নয়াদিল্লি: রবীন্দ্রনাথের ‘কিনু গোয়ালার গলি’র হরিপদ কেরানি সময় কাটাতে স্টেশনে যেত। কিন্তু, রেলে চাকরির প্রশিক্ষণের জন্য ৮ ঘণ্টা স্টেশনে বসে ট্রেন গোনার কাজ কিন্তু অভিনব। তামিলনাড়ুর (Tamil nadu) অন্তত ২৮ জন যুবক নয়াদিল্লি স্টেশনের (New Delhi Station) বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মে বসে প্রায় মাসখানেক ধরে ট্রেন গুনে চলেছেন। ঘূণাক্ষরেও বুঝতে পারেননি ২ থেকে ২৪ লক্ষ টাকা খরচ করে পাওয়া চাকরিটি আসলে ভুয়ো। তাঁদের প্রশিক্ষণপর্বের অঙ্গ ছিল, স্টেশনে আসা ও ছেড়ে যাওয়া ট্রেন গোনা এবং তাদের কতগুলি বগি আছে তার হিসেব রাখা।
ট্রেনের চেকার (TTE), ট্রাফিক অ্যাসিস্ট্যান্ট এবং করণিক পদে চাকরির আবেদন নেওয়া হয়েছিল তাঁদের কাছ থেকে। চাকরির জন্য কারও কাছ থেকে ২, কারও থেকে ২৪ লক্ষ টাকা পর্যন্ত নেওয়া হয়ে গিয়েছে। প্রতারিত হয়েছেন বুঝতে পেরে তাঁরা দিল্লি পুলিশের আর্থিক অপরাধ দমন শাখায় (EOW) অভিযোগ দায়ের করেন।
আরও পড়ুন: Siliguri Incident: শিলিগুড়িতে গুলিবিদ্ধ পুলিশকর্মী, অল্পের জন্য রক্ষা পেলেন আইসি
গত জুন এবং জুলাই মাস নাগাদ তাঁরা এই ভুয়ো নিয়োগের প্রশিক্ষণপর্বের ‘নির্দেশ’ পান। তখনই কাজে নেমে পড়েন তাঁরা। প্রতারকচক্রকে ততক্ষণে ২ কোটি ৬৭ লক্ষ টাকা দিয়ে দেওয়া হয়ে গিয়েছে তাঁদের। ৭৮ বছরের এম সুব্বুস্বামী এ ব্যাপারে একটি অভিযোগ দায়ের করেছেন। অবসরপ্রাপ্ত সুব্বুস্বামী ছিলেন এই ডিলের মধ্যস্থতাকারী। কিন্তু তাঁর দাবি, তিনি নিজেও ওদের ফাঁদে পা দিয়েছেন।
মাদুরাই থেকে ২৫ বছরের স্নেথিল কুমার বলেন, সুব্বুস্বামীকে তাঁদের কেউ ২ লাখ, কেউ ২৪ লাখ দিয়েছিলেন চাকরির জন্য। সুব্বু এই টাকা বিকাশ রানা নামে একজনের হাতে তুলে দেন। বিকাশ রানা নিজেকে দিল্লিস্থিত উত্তর রেলের ডেপুটি ডিরেক্টর বলে পরিচয় দিয়েছিল। জানা গিয়েছে, যাঁরা প্রতারিত হয়েছেন, তাঁদের অধিকাংশই ইঞ্জিনিয়ারিং এবং টেকনিক্যাল এডুকেশনের স্নাতক। প্রশিক্ষণপর্ব যাই চলুক না কেন, যে পদেরই কাজ হোক না কেন, তাঁদের সকলেরই কাজ ছিল ট্রেন গোনা।
তামিলনাড়ু থেকে ফোনে সুব্বুস্বামী বলেন, অবসর নেওয়ার পর আমি বেকার যুবকদের কর্মসংস্থানের সাহায্য করে দিতাম। তার জন্য আমি কারও কাছ থেকে কানাকড়িও নিইনি। এফআইআরে তিনি লিখেছেন, তাঁর সঙ্গে কোয়েম্বাটুরের বাসিন্দা শিবরামন নামে একজনের পরিচয় হয়। পরিচয়স্থলটি ছিল দিল্লিতে এক সাংসদের সরকারি বাসভবনে। শিবরামন তাঁকে বলেছিল, এমপি, মন্ত্রীদের সঙ্গে তার খুব ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক। সেই টাকার বিনিময়ে রেলে চাকরির ব্যবস্থা করে দেবে বলে জানিয়েছিল সুব্বুস্বামীকে। তাঁর অভিযোগ, প্রথমে আমি গ্রাম থেকে তিনজনকে নিয়ে এসেছিলাম। পরে এই খবর চাউর হয়ে যেতে আরও ২৫ জন আমায় চেপে ধরলে তাদেরও নিয়ে আসি।
এফআইআর অনুযায়ী, টাকা দেওয়ার পর চাকরিপ্রার্থীদের মেডিক্যাল পরীক্ষা হয় কনট প্লেসের রেলওয়ে সেন্ট্রাল হাসপাতালে। নথি পরীক্ষা পর্বের কাজ হয় উত্তর রেলওয়ের জুনিয়র ইঞ্জিনিয়ারের অফিসে। তারপরই তাদের প্রশিক্ষণের কাজের ভুয়ো নির্দেশ দেওয়া হয়। আর এই ২৮ জন যুবক চাকরি পেয়েছেন ধরে নিয়ে দিল্লি স্টেশনের বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মে বসে ট্রেন গোনার কাজ শুরু করে দেন।