skip to content
Saturday, December 7, 2024
Homeচতুর্থ স্তম্ভFourth Pillar: এক যাত্রায় পৃথক ফল কেন? 

Fourth Pillar: এক যাত্রায় পৃথক ফল কেন? 

Follow Us :

দেশ স্বাধীন হয়েছে ১৯৪৭-এ, ১৯৫০ থেকে আমাদের নিজেদের সংবিধান তৈরি হয়েছে। ধর্ম, বর্ণ, ভাষা, বাসস্থান বা তাদের আর্থিক অবস্থাকে তোয়াক্কা না করে দেশের প্রত্যেক মানুষের সমান অধিকার দেওয়া হয়েছে। দেওয়া হয়েছে ফ্রিডম অফ স্পিচ, মতামত ব্যক্ত করার অধিকার, ঘোরাফেরা করার অধিকার, বসবাস করার অধিকার, বিচার পাওয়ার অধিকার। এসব কিছু আমাদের সংবিধান আমাকে, আপনাকে, হরিপদ জানা, সুলেমান শেখ, নীরজ বাটলিওয়ালা বা বিনয় গঞ্জালেসকে দিয়েছে। কিন্তু বাস্তব ছবিটা কেমন? এক্কেবারে উলটো। এক যাত্রায় কেবল পৃথক ফল নয়, উলটো ফলও হতে পারে। হয়েই চলেছে। এমন নয় যে এই এক যাত্রায় পৃথক ফলের শুরুয়াত মোদি জমানা থেকে, না তাও নয়। সুদীর্ঘ কংগ্রেসি শাসনকালে এই বেনিয়ম আমরা দেখেছি। ৪৭ সাল থেকেই এই গরমিলের সাক্ষী আমরা। আদিবাসীরা জ্বালানির জন্য কাঠকুটোর বোঝা সমেত গ্রেপ্তার হয়ে জেলে পচেছে মাসের পর মাস, বছরের পর বছর। অন্যদিকে বনের পর বন, জঙ্গলের কাঠ উজাড় হয়ে গেছে, যা ছিল আদিবাসী কোল ভিল মুন্ডা ওঁরাওদের জমিন, জঙ্গল তা উবে গেছে, কারখানা তৈরি হয়েছে, সেই কারখানার তৈরি ইস্পাত দিয়ে ব্রিজ হয়েছে, ফ্লাইওভার তৈরি হয়েছে, ইমারত হয়েছে ৩০ তলা, ৪২ তলা। নিজভূমে পরবাসী ওই মানুষেরা স্রেফ কাঠকুটোও তুলে নিয়ে যেতে পারে না, ফরেস্ট অ্যাক্ট নাকি তাই বলছে। অধিগ্রহণ হবে সব কিছু, নদীর বাঁক থেকে চার ফসলা জমি থেকে জঙ্গল, টিলা, পাহাড় থেকে সমুদ্রতট। সে সব হবে উন্নয়নের নামে, সে উন্নয়ন কাদের? দেশের অধিগৃহীত জমির ৭৩ শতাংশ ছিল আদিবাসীদের হাতে, হ্যাঁ ৭৩ শতাংশ। তাদের জমি, জঙ্গল, পাহাড় কেড়ে নিয়ে উন্নয়ন হয়েছে। বেশ, তাহলে সেই আদিবাসীদের উন্নয়ন কেন হয়নি? কেন তাদের চাল ফুটো হয়ে জল পড়ে? কেন তাদের বাচ্চাদের স্বাস্থ্য এত খারাপ? তাদের শিক্ষা, স্বাস্থ্য ব্যবস্থা এমন জঘন্য কেন? তাদের আর্থিক অবস্থা এত খারাপ কেন? ৭৩ শতাংশ সম্পদ যাদের উৎখাত করে এল, কোন আইনে তারাই আজ সব থেকে পিছিয়ে? এক সঙ্গে যাত্রা করেছিল তারাও, এই স্বাধীন দেশের জন্য লড়ার ইতিহাস তাদের আছে, বিরসা মুন্ডার ইতিহাস আছে, সিধো কানুর ইতিহাস আছে, উলুগুলানের ইতিহাস আছে, অনেকের চেয়ে বেশি আছে। দিল্লির সিরি ফোর্ট অডিটোরিয়াম থেকে রাজপথ আর লুটিয়েন বাংলোর ভিড়ে একজন আদিবাসীকে ঠাঁই দিলেই দায় শেষ? ৬৫০ টাকা দামের সিনেমার টিকিট কেটে ‘কান্তারা’ সিনেমা দেখছেন আপনি? সেই আদিবাসী শোষণের ছবি দেখেন কজন আদিবাসী? সেই দেখার সাধ্য কতজনের আছে? এক যাত্রায় এমন পৃথক ফল কেন? এবং এই পৃথক ফল নিয়ে প্রত্যেক