অকালে চলে গেলেও সুভাষকে ভুলবে না ভারতের ফুটবল।

সমরেশ চৌধুরি : আমি যাদের সঙ্গে খেলেছি তাদের মধ্যে সেরা উইঙ্গার ছিল সুভাষ ভৌমিক। সত্যি কথা বলতে কী তিয়াত্তর থেকে পঁচাত্তর পর্যন্ত ইস্ট বেঙ্গল যে সারা ভারত দাপিয়ে বেড়িয়েছে তার পিছনে ছিল সুভাষ। কলকাতা মাঠে তো বটেই দিল্লি, বোম্বের মাঠেও সুভাষকে বাগে আনতে হিমসিম খেত বিপক্ষের খেলোয়াড়রা। আর এ ব্যাপারে সুভাষের দোসর ছিল মহম্মদ হাবিব। ওরা দুজনে মিলেই বিপক্ষকে শেষ করে দিত। হাবিব হার মানতে জানত না। আর সুভাষের মনোভাব ছিল যে কোনও ভাবেই জিততে হবে। এখন বললে অনেকেই বিশ্বাস করবে না সত্তর দশকে দিল্লির মাঠে পঞ্জাবের দলগুলোকে খেলা খুবই সমস্যার ছিল। ওরা অকারণে লাথালাথি করত। রেফারির কাছ থেকেও সেভাবে আমরা সুরাহা পেতাম না। এই অবস্থায় আমরা যে ম্যাচের পর ম্যাচ জিততাম তার পিছনে সুভাষের বিরাট অবদান ছিল। আর কোচ সুভাষ তো অনবদ্য। পর পর দুবার জাতীয় লিগ জিতেছে, জাকার্তায় আসিয়ান কাপ জিতেছে এ সব তো অন্য কোনও কোচ পারেনি। পারবেও না। সুভাষ চলে গেল। লং লিভ সুভাষ।

প্রদীপ চৌধুরি : সুভাষ আর আমি এক দলে খেলি পর পর তিন বছর। ১৯৭৬ থেকে ১৯৭৮। ছিয়াত্তরেই আমি বোম্বের পাট চুকিয়ে মোহনবাগানে এলাম। সুভাষ এল ইস্ট বেঙ্গল থেকে। মহমেডান থেকে এল হাবিব আর আকবর। সে বছর আমরা অপরাজিত লিগ চ্যাম্পিয়ন হয়েছিলাম। পরে যুগ্মজয়ী হই আই এফ এ শিল্ডে। চ্যাম্পিয়ন হই রোভার্স কাপেও। পরের বছর কলকাতা লিগ হারলেও শিল্ড, রোভার্স এবং ডুরান্ড জিতে ত্রিমুকট জিতি। এই সব কটা সাফল্যের পিছনে সুভাষের বড় অবদান ছিল। লোকে সুভাষের ইস্ট বেঙ্গল সাফল্যের কথা শুধু বলে। কিন্তু সুভাষ মৌহনবাগানেও খুবই সফল। সাতাত্তরে ডুরান্ডের ফাইনালে আমাদের সামনে জেসিটি। প্রথম দিন ম্যাচ ড্র। পরের দিন আমরা ২-১ গোলে জিতলাম। গোল করল এবং করাল সুভাষ। ও রকম উইঙ্গার ভারতবর্ষে জন্মায়নি, জন্মাবে না। আর কোচ সুভাষ? অসাধারণ। আমার বলার দরকার নেই। ওর সাফল্য ওর হয়ে কথা বলবে। আমরা সাউথ ক্লাবে টেনিস খেলতাম। আমি, সুভাষ আর শ্যাম। আমাদের একজন বন্ধু চলে গেল। এই শোক সহ্য করা কঠিন।

