বিধানসভা ভোটে গোহারা হেরেও লজ্জা হয়নি নরেন্দ্র মোদী, অমিত শাহদের। বিজেপি যে কতটা প্রতিহিংসাপরায়ণ হতে পারে, তা আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়কে নিয়ে চরম নাটক করায় পরিষ্কার বোঝা গেল। শেষ মুহূর্তে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যে মাস্টার স্ট্রোকটা দিলেন, সেটাও দারুণ। তবে এতেও মোদী-শাহদের শিক্ষা হবে বলে মনে হয় না। তার ইঙ্গিত সোমবার দিনের শেষেই পাওয়া গিয়েছে। কেন্দ্রীয় সরকার আলাপনের বিরুদ্ধে শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগ এনে তাঁকে আরও হেনস্তা করতে পারে।
আসলে মোদী-শাহ জুটির এতটাই ঔদ্ধত্য যে সংখ্যাগরিষ্ঠতার জোরে তাঁরা যা খুশি, তাই করতে পারেন। যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোকে এই সরকার ন্যূনতম মান্যতা দিতে রাজি নয়। যেন যেন প্রকারে বিরোধী মনোভাবাপন্ন রাজ্য সরকারগুলিকে ব্যতিব্যস্ত করে যাওয়াটাই তাদের একমাত্র কাজ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এর আগেও আমরা দেখেছি, নির্বাচিত সরকারকে ভেঙে দেওয়ার ব্যাপারে এরা কেমন সিদ্ধহস্ত। মধ্যপ্রদেশ, কর্ণাটকের শাসক দলের বিধায়কদের ভাঙিয়ে নির্বাচিত সরকার ভেঙে দিয়েছে বিজেপি। মহারাষ্ট্রেও শিবসেনা, এনসিপি, কংগ্রেস জোট সরকারকে ভাঙার চেষ্টা করেছে বিজেপি। বছর দুয়েক আগে মহারাষ্ট্রে মধ্যরাতের তামাশার কথা এখনও কেউ ভোলেনি। রাতারাতি তল্পিবাহক রাজ্যপাল নতুন মুখ্যমন্ত্রীকে দিয়ে শপথবাক্য পাঠ করিয়ে নিয়েছিলেন। শেষ পর্যন্ত অবশ্য নতুন মুখ্যমন্ত্রীকে আর রাজ্যপাট চালাতে হয়নি। রণে ভঙ্গ দিয়েছিল বিজেপি। নোংরা খেলায় এঁটে উঠতে পারেনি তারা। তবে এখনও বিজেপি তলে তলে নানা মতলব আঁটছে উদ্ধব ঠাকরের সরকারকে বিপাকে ফেলার জন্য।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় খুব সঠিক ভাবেই বলেছেন, আমাকে সহ্য করতে পারে না বলে কেন্দ্রের বিজেপি সরকার যা খুশি করে যাচ্ছে। এটা তো ঠিক। একটা সরকার বিপুল মানুষের রায় পেয়ে ক্ষমতায় এসেছে। একে করোনার তাণ্ডব, তার ওপর যশ-এর হানা। এই সময় সরকারকে এই দুইয়ের মোকাবিলায় ব্যস্ত থাকতে হচ্ছে। আর ঠিক তখনই কেন্দ্রীয় সরকারের সময় হল একটা নতুন সরকারের পিছনে লাগার। আর মমতাও মোক্ষম চাল চেলে দিয়েছেন। আলাপন অবসর নেওয়ার ইচ্ছে প্রকাশ করায় তিনি তৎক্ষণাৎ সম্মতি দিয়েছেন। তার পরেই মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণা, আলাপন হবেন তাঁর প্রধান উপদেষ্টা। মঙ্গলবার থেকেই তিন বছর তিনি এই পদে থাকবেন। এরপর বিষয়টি নিয়ে আইন আদালত হতেই পারে। জল অনেক দূর গড়াতে পারে। সেটা পরের কথা। কিন্তু একটা কথা বলতেই হবে, মমতা কেন্দ্রীয় সরকারকে কড়া বার্তা দিতে পেরেছেন। আর এই ইস্যুতে তিনি পাশে পেয়ে গিয়েছেন অবিজেপি শাসিত প্রায় সব রাজ্য সরকারকে। তাবড় বিরোধী রাজনৈতিক নেতা-নেত্রীরা মমতাকে সমর্থন করেছেন এবং তাঁর পাশে থাকার কথা জানিয়েছেন। মমতাও বলেছেন, এটা শুধু এই রাজ্যের আমলাদের বিষয় নয়। সারা দেশের আমলাদের তিনি জোটবদ্ধ হতে বলেছেন। বলা যেতেই পারে, এখন থেকেই জাতীয় রাজনীতির বিরোধী নেতৃত্বের ব্যাটন মমতা নিজের হাতে তুলে নিতে চান। এমনকি এই রাজ্যের কংগ্রেস এবং সিপিএম নেতারাও মমতার পাশে দাঁড়িয়ে গিয়েছেন। সেই গত শতাব্দির আটের দশক থেকে বাম জমানায় কেন্দ্র-রাজ্য সম্পর্ক নিয়ে টানাপোড়েন শুরু হয়েছে। তখন জ্যোতি বসু, অশোক মিত্ররা কেন্দ্রের বিরুদ্ধে বঞ্চনা ও যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোর ওপর কেন্দ্রের আঘাতের বিরুদ্ধে সরব হয়েছিলেন। সেই ট্র্যাডিশন এখনও চলছে।
তৃণমূলের জাতীয় মুখপাত্র সুখেন্দুশেখর রায় বলেছেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মাস্টার স্ট্রোক দিয়েছেন।
একদম ঠিক কথা। মাস্টার স্ট্রোকই বটে। এই ধাক্কা সামলাতে মোদী-শাহ জুটিকে অনেক কাঠখড় পোড়াতে হবে। এরপর কী হতে পারে, সেদিকেই দৃষ্টি থাকবে সকলের।
আলাপনকে নিয়ে নোংরা রাজনীতি মোদী-শাহের
Follow Us :