রাজনৈতিক দল, হ্যাঁ প্রত্যেক রাজনৈতিক দল হয় চুপ না হলে যযেততে, যখন যেমন তখন তেমন। মনে আছে সিঙ্গুর, নন্দীগ্রাম এপিসোড, সে এক উন্নয়নের সুনামির কথা বলছিল বাম সরকার, মাছ কাটলে মুড়ো দেব, গাই দুয়োলে দুধ দেব, চাকরি তো এসেই গিয়েছে, মাইনে পেলে প্রথমে কী কিনবি তাই ঠিক করে ফেল। এমন এক ভঙ্গিমা। চার ফসলা জমিতে মোটর কারখানা হবে, সেখান থেকে ৩০ কিলোমিটারের মধ্যে উত্তরপাড়া হিন্দ মোটরস-এ তালা ঝোলানো হচ্ছে, সিঙ্গুরে গাড়ির কারখানা হবে। বিরোধিতায় কারা? তৃণমূল দল, বিজেপি, কংগ্রেস। ঠিক সেই সময়েই কেন্দ্রে কংগ্রেস সরকার, ওড়িশায় নিয়মগিরি পাহাড় বেচে দেওয়া হচ্ছে, বিরোধিতা করলে মাওবাদী বলে জেলে পাঠানো হচ্ছে, বাম দলগুলো তার বিরোধিতা করছে। কংগ্রেস এবং বামেদের বিরোধিতা জারি ছত্তিশগড়ে তখন, যখন বিজেপি মুখ্যমন্ত্রী একের পর এক আদিবাসী জঙ্গল, পাহাড় বেচে দিচ্ছেন। গুজরাতে সর্দার সরোবর ড্যাম প্রকল্পে জল বাড়ানো হবে, ডুবে যাবে ১৭ হাজারের বেশি পরিবার, রাজ্যে বিজেপি, কেন্দ্রে বিজেপি। আন্দোলন হচ্ছে, সামনে মেধা পাটেকর, কিন্তু বামেরাও সেই আন্দোলনে রয়েছেন, কংগ্রেসও বলছে এই সিদ্ধান্তের পুনর্বিবেচনা করা হোক। এ রাজ্যে এখন তৃণমূল দলের সরকার, দেউচা পাচামিতে কয়লা তোলা হবে তাই অধিগ্রহণ হবে, তাজপুরে বন্দর করবে গৌতম আদানি। না এখনও সরকার গুলিগোলা চালায়নি, কিন্তু কথা বলছেন উন্নয়ন নিয়ে এবং অধিগ্রহণও চলছে। বিরোধিতায় কারা? বিজেপি, কংগ্রেস এবং অবশ্যই বাম। কেরলে তো খেলা জমে ক্ষীর, ভিজিঞ্জম সমুদ্র বন্দর তুলে দেওয়া হয়েছে আদানিদের হাতে, বাম সরকার স্থানীয় জেলে সম্প্রদায়ের বিরোধিতা সামলাতে পুলিশ পাঠাচ্ছে, জেলে পুরছে পরিবেশ কর্মী সংগঠনের নেতা কর্মীদের, মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়ন বলছেন পেছনে আছে মাওবাদীরা। এবং সবচেয়ে মজার ব্যাপার হল সেখানে এই বিরোধিতা রুখতে হাতে হাত মিলিয়েছে বিজেপি, সিপিএম এবং কংগ্রেস, তাদের তৈরি যৌথ মঞ্চ এখন ঠ্যাঙাড়ে বাহিনীর কাজ করছে। সদ্য সদ্য আদানি কিনেছেন এনডিটিভি, তার অনুষ্ঠানে সিপিএম পলিট ব্যুরো নেতা জানিয়েছেন যে কোনও মূল্যে এই বন্দর হবে। যাদেরকে ক্রোনি ক্যাপিটালিস্ট বলেছেন রাহুল গান্ধী থেকে প্রকাশ কারাত, সেই আদানি, আম্বানি হাসছেন। মনে পড়ে যাচ্ছে, ব্রিগেডের জনসভায় মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের কথা, ওখানে কারখানা হবে, হবেই, কেউ আটকালে মাথা ভেঙে দেব। এসব দেখলে সুকুমার রায়ের কথাই কেবল মনে পড়ে, এক হ য ব র ল চলছে সারা দেশে, সারা দেশ জুড়ে একুশে আইন। কার ওপরে ভরসা করবে মানুষ? কার কথায় বিশ্বাস করবে মানুষ? প্রশাসনের মাথায় রাজনৈতিক দল, তাদের প্রত্যেক কথা, প্রত্যেক কাজ তাদের দলের