বিদেশ বসু : ১৯৭৬ সালে আমি যখন মোহনবাগানে আসি, তখন তাদের বিরাট ফরোয়ার্ড লাইন। হাবিব-আকবরের সঙ্গে দুই উইঙ্গার উলাগানাথন আর সুভাষ ভৌমিক। খেলব কী, ভয়েই কুঁকড়ে থাকতাম। প্র্যাক্টিসের পর ভরসা জোগাত সুভাষদা। বলত, সবাই এক সময় জুনিয়র থেকে। জুনিয়র থেকেই সিনিয়র হয়। সুভাষদার কথাতে ভরসা পেয়ে একটু একটু করে বুকে বল আনতাম। পরের বছর উলাগাদা চলে গেল ইস্ট বেঙ্গলে। আমি প্রথম একাদশে এলাম। ডানদিকে সুভাষদা। মাঠের মধ্যে এবং বাইরে আমাকে প্রচুর গাইড করেছে। সুভাষদার মৃত্যু তাই আমার কাছে অত্যন্ত ব্যক্তিগত শোকের ব্যাপার। ও রকম উইঙ্গার আর ভারতবর্ষে জন্মাবে না। আমার তো মনে হয়, সত্তর দশকের সেরা উইঙ্গার সুভাষ ভৌমিক। আর কোচ সুভাষদা তো সবাইকে এক মাইল পিছনে ফেলে অনেক এগিয়ে থাকবে। আমাদের এবং আমাদের পরের প্রজন্মের ফুটবলারদের মধ্যে সেরা কোচ সুভাষদাই। সব বড় ফুটবলার বড় কোচ হয় না। সুভাষদা বড় প্লেয়ার এবং বড় কোচ। এত তাড়াতাড়ি চলে যাবে ভাবতাই পারছি না। প্রণাম জানাই ওকে।

মনোরঞ্জন ভট্টাচার্য : সুভাষ ভৌমিক নেই ভাবতেই পারছি না। গতকালই তো ক্রীড়ামন্ত্রীর ঘরে আমরা সবাই বৈঠক করলাম। সেখান সবাই মিলে বসে ঠিক করা হল এর পর কী করা হবে। রাত পোহাতে না পোহাতে এ রকম একটা খবরের জন্য তৈরি ছিলাম না। ব্যাক্তিগতভাবে আমি খুবই মর্মাহত। আমরা কিছুই করতে পারলাম না। আমার সঙ্গে ফুটবলার সুভাষের সম্পর্ক খুব একটা তৈরি হয়নি। আমি যখন ইস্ট বেঙ্গলে আসি, সুভাষদা তখন মোহনবাগানে। তবে ১৯৯১ সালে আমাকে মোহনবাগানে নিয়ে যাওয়ার পিছনে সুভাষদার বড় ভূমিকা ছিল। ইস্ট বেঙ্গলে চোদ্দ বছর খেলার পর যে মোহনবাগানে গেলাম সেটা সুভাষদা ছাড়া হত না। সেই সময় সুভাষদা আমার উপর খুব নির্ভর করত। বিশেষ করে সত্যজিৎ চ্যাটার্জিদের মতো জুনিয়রদের দায়িত্ব দিয়ে দিয়েছিল আমার উপর। সব মিলিয়ে মোহনবাগান পর্ব আমার ভাল হয়নি। তাতে সুভাষদার কোনও দোষ নেই। ফুটবল ছাড়ার পর সুভাষদার সঙ্গে খুবই ঘনিষ্ঠ হয়ে মেশার সুযোগ হয়েছিল। উনি ছিলেন আমাদের সবার অভিভাবক। আমার ছেলের বিয়ের নেমন্তন্ন করতে গিয়েছিলাম ওর বাড়িতে। খুব খুশি হয়েছিলেন। শরীরটা তখন থেকেই বেশ খারাপ ছিল। তাই আসতে পারেননি। কিন্তু তার মানে যে চলে যাবেন ভাবিনি। ওই রকম কোচ, ওই রকম ফুটবলার আর ভারতবর্ষে হবে না।

ভাষ্কর গাঙ্গুলি : গত কালই সুভাষদাকে নিয়ে সভা করলাম। আর আজ সকালেই সব শেষ। এটা ভাবতেই বড় কষ্ট হচ্ছে। আমার ফুটবল জীবনের শুরু থেকেই সুভাষ ভৌমিকের কথা শুনে আসছি। দূর থেকে দেখে খুব গম্ভীর বলে মন হত। কিন্তু মিশে দেখলাম একেবারে বাড়ির বড় দাদার মতো। ১৯৮৭ সালে সন্তোষ ট্রফির আসর বসেছিল কলকাতায়। সুভাষদা ছিল বাংলা টিমের ম্যানেজার। কিন্তু টুর্নামেন্ট যত এগোল, সুভাষদাই প্রায় কোচ হয়ে গেল। ফুটবলারদের সঙ্গে মিশত ছোট ভাইয়ের মতো। ওর এই স্বভাবটার জন্য পরবর্তী কালে কোচ হিসেবে চূড়ান্ত সফল হয়েছে। তবে এত তাড়াতাড়ি চলে যাবে ভাবতেই পারছি না।

