বিষ্ণুপুর: প্রাচীন মল্লভূমে জড়িয়ে রয়েছে নানান ইতিহাস, রয়েছে এই ইতিহাসের সাক্ষী হিসেবে প্রাচীন নানান উৎসব। এই উৎসবের মাঝে উল্লেখযোগ্য হল রথ উৎসব (Rath Yatra 2024)। আজও সেই ইতিহাসের সাক্ষী হিসাবে সাড়ম্বরে পালিত হল মল্ল রাজাদের প্রাচীন রথ উৎসব। প্রাচীন রীতি মেনেই মল্লগড় বিষ্ণুপুরে ৩৫০ বছরের বেশি প্রাচীন রথের রশিতে টান দিলেন অগনিত ভক্ত। রথে সওয়ার হলেন ঠাকুর রাধা মদন গোপাল জিউ।
১৬৬৫ খ্রিস্টাব্দে বিষ্ণুপুর (Bishnupur) শহরের মাধবগঞ্জে মল্লরাজা বীর সিংহের স্ত্রী রানী শিরোমণি মাকড়া পাথরের মদন গোপাল মন্দির নির্মান করেন। মন্দিরের বিগ্রহ রাধা মদন গোপাল জিউ। এই মন্দিরের অনুকরনেই তৈরি করা হয় পিতলের রথ। মল্লরাজাদের সময় থেকেই এই রথ উৎসবের সূচনা হয়। যা আজ থেকে সাড়ে তিনশ বছরের বেশি প্রাচীন। রথের দিন মন্দিরের প্রধান বিগ্রহ রাধা মদন গোপালের বিগ্রহকে বাদ্যযন্ত্র ও কীর্তনের মধ্য দিয়ে নিয়ে আসা হয় রথে। রথের মধ্যে চলে পুজাপাঠ ও আরতি।
আরও পড়ুন: এই দেবীকে ভোগ নিবেদন না করলে জগন্নাথদেব ভোগের স্বাদ নেন না
এরপর শুরু হয় রথের রশিতে টান দেওয়ার পর্ব। দুরদুরান্ত থেকে বহু মানুষ এসে উপস্থিত হয় রথের দড়িতে টান দেওয়ার ও পুণ্য অর্জনের জন্য। প্রাচীন নিয়ম মেনে আজও সমান ভাবে এই রথের উৎসব পালন করে চলেছেন বর্তমান উৎসব কমিটি। এই রথের বিশেষত্ব এখানকার রথে জগন্নাথ, বলরাম, সুভদ্রা সওয়ার হন না। রথে সওয়ার হন রাধা মদন মোহন জিউ। তাঁকে ঘিরেই বিষ্ণুপুরের রথ উৎসবে উপচে পড়ে ভক্তদের ভিড়। বিষ্ণুপুরের ১১ পাড়া উৎসব কমিটি এই উৎসব পরিচালনা করেন।
রথ উৎসবকে ঘিরে শুরু হয়ে যায় প্রাচীন মলগড়ে উন্মাদনা। সোজা রথের মধ্য দিয়ে শুরু হয় উল্টো রথ যাত্রার কাউন্ট ডাউন। আজ থেকেই চলল উল্টো রথ পর্যন্ত নানান অনুষ্ঠান। মন্দির চত্বরে নানান ভক্তিমূলক অনুষ্ঠান কীর্তনের অনুষ্ঠান চলবে সাত দিন ধরে। প্রতিদিন বিশেষ দেবভোগের প্রসাদ গ্রহণের জন্য ভক্তদের ভিড় উপচে পড়ে মন্দির চত্বরে। ঠাকুর রাধা মদন গোপাল জিউ-এর রথ মানেই বিষ্ণুপুরের মানুষের কাছে একটা আলাদা আবেগ বলছেন ভক্তরা। আজ রাজা নেই কিন্তু রাজাদের অস্তিত্ব আজও টিকে রয়েছে মল্লগড়ের মাটিতে। আর সেই প্রাচীন ইতিহাস কে বাঁচিয়ে রেখে রথ উৎসবকে পালন করে চলেছেন মাধবগঞ্জের উৎসব কমিটি।
আরও খবর দেখুন