কলকাতা: শুক্রবার সকাল থেকেই বৃষ্টি হচ্ছে শহরে। কখনও টিপ টিপ, কখনও ঝির ঝির, কখনও মুষলধারে। ভাদ্রের বর্ষণ উপেক্ষা করেই বিবেকানন্দ যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনে হাজির হয়েছিলেন ছয়-সাত হাজার ইস্টবেঙ্গল (East Bengal) সমর্থক। বৃষ্টি মাথায় নিয়েই বাড়ি ফিরলেন তাঁরা, তবে এই বৃষ্টি গায়ে লাগবে না তাঁদের। গোকুলাম এফসি-কে (Gokulam FC) হারিয়ে ডুরান্ড কাপের (Durand Cup) সেমিফাইনালে উঠে গিয়েছে তাঁদের প্রিয় ক্লাব। সেমিফাইনালে নর্থ-ইস্ট ইউনাইটেডকে (North East United) হারাতে পারলেই ফাইনাল।
কেরলের দলকে ২-১ হারিয়েছে ইস্টবেঙ্গল। ২০১৯ সালের পর ডুরান্ডের সেমিফাইনালে উঠল তারা। এই জয় প্রত্যাশিতই ছিল। গোকুলাম আই লিগের দল। আইএসএল খেলা কলকাতার ক্লাবের থেকে ধারে ভারে অনেক পিছিয়ে। রক্ষণ থেকে আক্রমণ সর্বত্র মধ্যবিত্ত ছাপ। সেখানে লাল-হলুদ এখন উচ্চকোটির দল। বিশেষ করে এ মরশুমে ভালো দল গড়া হয়েছে। ক্লেটন সিলভা আগে থেকেই ছিলেন, সল ক্রেসপো, হ্যাভিয়ের সিভেরিয়োর মতো ভালো বিদেশি এসেছেন। সত্যি বলতে সেই অনুযায়ী দারুণ কিছু ফুটবল এদিন খেলেনি ইস্টবেঙ্গল।
আরও পড়ুন: ধোনির বিরুদ্ধে গম্ভীর গর্জন কি ঠিক?
ম্যাচ শুরুর এক মিনিটের মধ্যে গোল করে দেয় হোম টিম। ছোট কর্নার থেকে ক্রস বক্সের একেবারে গোড়ায় নাওরেম মহেশের কাছে আসে, তিনি হেড করে বক্সের মাঝে বিপজ্জনক জায়গায় পাঠিয়ে দেন। ওঁত পেতে ছিলেন লাল-হলুদ ডিফেন্ডার জর্ডান রিস এলসি। নিখুঁত হেডে বল জালে জড়িয়ে দেন তিনি। অস্ট্রেলিয়া থেকে আসা এই ডিফেন্ডার কিন্তু দলের সম্পদ হয়ে উঠছেন ক্রমশই। ইতিমধ্যেই সমর্থকরা তাঁকে নিয়ে ছড়া বানিয়ে ফেলেছেন, ‘এলসে, ভালো খেলসে’।
We march on! ✊
BELIEVE in #BangalPower! ❤️💛#DurandCup #JoyEastBengal #EmamiEastBengal pic.twitter.com/sm4r0xAgf5
— East Bengal FC (@eastbengal_fc) August 25, 2023
সাতসকালে গোল হলেও প্রথমার্ধ মোটেই দৃষ্টিনন্দন হয়নি। কোনও দলের আক্রমণেই ঝাঁঝ ছিল না। তার একটা কারণ অবশ্য অবিরাম বৃষ্টি। ভিজে সপসপে মাঠে বল নিয়ন্ত্রণ করা বেশ কঠিন হচ্ছিল। তার মধ্যেই ৩২ মিনিটে ক্রেসপোর শট বারে লাগে, ৩৮ মিনিটে সিভেরিওর হেড বারের উপর দিয়ে বেরিয়ে যায়। প্রথমার্ধের সেরা সুযোগ কিন্তু গোকুলাম পেয়েছিল। ম্যাচের তখন ৪১ মিনিট। ডান প্রান্ত ধরে দারুণভাবে এগিয়ে যান শ্রীকুট্টান। তাঁর চমৎকার লো-ক্রস পেয়ে যান অ্যালেক্স। ইস্টবেঙ্গলের ডিফেন্ডাররা কেটে গিয়েছেন সামনে শুধু গোলকিপার প্রভসুখন সিং গিল। অ্যালেক্সের শট বাঁচিয়ে দেওয়ার জন্য গিল বাহবা অবশ্যই পাবেন, কিন্তু ঠিকমতো মারলে ওটা সেভ হয় না।
দ্বিতীয়ার্ধে অনেক বেশি সঙ্ঘবদ্ধ ফুটবল খেলা শুরু করে কেরলের দল। একের পর আক্রমণের ফসল হিসেবেই ৫৭ মিনিটে ১-১ করে দেয় তারা। অভিজিতের অনবদ্য ক্রসে হেডে গোল করেন ক্যামেরুন ডিফেন্ডার বৌবা আমিনু। নায়ক হতে পারতেন, কিন্তু সেই আমিনুই আত্মঘাতী গোল করে ভিলেন হয়ে গেলেন। বাঁ দিক থেকে নিশু কুমারের ক্রস আমিনুর মাথায় লেগে গোলে ঢুকে যায়। গোকুলাম গোলকিপার নড়ার সময় পাননি। খেলা শেষ হয় ২-১ স্কোরলাইনে।
আজ জিতেছে ইস্টবেঙ্গল, সমর্থকরা আনন্দ করতে করতে বাড়ি ফিরেছেন। কেউ কেউ আনন্দের আতিশয্যে মোহনবাগানকে (Mohun Bagan) গালাগাল করতে করতে ফিরেছেন। তবে লাল-হলুদ কোচ কার্লেস কুয়াদ্রাত (Carles Cuadrat) জানেন, এই মানের খেলা দিয়ে আইএসএলে চলবে না। ডুরান্ড কাপ চ্যাম্পিয়ন হওয়াও কঠিন। মুম্বই সিটি আছে (Mumbai City), ডার্বির দিনের মোহনবাগানের থেকে অনেক বদলে যাওয়া মোহনবাগান আছে।