কলকাতা: দীর্ঘ ৩৭ ঘন্টা ম্যারাথন জেরার পর গ্রেফতার পর শান্তনু বন্দ্যোপাধ্যায় (Shantanu Banerjee) ঘনিষ্ঠ ব্যবসায়ী অয়ন শীল (Ayan Sil)। সোমবার ভোর রাতে অয়নকে গ্রেফতার (Arrest) করে ইডি (ED)। গ্রেফতার করে তাঁকে সল্টলেকের সিজিও কমপ্লেক্সে ইডি-র অফিসে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। সল্টলেকের এফডি ব্লকের ৩৮৮ নম্বর বাড়িতে শনিবার তল্লাশি অভিযানে যায় ইডি আধিকারিকরা। এর পর দীর্ঘ ৩৭ ঘণ্টা এফডি ব্লকে অয়নের অফিসে চলে তল্লাশি এবং সেই সঙ্গে অয়নকে জিজ্ঞাসাবাদ। জানা যাচ্ছে, আজ বেলা বারোটার পর বিধাননগর মহকুমা হাসপাতালে তাঁকে রুটিন মেডিক্যাল চেক আপের পর আদালতে পেশ করা হবে।
সল্টলেক এফডি ব্লকের ৩৮৮ নম্বর বাড়িতে অয়নের যে অফিস ছিল, সেখানে প্রায় ৩৭ ঘণ্টা তল্লাশি চালান ইডির গোয়েন্দারা। একই সঙ্গে চলে অয়নকে জিজ্ঞাসাবাদ। তল্লাশি চালানো হয় অয়নের দুটি বিলাসবহুল গাড়িতেও, যে গাড়ি দুটি অয়নের কোম্পানির নামে রেজিষ্ট্রেশন বলে জানা যাচ্ছে। দীর্ঘ ম্যারাথন তল্লাশির পর আরও চাঞ্চল্যকর তথ্য পেল ইডি কর্তারা। ইডি আধিকারিকদের দাবি, প্রোমোটিং ব্যবসার আড়ালে সল্টলেকের অফিসে বসে অয়ন চালাতেন নিয়োগ দুর্নীতির কারবারও। অয়নের অফিস থেকে উদ্ধার হয়েছে প্রায় চারশো ওএমআর শিট। মিলেছে প্রচুর অ্যাডমিট কার্ডের কপি। সাতটি কম্পিউটার থেকে পাওয়া গিয়েছে বিপুল পরিমাণ টাকার লেনদেনের হিসাব। সন্ধান মিলেছে প্রায় দশটি বিভিন্ন ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের। শিক্ষক ও অশিক্ষক কর্মচারীদের দুর্নীতি ছাড়াও রাজ্যের প্রায় ৬০ থেকে ৭০ টি পুরসভায় নিয়োগ দুর্নীতিতে যে অয়ন সরাসরি যুক্ত ছিলেন, সেই ব্যাপারেও বেশ কিছু প্রমাণ পাওয়া গিয়েছে। এছাড়াও বেশ কয়েকটি কম্পিউটারের হার্ড ডিস্ক এবং মোবাইল থেকেও প্রচুর তথ্য পেয়েছেন ইডি কর্তারা।
এতগুলি পুরসভার নিয়োগ সংক্রান্ত নথি পেশায় একজন প্রোমোটার অয়নের বাড়িতে এলো কীভাবে তা খতিয়ে দেখবেন ইডি (ED) আধিকারিকরা। পাশাপশি ৩৭ ঘণ্টার তল্লাশি অভিযানে ইডির নজর ছিল অয়ন শীলের (Ayan Sil) ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট এবং আর্থিক লেনদেন সংক্রান্ত হিসেবের দিকেও। অয়ন শীলের কম্পিউটার এবং মোবাইল থেকে অনেক আর্থিক লেনদেনের তথ্য পাওয়া গিয়েছে। ইডির মতে, এই লেনদেনের পরিমাণ ৬০ কোটি টাকা ছাড়াতে পারে। ওই লেনদেনের মধ্যে কত টাকা নিয়োগ দুর্নীতির, সেই ব্যাপারে জানতেই অয়নকে টানা জেরা করা হয়। এই দুর্নীতির ব্যাপারে অয়ন শীলের সঙ্গে কুন্তল ঘোষ (Kuntal Ghosh) ও শান্তনু বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Shantanu Banerjee) যোগাযোগ ঘিরেও চলছে তদন্ত।
নিয়োগ দুর্নীতি (Recruitment Scam) মামলায় শনিবার চুঁচুড়া থেকে আটক করা হয় অয়ন শীলকে। এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটের হাতে গ্রেফতার হওয়া শান্তনু বন্দ্যোপাধ্যায়কে জিজ্ঞাসাবাদ করে এই অয়ন শীলের হদিশ মেলে। প্রোমোটার থেকে প্রোডাকশন হাউস এবং পেট্রোল পাম্পের মালিক অয়ন। চুঁচুড়ার জগুদাস পাড়ায় শান্তনুর ফ্ল্যাটের প্রোমোটিং করেন তিনি। সল্টলেকের যে বাড়িতে হানা দিয়েছে ইডি সেখানেই রয়েছে তাঁর ছোটখাটো অফিস। সেখান থেকেই প্রোমোটিংয়ের কাজ-কারবার চালাতেন অয়ন । একইসঙ্গে তাঁর ফিল্ম প্রোডাকশন হাউস রয়েছে বলেও জানা গিয়েছে। সেটিও পরিচালনা করতেন এই অফিস থেকেই। এক বিখ্যাত পরিচালকের সঙ্গেও একটি সিনেমা করেন অয়ন শীল। টলিউডের একাধিক সিনেমায় প্রযোজনা করে কালো টাকা সাদা করেছেন। সেই সূত্র ধরে কুন্তল ঘোষের মতো অয়ন শীলেরও টলিউডের তারকাদের সঙ্গে পরিচিতি ছিল বলেই ধারণা ইডি’র। কুন্তলের মতো তিনি কোনও তারকাকে টাকা দিয়েছিলেন কি না, সেই ব্যাপারেও তাঁকে জেরা করা হয়।