কলকাতা টিভি ওয়েব ডেস্ক: মায়ের ওপরে অত্যাচার সহ্য করবে না হাইকোর্ট(Calcutta High court)। অত্যাচারী সন্তান ও তার স্ত্রীকে বহন করতে হবে পুলিসি খরচ। নির্দেশ কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি রাজশেখর মান্থার। ছোট ছেলে ও বউ ফের মানসিক অত্যাচার করলে বাড়িতে পোস্টিং থাকা মহিলা কনেস্টবল উপযুক্ত ব্যবস্থা নেবে। নির্দেশ হাইকোর্টের।
বাঁকুড়ার বাসিন্দা শেফালী দত্ত। তার ৩ মেয়ে ও ২ ছেলে। ছোট মেয়ে জয়ন্তী দত্তর মৃত্যুর পরেই শুরু হয় অশান্তি। স্বামীর মৃত্যুর পর থেকেই শেফালী দেবীর দেখাশোনা করেন তার বড় ছেলে।
২০১৭ সালের ৭ জুন, প্রথমে শেফালী দেবী বাঁকুড়া থানায় ছোট ছেলে, প্রণব দত্তের ও তাঁর স্ত্রী শম্পা দত্তের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেন। সেই অভিযোগে ছোট মেয়ের মৃত্যুর জন্য ছোট ছেলের বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলেন শেফালী দেবী। এরপর থেকেই ছোট ছেলে ও বউ তার ওপর অত্যাচার শুরু করেন বলে অভিযোগ। এমনকী তাঁকে মারধর করা হয় বলেও অভিযোগ। বাধ্য হয়ে ১৯ জুন আসানসোলে মেয়ের বাড়িতে আশ্রয় নেন শেফালী দত্ত।এরপর চলতি বছরের ৬ জুন ও ১ জুলাই বাঁকুড়া থানায় আরও ২টি অভিযোগ দায়ের করেন শেফালী দেবী। কোনও কাজ না হওয়ায় হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন তিনি।
আরও পড়ুন Narendra Modi: কংগ্রেসের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগে বিদ্ধ মোদি নিজেই
চলতি বছরের ২৪ ডিসেম্বর বিচারপতি রাজশেখর মান্থা পুলিসকে নির্দেশ দেন, শেফালী দেবীকে বাড়িতে পৌঁছে দিতে হবে। ৩ দিন বাড়ির সামনে পুলিসি প্রহরা থাকবে।আদালতের নির্দেশে পুলিসও সেই মতো তাঁকে বাড়িতে পৌঁছে দেয়।
এরপর ফের ১০ জানুয়ারি ফের বাঁকুড়া থানায় অভিযোগ দায়ের করেন শেফালী দেবী।৩ দিন পর পুলিশি প্রহরা উঠে গেলে ফের ছোট ছেলে ও বউ শেফালী দেবীর ওপর অত্যাচার শুরু করেন বলে অভিযোগ।তাই পুনরায় হাইকোর্টের দ্বারস্থ হতে হয় শেফালী দেবীকে।
সরকারি আইনজীবী অমৃতেশ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, পুলিস অভিযোগ পাওয়া মাত্রই শেফালী দেবীর বাড়িতে যায় কিন্তু তাকে ওই বাড়িতে পাওয়া যায়নি।
শেফালী দেবীর আইনজীবী সৌগত মিত্র বলেন, হাইকোর্টের নির্দেশ সত্ত্বেও ছোট ছেলে ও ছেলের বউ ক্রমশ তার ওপরে অত্যাচার করছে। পুলিস যে সময় ছিলেন সেই সময় তিনি একটি পারিবারিক বিবাহ অনুষ্ঠানে যোগ দিতে গিয়েছিলেন।
এর পরেই বিচারপতি মান্থা নির্দেশ দেন,
- বাঁকুড়া থানা পুলিসকে এক মাসের জন্য শেফালী দেবীর বাড়ির বাইরে একজন মহিলা কনস্টেবল নিয়োগ করতে হবে।
- যদি ছোট পুত্র ও তার বউ ফের শেফালী দেবীর অপর কোনও ভাবে অত্যাচার করে তৎক্ষণাৎ শেফালী দেবী ওই মহিলা কনস্টেবলের সাহায্য নেবেন।
- এই ধরনের পরিস্থিতি সৃষ্টি হলে মহিলা কনস্টেবল বাড়ির ভেতরে ঢুকে যাতে শেফালী দেবী শান্তিপূর্ণ ভাবে বসবাস করতে পারেন তার জন্য উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।
- পুলিসি খরচ সম্পূর্ণভাবে বহন করবে ছোট ছেলে ও তার বউ।
- বাঁকুড়া থানার পুলিসকে নির্দেশ তার কাছ থেকেই পুলিসি খরচ গ্রহণ করবে তারা।
- যদি ছোট ছেলে ও বউ সেই পুলিসি খরচ না দেয় তাহলে রাজ্য সরকার পুনরায় কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হবে।
- আদালত তখন উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
আরও পড়ুনKMC Election 2021: নির্বাচন কমিশনে দফায় দফায় বিক্ষোভ বাম, কংগ্রেসের
আইনজীবী মহলের মতে, আদালতের এই নির্দেশের ফলে বাবা মায়ের ওপর অত্যাচারের যে ধারাবাহিকতা দেখা যাচ্ছে সমাজের বুকে তা অনেকটাই কমবে।