কলকাতা: আরজি করের (RG Kar Medical College and Hospital) মহিলা চিকিৎসককে ধর্ষণ ও খুনের ঘটনার রেশ দেশজুড়ে। এই ঘটানার বিচারের দাবিতে সোমবার থেকে কর্মবিরতির ডাক দিয়েছে ‘ফেডারেশন অফ অল ইন্ডিয়া রেসিডেন্ট ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন। সব সরকারি হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক সমিতি এই ধর্মঘটে যোগ দিচ্ছে। এই ঘটনায় হাসপাতালের চেস্ট মেডিসিন ডিপার্টমেন্টের ৪ জন ইন্টার্ন ডাক্তারকে সমন পাঠাল লালবাজার। ওই ৪ জনই ওই রাতে হাসপাতালে ডিউটিতে ছিলেন। পাশাপাশি,ময়নাতদন্তকারী ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আজ পুলিশের তদন্তকারীদের ঘটনাস্থল পরিদর্শনের কথা।
আর জি কর কাণ্ডের প্রতিবাদে রাজ্যের সব সরকারি হাসপাতালেই কর্মবিরতি পালন করছেন ডাক্তাররা। ওপিডি, ইলেকটিভ সার্জারি এবং ল্যাবের কাজ বন্ধ থাকবে। আজ অর্থাত্ সোমবার সপ্তাহের প্রথমদিন আউটডোর কাউন্টার বন্ধ আরজি কর হাসপাতালে। বারুইপুর মহকুমা হাসপাতালে বন্ধ হাসপাতালের আউটডোর। যার জেরে সমস্যায় পড়েছে রোগী ও পরিজনেরা। সকাল থেকে হাসপাতালে আউটজোরে ভিড় থাকলে কোনও চিকিৎসকের দেখা পাওয়া যায়নি। একই ছবি ধরা পড়েছে মালদহে। জুনিয়র চিকিৎসকেরা জানিয়ে দিয়েছেন, হাসপাতালের জরুরি বিভাগ, মাতৃমা বিভাগের কাজ এবং জরুরি পরিষেবা ছাড়া অন্যান্য জায়গায় তাঁরা কর্মবিরতি পালন করবেন। হুগলির ইমামবারা জেলা হাসপাতাল এবং আরামবাগ মেডিক্যাল কলেজে পরিষেবা স্বাভাবিক। ঘটনার প্রতিবাদে রবিবার ওই দুই হাসপাতালের চিকিৎসক এবং চিকিৎসা কর্মীরা কালো ব্যাজ পরে প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন। সোমবার সকাল থেকে স্বাভাবিক পরিষেবা মিলছে। উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের জুনিয়র ডাক্তারেরা সোমবারও বিক্ষোভ অবস্থান চালিয়েছেন। সোমবার মেডিক্যাল কলেজের জরুরি বিভাগের সামনে হাতে প্ল্যাকার্ড নিয়ে অবস্থান বিক্ষোভে বসেন তাঁরা। আউটডোর বন্ধ সকাল থেকে। কোচবিহার মেডিক্যাল কলেজেও বন্ধ রয়েছে বহির্বিভাগ।
তরুণী চিকিৎসকের উপর যৌন হেনস্থা ও খুনের ঘটনার প্রতিবাদে পাঁচ দফা দাবি জানিয়ে অনির্দিষ্টকালের জন্য কর্মবিরতিতে (Suspension of Work) নামতে চলেছেন সংগঠনের সদস্যরা। বিজ্ঞপ্তি জারি করে জানিয়ে দিয়েছেন, জরুরি পরিষেবা বজায় রেখে কর্মবিরতি চলবে। স্বচ্ছ ময়নাতদন্তের রিপোর্ট রাতেই মধ্যেই প্রকাশ করার দাবি জানিয়েছেন তিনি। তাঁদের দাবি, আরজিকরের MSVP, অধ্যক্ষকে ঘটনার দায় নিতে হবে। অন্যদিকে আরজি কর মেডিক্যালের সুপার সঞ্জয় বশিষ্ঠকে সরিয়ে দিল স্বাস্থ্য দফতর। তবে এখনও অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে কোনও পদক্ষেপ করা হয়নি। শুক্রবার সকাল থেকে ধর্ষণ-খুনের ঘটনা প্রকাশ্যে আসার পর থেকেই হাসপাতালের চিকিৎসক-পড়ুয়ারা সকলেই দাবি তোলেন, অধ্যক্ষকে পদত্যাগ করতে হবে। এরপরও সরানো হল সুপারকে। তারপরও অশান্তি কমেনি। জুনিয়র চিকিৎসকদের দাবি, সুপারের অপসারণ চোখে ধুলো দেওয়া। প্রিন্সিপাল সন্দীপ ঘোষকে সরাতে হবে।
আরও পড়ুন: ৫ জনের চিকিৎসকদের কমিটিকে ময়নাতদন্তের রিপোর্ট ও সিসিটিভি ফুটেজ দেখানো হবে, জানাল পুলিশ
চিকিৎসকদের দাবি, ক্ষমা চেয়ে হাসপাতালের চেস্ট এবং ফুসফুসের চিকিৎসা বিভাগের প্রিন্সিপালকে পদত্যাগ (Resign) করতে হবে । ১২ ঘণ্টার সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হয়েছে। এই দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত তাঁরা কর্মবিরতি চালিয়ে যাবেন বলে সাফ জানিয়েছেন। এই কর্মবিরতির জেরে সমস্যায় পড়েছেন রোগী ও তাদের পরিজনরা। রোগীর পরিজনদের অভিযোগ, ডাক্তারদের কর্মবিরতির জেরে সকাল থেকেই মিলছে না স্বাভাবিক পরিষেবা। অনেক ক্ষেত্রেই তৈরি হচ্ছে সমস্যা। এমার্জেন্সির বাইরে লম্বা লাইনও চোখে পড়েছে। সকলেই চাইছেন কঠোর শাস্তি হোক অভিযুক্তের। সঙ্গে স্বাভাবিক হোক পরিস্থিতি।
এই ঘটনার পর হুঁশ ফিরেছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের। জোরদার করা হয়েছে হাসপাতালের নিরাপত্তা। বাড়ানো হয়েছে নজকদারি। কর্মীদের পোশাক বিধি বাধ্যতামূলক। কর্মীদের পরিচয়পত্র বাধ্যতামূলক। হাসপাতালের চুক্তিভিত্তিক কর্মীদেরও ইউনিফর্ম বাধ্যতামূলক।
অন্য খবর দেখুন