রাজনৈতিক ফায়দাকে মাথায় রেখেই হচ্ছে। সেই রাজনৈতিক দলই চালাচ্ছে পুলিশ প্রশাসন। অন্যদিকে বিচার ব্যবস্থা, জঘন্যতম গণধর্ষণে অভিযুক্তরা ছাড়া পাচ্ছে জেল থেকে, সমাজকর্মী, কবি, সাংবাদিক, অধ্যাপক জেলে পচে মরছেন। প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে টুইট? মামলা এবং জেল অনিবার্য, মুখ্যমন্ত্রীরাও কম যান না। গোলি মারো শালো কো বলে ক্যাবিনেট মিনিস্টার লালবাতি লাগানো গাড়িতে ঘুরছে, আমার জমি দেব না তোমার উন্নয়ন যজ্ঞে, বলার পরেই তাকে জেলে পোরা হচ্ছে। জাজ নয় তো যেন গুরু ঠাকুর, চেয়ারে বসে সরকার চালানোর দায়িত্বে থাকা নির্বাচিত দলের স্বীকৃতি বাতিল করার কথা বলে দিচ্ছেন, কোন আইন, কোন ধারা তাঁকে এসব বলার অধিকার দিয়েছে, তা কেউ জানে না। ফিল্ম স্ক্রিপ্ট রাইটারদের মাঝে মধ্যে বলা হয়, ভাল ভাল, জনপ্রিয় হতে পারে এমন ডায়ালগ লিখুন, সিনেমা শেষ হলেও মনে থাকবে মানুষের, অবরে সবরে বলবে, কিতনে আদমি থে? দো সর্দার ইত্যাদি। তো এখন সেই দায়িত্ব কি জজ সাহেবের? মারব এখানে লাশ পড়বে শ্মশানে বলাটাই যা বাকি। তাহলে লোকসভা, বিধানসভা, প্রশাসন আর বিচারব্যবস্থা গেল, বাকি রইল চতুর্থ স্তম্ভ। দেশের মোটামুটি সমস্ত জাতীয় ইংরিজি বা হিন্দি চ্যানেল, আঞ্চলিক প্রায় সমস্ত চ্যানেল চলছে মোদি-শাহের নির্দেশে। আজকের টিভি চ্যানেল খুলে দেখুন না, তারা চিৎকার করে জানাচ্ছে, প্রত্যাশা মতো আপ ১৫০-১৭০টা আসন পেল না, আসুন আলোচনা করা যাক, কেন পেল না। কী ধ্যাষ্টামো ভাবুন, বিজেপি ১০ বছর এমসিডির ক্ষমতায় ছিল, তারা হেরে গেল, আলোচনা হচ্ছে একজিট পোল অনুযায়ী আম আদমি পার্টির যত পাওয়ার কথা কেন তা পেল না। এবং মধ্যে মধ্যে চিল চিৎকার কংগ্রেস মুছে গেল। যাদের একজন এমএলএ-ও নেই, তারা গোটা ৯-১০টা আসন পাচ্ছে কেন? তা নিয়ে আলোচনা হচ্ছে না। এই হল মিডিয়া। একটা চ্যানেল ছিল, তো সেটাও শেঠজি কিনে নিয়েছে, রবিশ কুমারের ভাষায়, শেঠজির অনেক পয়সা আছে। এনডিটিভি চলে গেছে আদানির হাতে। এক গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা চারটে স্তম্ভ, আইন সভা, প্রশাসন, বিচার ব্যবস্থা আর সংবাদ মাধ্যম, চারটে স্তম্ভই নড়বড় করছে, অথচ এরই ওপর দাঁড়িয়ে থাকবে আমাদের সংবিধান, আমাদের গণতান্ত্রিক কাঠামো। সে স্তম্ভের ইঁট খসে পড়ছে, সে স্তম্ভের ভিতে শাবল পড়ছে। 
দুলিতেছে তরী, ফুলিতেছে জল, ভুলিতেছে মাঝি পথ,
ছিঁড়িয়াছে পাল, কে ধরিবে হাল, আছে কার হিম্মত?
কে আছ জোয়ান, হও আগুয়ান, হাঁকিছে ভবিষ্যত।
এ তুফান ভারী, দিতে হবে পাড়ি, নিতে হবে তরী পার!!
এক ভাঙনের মুখে দাঁড়িয়ে আমরা, সর্বগ্রাসী ভাঙন। ভরসা একটাই, ধ্বংসের পরে নতুন পলিমাটি এসে হাজির হয়, সেই মাটিতেই আবার সোনার ফসল ধরে, ধ্বংসের হাত ধরেই আসে নির্মাণ। 

