রামপুরহাট: বগটুই (Bogtui) হত্যাকাণ্ডে একদা দোর্দণ্ডপ্রতাপ তৃণমূল কংগ্রেস নেতা আনারুল হোসেনকে (TMC leader Anarul Hossain) নির্বাচনে ভরাডুবির পরেও ব্লক সভাপতি পদে রাখার জন্য মুচলেকা দিয়েছিলেন আশিস বন্দ্যোপাধ্যায় (Asish Banerjee)৷ বৃহস্পতিবার সেই চিঠি কলকাতা টিভি ডিজিটালে ফাঁস হয়ে যায়৷ তারপরই শুরু হয় বীরভূম জেলা রাজনীতিতে ব্যাপক তোলপাড়৷ শুক্রবার ফের একটি নথিতে জানা গেল, সদ্য সমাপ্ত রামপুরহাট পুরসভা (Rampurhat Municipality) ভোটের নির্বাচনী কমিটিতে প্রথম নামটি ছিল বহিষ্কৃত তৃণমূল নেতা বর্তমানে সিবিআই হেফাজতে থাকা আনারুল হোসেন৷ উল্লেখযোগ্য বিষয় হল, এই কমিটির অনুমোদন করেছিলেন খোদ বীরভূম তৃণমূল জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল৷ দলের লেটারহেড প্যাডের নীচে তাঁরই স্বাক্ষর করা রয়েছে৷ গত ৫ ফেব্রুয়ারি এই নির্বাচনী কমিটি অনুমোদিত হয়৷
রামপুরহাটের বগটুইয়ে তৃণমূল উপপ্রধান ভাদু শেখ খুন এবং তার পরবর্তী অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় আনারুল হোসেনকে যেখান থেকে হোক গ্রেফতারের নির্দেশ দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ সেই দিনই তারাপীঠে আনারুল ‘আত্মসমর্পণ’ করেন৷ হাইকোর্টের নির্দেশে এই হত্যালীলার তদন্তভার সিবিআইয়ের হাতে যাওয়ার পর আনারুলকে হেফাজতে নেয় তারা৷ কিন্তু সেই সময় প্রশ্ন উঠেছিল, ভাদু শেখ ও আনারুলের নেপথ্যে তৃণমূলের আর কোনও বড় মাপের নেতা আছেন কি? তারপরই বৃহস্পতিবার বিস্ফোরক একটি চিঠি ফাঁস হয়৷ যেখানে দেখা যায়, রামপুরহাটের বিধায়ক আশিস বন্দ্যোপাধ্যায় একটি চিঠিতে আনারুলকে ব্লক সভাপতি পদে রাখার জন্য অনুরোধ জানিয়েছেন অনুব্রতর কাছে৷
বিধানসভা ভোটে রামপুরহাট থেকে আশিস বন্দ্যোপাধ্যায় জিতলেও তাঁর মার্জিন কমে যায়৷ এ নিয়ে দলীয় ময়নাতদন্তে আনারুল হোসেন ও ভাদু শেখকে কাঠগড়ায় তোলে জেলা নেতৃত্বের একাংশ৷ সেই মতো তাঁদের দু’জনকে সরিয়ে দেওয়ার চিন্তাভাবনা হয়৷ কারণ হিসেবে, দু’জনের সম্পর্কেই দুর্নীতি, তোলা আদায়-সহ বস্তা বস্তা অভিযোগ জমা পড়ে জেলা নেতৃত্বের কাছে৷ অনুব্রতর দাবি, সেই সময় আনারুলকে পদ থেকে সরানোর সিদ্ধান্ত হয়েছিল৷ কিন্তু জেলা কমিটির চেয়ারম্যান হিসেবে আশিস বন্দ্যোপাধ্যায়ের অনুরোধক্রমে তাঁকে রাখা হয়৷ সেই অনুরোধপত্রটি বৃহস্পতিবার প্রকাশ্যে নিয়ে আসে কলকাতা টিভি ডিজিটাল৷
আরও পড়ুন: SSC Calcutta High Court: আদালতে স্বস্তি স্কুল সার্ভিস কমিশনের উপদেষ্টা শান্তিপ্রসাদের
এরপর এদিন অনুব্রত মণ্ডলের স্বাক্ষরিত অনুমোদনপত্রটি সামনে এল৷ যেখানে দেখা যাচ্ছে, নির্বাচন কমিটির আহ্বায়ক ছিলেন আশিস বন্দ্যোপাধ্যায় এবং সদস্য হিসেবে প্রথম নামটি রয়েছে আনারুল হোসেনের৷ সে কারণে আনারুলের সঙ্গে জেলা নেতৃত্বের দহরম-মহরমের বিষয়টি ফের স্পষ্ট হয়ে উঠেছে৷ বিশেষত বিধানসভা ভোটের পরে যাঁকে পদ থেকে সরিয়ে দেওয়ার ভাবনা হয়েছিল, তিনি কিভাবে পুর নির্বাচনী কমিটির সদস্য হিসেবে প্রথম স্থানে ঠাঁই পান, তাই নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে দলের অভ্যন্তরেই৷