চিকিৎসা বিজ্ঞানে এই প্রথম, মানব দেহে শুকরের হৃদপিণ্ড প্রতিস্থাপন করলেন আমেরিকার মেরিল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসকরা। এই মেডিক্যাল সেন্টারে ৫৭ বছরের ডেভিড বেনেটের দেহে শুকরের হৃদপিণ্ড প্রতিস্থাপন করা হয়। এর পর সোমবার হাসপাতালের তরফে জানানো হয়, অস্ত্রোপচারের তিন দিন পরে ভাল আছেন ডেভিড।
এই অস্ত্রোপচার আদৌ কাজ করবে কি না, তা নিয়ে চিন্তায় ছিলেন চিকিৎসকরা। মানবদেহে প্রাণী অঙ্গ প্রতিস্থাপনের ক্ষেত্রে বহু বছর ধরেই গবেষণা চালিয়েছেন বিজ্ঞানীরা। মেরিল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে চিকিৎসকদের মতে, জেনেটিক্যালি মডিফাইড প্রাণীর দেহের অঙ্গ মানব দেহে কাজ করতে সক্ষম। এই পদ্ধতিতে ডেভিডের শরীরে শুকরের হৃদপিণ্ড প্রতিস্থাপন করা হয়।
শুধু চিকিৎসকরাই নন, অস্ত্রোপচার নিয়ে যথেষ্ট চিন্তায় ছিলেন ডেভিড বেনেট ও তাঁর পরিবার। বাবার হৃদরোগের সমস্যা রয়েছে। আর কোনও বিকল্প রাস্তা না পেয়ে এই পরীক্ষামূলক অস্ত্রোপচারে রাজি হন ডেভিডের ছেলে। এর ফলে তাঁর প্রাণ সংশয়ের আশঙ্কা ছিল। কিন্তু শীঘ্রই হৃদপিণ্ড প্রতিস্থাপন না হলে তাঁর বাঁচার সম্ভাবনাও ক্ষীণ। তাই এই ঝুঁকি নিয়ে নেন ডেভিড। তাঁর সম্মতি পেয়ে চিকিৎসকরা অস্ত্রোপচার করেন। প্রায় সাত ঘণ্টা ধরে হয় অস্ত্রোপচার। দেহে শুকরের হৃদপিণ্ড প্রতিষ্ঠানের পর এখন সুস্থ আছেন ডেভিড। কথাও বলেছেন।
আরও পড়ুন : মানব দেহে শুকরের কিডনি প্রতিস্থাপন, অসম্ভবকে সম্ভব করল নিউ ইয়র্ক
পরবর্তী কয়েক সপ্তাহ ডেভিডকে পর্যবেক্ষণের মধ্যে রাখবেন চিকিৎসকরা। তাঁর হৃদপিণ্ডের কার্যকলাপ নিয়ে সতর্ক রয়েছেন তাঁরা। তিনি ঠিক করে শ্বাস নিতে পারছেন কি না, তাও মেশিনের মাধ্যমে পরীক্ষা করা হচ্ছে।
গত বছর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ৩,৮০০ বেশি হৃদপিণ্ড প্রতিস্থাপন করা হয়। মেরিল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণার সঙ্গে যুক্ত এক চিকিৎসক ডা. মহম্মদ মহিউদ্দিন জানান, এই পরীক্ষা যদি কাজ দেয়, তাহলে মানব শরীরে অঙ্গ প্রতিস্থাপনের ক্ষেত্রে অঙ্গের কোনও অভাব ঘটবে না। এর ফলে অনেক মানুষ প্রাণে বাঁচবে।
২০২১ সালে নিউ ইয়র্কের এনওয়াইইউ ল্যাঙ্গোন স্বাস্থ্য কেন্দ্রের চিকিৎসকরা একটি শুকরের কিডনি মানুষের দেহে প্রতিস্থাপন করে চিকিৎসা বিজ্ঞানে নয়া নজির গড়েছিলেন। যদিও প্রথম চেষ্টাতেই সফল হননি তাঁরা। শুকরের কোষে একটি শর্করা জাতীয় পদার্থ থাকার কারণে সমস্যা দেখা দেয়। বিজ্ঞানীরা তখন জেনেটিক্যালি মডিফাইড শুকরের কিডনি মানব দেহে প্রতিস্থাপন করেন। কিন্তু মানব দেহে এর পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। মানুষের ইমিনিউটি সিস্টেমে সমস্যা দেখা দেয়। প্রথম চেষ্টায় ফল না মিললেও কয়েকবার পরীক্ষার পর মানব দেহে শুকরের কিডনি প্রতিস্থাপন করা সম্ভব হয়।