Saturday, July 5, 2025
Homeফিচারসিঙ্গুর থেকে সিংঘু, ঐতিহাসিক অগ্নিপথ

সিঙ্গুর থেকে সিংঘু, ঐতিহাসিক অগ্নিপথ

Follow Us :

অহংকার, ঔদ্ধত্যের নকাব খসে পড়ল। ধসে পড়ল অমানবিক নির্যাতন, প্রতিহিংসার প্রাচীর। জিত এল কৃষকের গোলায়। ‘কালা কানুন’ হিসেবে চিহ্নিত ৩ কৃষি আইন অবশেষে প্রত্যাহার করতে বাধ্য হলেন প্রধানমন্ত্রী। এক বছর ধরে চলা মাঠ থেকে রাজপথে লড়াইয়ের ফসল তুললেন দেশের কৃষকরা। রাজা ডুবলেন, কিন্তু রাজনীতির মাস্তুলটা ভাসিয়ে রাখলেন।

সেটা কী? সেটা হল, প্রধানমন্ত্রীর জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেওয়ার জন্য দিন বাছাই। এমন তো নয়, এই সিদ্ধান্তটি শুক্রবার সকালে ঠিক হয়েছে। কিংবা বৃহস্পতিবার গভীর রাতের সিদ্ধান্ত। সম্পূর্ণ পূর্বপরিকল্পিতভাবেই গুরু নানকের জন্মদিনকে বেছে নেওয়া হয়েছে। যেহেতু কৃষি আইন সরাসরি পাঞ্জাব-হরিয়ানার চাষিদের পায়ে কোদাল চালিয়েছিল, তাই এই দিনটি বাছা হয়েছে তাঁদের কাছে দেবতার বরের মতো প্রাপ্তিযোগের ‘ভিক্ষা’ হিসেবে। নানকের জন্মদিনকে রাজনীতির কাজেও সূক্ষ্মভাবে ব্যবহার করলেন প্রধানমন্ত্রী।

ভাষণে মোদি আবেগঘন ভাষায় ক্ষমা চেয়ে কংগ্রেসকে অন্তত দশ গোল দিয়েছেন। আপাতদৃষ্টিতে কংগ্রেস এটাকে কৃষকদের জয় বলে মনে করলেও পঞ্জাবের বিধানসভা ভোটের আগে মোক্ষম চাল দিলেন মোদি। নানকের জন্মদিনে আইন বাতিলের মতো কৃষকদরদী ঘোষণায় তেরঙা পার্টির বাড়া ভাতে ছাই ফেলে দিয়েছেন তিনি। আসন্ন সংসদ অধিবেশনে কংগ্রেসের হাতে তেমন কোনও অস্ত্র রইল না। পঞ্জাবে এমনিতেই কংগ্রেসের কাদা কচলাকচলি এখনও থিতু হয়নি। ক্যাপ্টেনের নৌকা বদলের পর পাঞ্জাবে নিঃসম্বল বিজেপি নতুন করে নৌকা ভাসানোর চেষ্টা করবে। আসলে বিজেপির পাখির চোখ কংগ্রেসকে বধ করা। শুধু পাঞ্জাব নয়, উত্তরপ্রদেশ, গোয়া থেকেও। যে কারণে তারা ইচ্ছাকৃতভাবেই ত্রিপুরা, গোয়ায় তৃণমূলকে মারধর, পতাকা, ফেস্টুন ছিঁড়ে প্রচারের শিরোনামে আনছে।