 

RELATED ARTICLES

Most Popular

Video thumbnail
Upper Primary | আপার প্রাইমারিতে চাকরি দেওয়ার নামে প্রতারণা , তারপর কী হল? দেখুন
00:00
Video thumbnail
Weather Update | প্রবল বৃষ্টির সম্ভাবনা! তার পরেই জাঁকিয়ে শীত? দেখুন ওয়েদারের বড় আপডেট
00:00
Video thumbnail
Bangladesh | পশ্চিমবঙ্গ সীমানায় বিশেষ ড্রোন নামাল বাংলাদেশ? দেখুন এই ভিডিও
00:00
Video thumbnail
Mamata Banerjee | Narendra Modi | বাংলাদেশ ইস্যুতে মমতার ইনপুট নিলেন মোদি, দেখুন এই ভিডিও
00:00
Video thumbnail
Mamata Banerjee | Narendra Modi | বাংলাদেশ সমস‍্যাতে দিদির মুখাপেক্ষী মোদি, দেখে নিন বিশেষ প্রতিবেদন
03:22:13
Video thumbnail
Bayraktar TB2 Drone | পশ্চিমবঙ্গ সীমানায় তুরস্কে তৈরি Bayraktar TB2 ড্রোন নামাল বাংলাদেশ
02:53
Video thumbnail
Awas Yojana | TMC Leader | আবাস তালিকা থেকে নিজেই মায়ের নাম কাটালেন তৃণমূল নেতা, কারণ কী?
01:37
Video thumbnail
Awas Yojana Scheme | আবাস তালিকাভুক্তদের টাকা দিতে সুরক্ষা বলয় রাজ্যে, তৈরি নিজস্ব পোর্টাল
01:43
Video thumbnail
Budge Budge | Pump LIne | বজবজের সাতগাছিয়ার বাহির চড়ায় শুরু জলের লাইন কাটার কাজ
01:48
Video thumbnail
Mamata Banerjee | Narendra Modi | বাংলাদেশ ইস্যুতে মমতার ইনপুট নিলেন মোদি, দেখুন এই ভিডিও
11:49:10