বর্ধমান: বর্ধমান পুর এলাকায় বহুতল নির্মাণের ক্ষেত্রে প্রায় ২৩ কোটি টাকার কেলেঙ্কারি ধরা পড়ল অডিট রিপোর্টে। ওই রিপোর্ট প্রকাশ্যে আসতেই বিরোধীরা নড়েচড়ে বসেছে। কংগ্রেস-বাম-বিজেপি পুরভোটে এই কেলেঙ্কারিকে ইস্যু করবে বলে ঠিক করেছে।বর্ধমানের তৃণমূল নেতা এবং রাজ্য তৃণমূলের মুখপাত্র দেবু টুডু ‘বিষয়টি দল দেখছে’ বলে এড়িয়ে যান। অন্য একটি অডিট রিপোর্টে অভিযোগ করা হয়েছে প্রায় ৪২ লক্ষ টাকার বিনিময়ে ২০১৮ সালে বর্ধমান পুরসভা বেআইনিভাবে দশটি বহুতল নির্মাণের ছাড়পত্র দিয়েছে। পুরভোটের মুখে এই জোড়া কেলেঙ্কারি ফাঁস হয়ে যাওয়ায় অস্বস্তিতে পড়েছে শাসকদল।
রাজ্যের প্রিন্সিপ্যাল অ্যাকাউন্ট্যান্ট জেনারেল (ওয়েস্ট বেঙ্গল লোকাল অডিট ডিপার্টমেন্ট) সম্প্রতি ওই দুটি অডিট রিপোর্ট পেশ করে। সেই রিপোর্ট পুরসভার হাতে জমাও পড়েছে। বর্ধমান শহরের গোদা মৌজার ৩.৪২ একর জমির মালিক পুরসভা। ২০০৬ সালে পুরসভা পিপিপি মডেলে ওই জমিতে শপিং এবং রেসিডেন্সিয়াল কমপ্লেক্স তৈরির জন্য টেন্ডার ডাকে। কাজের বরাত পায় আরডিবি রিয়েলিটি অ্যান্ড ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিমিটিড নামে একটি সংস্থা। ২০০৭ সালে পুরসভার সঙ্গে ওই সংস্থার একটি মউ স্বাক্ষরিত হয়। তাতে বলা হয়, ওই সংস্থাকে মোট ১৬ কোটি ৯২ লক্ষ টাকা দিতে হবে পুরসভাকে। প্রথমেই সংস্থাটি চেকের মাধ্যমে ২ কোটি ৯২ লক্ষ টাকা পুরসভাকে দিয়ে দেয়। বাকি ১৪ কোটি টাকা ৬ কিস্তিতে পুরসভাকে মিটিয়ে দেওয়ার কথা বলা হয়েছিল।
ওই জমিতে বেসমেন্ট-সহ একটি ৬ তলা শপিং কমপ্লেক্স এবং ৪টি ৮ তলার রেসিডেন্সিয়াল কংপ্লেক্স করার কথা ছিল। নকশা অনুযায়ী কাজও শুরু হয়। ইতিমধ্যে নির্মাণকারী সংস্থাটি বাকি ১৪ কোটি টাকাও মিটিয়ে দেয়। ২০১৭ সালের ডিসেম্বর মাসে সংস্থা বহুতলের গোটা কংপ্লেক্সের উচ্চতা আরও বাড়ানোর আবেদন করে পুরসভার কাছে। অডিট রিপোর্টে অভিযোগ করা হয়েছে, মৌয়ে সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করেই সংস্থাটি ৮ তলার পরিবর্তে বেসমেন্ট সহ ১২ তলার ৪টি রেসিডেন্সিয়াল কমপ্লেক্স তৈরি করে।
আরও পড়ুন: Binoy Tamang: বিজেপি ‘গোর্খাল্যান্ড ললিপপ’ দেখিয়ে স্বার্থসিদ্ধি করে, অভিযোগ বিনয় তামাংয়ের
এখানেই কেলেঙ্কারির গন্ধ পেয়েছে এজি। অভিযোগ উঠেছে, উচ্চতা বাড়ানো নিয়ে কোনও নথি বা পুরবোর্ডের কোনও রেজোলিউশন পুরসভা থেকে পাওয়া যায়নি। অডিট রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে, উচ্চতা বাড়িয়ে সংস্থাটি প্রায় ২৩ কোটি টাকা মুনাফা করেছে। কিন্তু তার জন্য পুরসভায় কোনও অর্থ জমা পড়েনি। নির্মাণকারী সংস্থার ম্যানেজিং ডিরেক্টর প্রদীপ কুমার পাগুলিয়া জানান, সবকিছুই হয়েছে নিয়ম মেনে। কোথাও কোনও গোলমাল নেই।
অডিট রিপোর্টে আরও বলা হয়েছে, বর্ধমান পুরসভা ৫৯৯ নম্বর মেমোতে আরও একটি বহুতল নির্মাণের অনুমতি দিয়েছিল। তারও কোনও নথি পাওয়া যায়নি। কারা কী উদ্দেশে ওই বেসরকারি সংস্থাকে এই বিপুল পরিমাণে আর্থিক সুবিধা পাইয়ে দিয়েছে, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
অন্য একটি অডিট রিপোর্টে আরও কেলেঙ্কারি উঠে এসেছে। বলা হয়েছে, ২০১৮ সাল থেকে বর্ধমান পুরসভা থেকে ১০ টি বহুতল নির্মাণের ক্ষেএে অনিয়ম করেছে। ওইসব বহুতলের ছাড়পত্র পুরসভা ৪১.৩৯ লক্ষ টাকা নিয়েছে। এক্ষেত্রেও সংশ্লিষ্ট নথি দেখাতে পারেনি পুরসভা। বর্ধমান পুরসভার উপপ্রশাসক আইনুল হক বলেন, ‘অডিট রিপোর্ট আমরা পেয়েছি। আইনগত বিষয় খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’ বিজেপি নেতা মৃত্যুঞ্জয় চন্দ্র বলেন, পুর নির্বাচনে এটাই হবে আমাদের হাতিয়ার।