আরও পড়ুন: উত্তরপ্রদেশে ভোট পেতেই আইন প্রত্যাহার, কটাক্ষ অখিলেশের

যাতে সাধারণ মানুষের মনে হয়, কংগ্রেস দম হারানো পুতুল হয়ে আছে রাজনীতিতে। বাকি বিচ্ছিন্ন হয়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা আঞ্চলিক দলগুলিকে রাষ্ট্রশাসনের যন্ত্র দিয়ে সম্মোহিত করে রাখা যাবে। সর্বভারতীয় রাজনীতিতে কমিউনিস্টরা বিলুপ্তপ্রায় হয়ে এসেছে। ময়দানে রয়েছে শুধু কংগ্রেস। আইন বাতিল করে সেই কংগ্রেসকেই কোতল করার অস্ত্রে শান দিলেন মোদি। একেবার জড়ানো কণ্ঠে ক্ষমা চেয়ে জনমনের সহানুভূতি আদায়ের কায়দাও আলোকায়িত স্বৈরতন্ত্রের মতোই কাঠালের আমসত্ত্ব। যা চাটিয়া, চুষিয়া আমরা পরম আহ্লাদিত হলাম। পেট্রপণ্যের দামে সেঞ্চুরি ঘটিয়ে, ফের কমিয়ে গরিবের মসিহা সাজার চেষ্টা। আমরা কেউ লক্ষ্য করলাম না যে, একইভাবে ভোজ্য তেল ও ডালের দাম লিফ্টের বেগে চড়িয়ে আবার কমানোর তাবিজ বেঁধে দেওয়া হল জনগণের বকলসে।

নন্দীগ্রামেও ভুল হয়েছিল। চির ঔদ্ধত্যের প্রতীক বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যও মাথা পেতে নিয়েছিলেন দায়। ইতিহাস জানে তার মধ্যে অহীন্দ্র চৌধুরীর ভেসে ওঠেননি। কিন্তু আজ যাঁকে আমরা দেখলাম, তিনি একাধারে নাট্যকার, পরিচালক ও অভিনেতাও। কৃষি ব্যবস্থাকে কতিপয় শিল্পপতির হাতে তুলে দেওয়া, গোটা দেশ জুড়ে আগুন জ্বলে ওঠা ও সব শেষে ট্র্যাজেডির নায়কের মতো অবতীর্ণ হওয়ার সবটাই তাঁর কেরামতির ফসল।

এমনিতেই এবার ফসলের দাম চড়া। কিন্তু তার সুফল চাষিরা পাননি। কারণ, সহায়ক মূল্য। চাষিদের মূল দাবি, ফসলের সহায়ক মূল্য ঘোষণা। তা না হওয়ায় ফড়ে রাজত্বে পুজোর আগে থেকেই চড়চড়িয়ে দাম বেড়েছে কাঁচা আনাজসহ মাছ-মাংসেরও। অর্থাৎ লাভের গুড় সেই পিঁপড়েতেই খেয়ে গেল। এখন ছেলে ভোলানোর ঘুমপাড়ানি গান গাইলেন প্রধানমন্ত্রী।
আসলে আইন প্রত্যাহার করে নিলাম, বললেই তা ছেলের হাতের মোওয়া নয়। এই নিদারুণ সত্যটি অনুধাবন করেছেন আন্দোলনের নেতারা। সে কারণে তাঁদের মতামত একটু অন্যরকম। তাঁরা এখনই উচ্ছ্বাসে ভেসে যেতে রাজি নন। আইনসভার জট খুলে কতদিনে তা রাষ্ট্রপতির অনুমোদন পাবে, সেটাই এখন দেখার। কারণ, বাংলায় একটা প্রবাদ আছে— জোচ্চোরের বাড়ির ফলার, না আঁচালে বিশ্বাস নেই। যদিও কৃষক আন্দোলনের যে পথ চলা মমতার হাত ধরে সিঙ্গুর থেকে শুরু হয়েছিল তারই ছায়া আমরা দেখলাম সিংঘুতে। চীনের কৃষক বিপ্লবে সরকার বদল হয়েছিল। সিঙ্গুরের আন্দোলন থেকেও বাংলায় পরিবর্তনের সূচনা। এবার সিংঘু, অতঃকিম…..!

আরও পড়ুন: কৃষকদের চাপের কাছে নতি স্বীকার কেন্দ্রের, অবশেষে ৩ কৃষি আইন প্রত্যাহার করলেন মোদি

RELATED ARTICLES

Most Popular


Deprecated: Automatic conversion of false to array is deprecated in /var/www/ktv/wp-content/themes/techinfer-child/functions.php on line 39