অ্যালভিটো ডিকুনহা : সুভাষ ভৌমিক ছিলেন আমার বাবার মতো। কলকাতা থেকে অনেক দূরে গোয়ায় আছি। এত দূরে বসে যেন পিতৃ বিয়োগের শোক অনুভব করছি। কলকাতা ফুটবলে আমার সাফল্যের পিছনে সুভাষ স্যারের অবদান বিরাট। আমাকে নিজের ছেলের মতো দেখতেন। নিজের বাড়িতে রেখে আমাকে তৈরি করেছেন। আসিয়ান কাপে আমাদের সাফল্যের জন্য তিনি কী করেননি। শেষ পর্যন্ত যে সাফল্যে এসেছিল এর পিছনে সবচেয়ে বড় ভূমিকা ছিল ওনার। উনি সেই বিশ্বাসটা আমাদের মধ্যে ঢুকিয়ে দিতে পেরেছিলেন যে আমরাও পারি। আজ মনে হচ্ছে বড্ড তাড়াতাড়ি চলে গেলেন। ওর অভাব সারাজীবন অনুভব করতে হবে।

দেবজিৎ ঘোষ : মোহনবাগান থেকে আমি যখন মহিন্দ্রায় চলে গেলাম সে বছরই ইস্ট বেঙ্গলে কোচ হয়ে এলেন সুভাষদা। আমার সঙ্গে দেখা হলেই বলতেন, সামনের বছর তোকে ইস্ট বেঙ্গলে খেলাব। শেষ পর্যন্ত তাই হল। আসিয়ান কাপে সেমিফাইনাল ম্যাচ চলাকালীন আমি মাথায় চোট পেলাম। তাই ফাইনালে খেলা হয়নি। কিন্তু ফাইনালে জেতার পর সিঙ্গাপুরে সুভাষদার হাতঘড়িটার দিকে তাকিয়ে যখন বললাম, ঘড়িটা তো বেশ সুন্দর। সঙ্গে সঙ্গে আমাকে ঘড়িটা দিয়ে দিলেন। এর পর যতদিন উনি ইস্ট বেঙ্গলের কোচ ছিলেন আলাদা করে আমার সঙ্গে পরামর্শ করতেন। সিনিয়র হিসেবে আলাদা মর্যাদা দিতেন। আজকের দিনে সে সব কথাগুলোই মনে পড়ছে।

RELATED ARTICLES

Most Popular

Video thumbnail
Nitish Kumar | BJP | বিজেপি-নীতীশ জোট আদৌ টিকবে? আসন রফাতেই শুরু প্রবল ঝা/মেলা, দেখুন এই ভিডিও
00:00
Video thumbnail
Suvendu Adhikari | শাহজাহানের ফাঁ/সি চাই, সন্দেশখালিতে বিরাট দাবি শুভেন্দুর
00:00
Video thumbnail
Mahua Moitra | বিয়ের পর কী করছেন মুহুয়া? দেখুন এই ভিডিও
00:00
Video thumbnail
Narendra Modi | Nitish Kumar | বিহারের মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী নীতীশই? মোদির গেম প্ল্যান কী?
00:00
Video thumbnail
Weather Update | বর্ষা কবে আসছে? বিরাট আপডেট আবহাওয়া দফতরের
00:00
Video thumbnail
Nitish Kumar | BJP | বিজেপি-নীতীশ জোট আদৌ টিকবে? আসন রফাতেই শুরু প্রবল ঝা/মেলা, দেখুন এই ভিডিও
06:12
Video thumbnail
Birbhum | TMC | বীরভূমে শুরু ২১শে জুলাইয়ের প্রস্তুতি?
02:30:08
Video thumbnail
Mahua Moitra | বিয়ের পর কী করছেন মুহুয়া? দেখুন এই ভিডিও
01:42
Video thumbnail
Child Asthma | কী কী কারণে শিশুদের মধ্যে হাঁফানি দেখা যায়?
00:38
Video thumbnail
Child Asthma | কী কী নিয়ম পালনে হাঁফানি থেকে শিশুদের রক্ষা করা যাবে
01:34