২৪-এর লোকসভা নির্বাচনকে লক্ষ্য রেখে তৈরি ইন্ডিয়া জোটের মূল উদ্যোক্তা নীতীশ কুমার (Nitish Kumar) রাতারাতি এনডিএ (NDA) শিবিরে যাওয়ায় জোটের অস্তিত্ব নিয়েই এখন শুরু হয়েছে জল্পনা। এরই মাঝে, নীতীশ কুমার ইন্ডিয়া জোট ছেড়ে ফের NDA-র হাত ধরার পরের দিনই ভারত জোড়ো ন্যায় যাত্রা নিয়ে আজ বিহারে (Bihar) গেলেন রাহুল গাঁধী (Rahul Gandhi)। এ দিন তিনি বলেন, ‘ঘৃণার বাজারে আমরা ভালোবাসার দোকান খুলছি। দেশে বিজেপির ঘৃণা-হিংসার রাজনীতির বিকল্প বিচারধারা তৈরি করেছে এই যাত্রা। এদিন বিহারের কিশনগঞ্জ স্টেডিয়ামে বক্তব্য রাখলেন রাহুল। তিনি বলেন, গত বছর কাশ্মীর থেকে কন্যাকুমারী পর্যন্ত ভারত জোড়ো যাত্রা করেছিলাম। অনেকে সেই সময় বলেছিলেন এই যাত্রার লক্ষ্য কী? আমি বলেছিলাম, এই দেশে আরএসএস-বিজেপির (BJP) লক্ষ্য ভেদাভেদ করা। একজাত অন্য জাতের সঙ্গে লড়ছে, ঘৃণার রাজনীতি তৈরি করেছে। আমি বলেছিলাম বিদ্বেষ নয়, ভালোবাসার দোকান খোলা হোক।
কেন ভারত জোড়ো ন্যায় যাত্রা (Bharat Jodo Nyay Yatra) এবার মণিপুর থেকে মুম্বই পর্যন্ত করা হচ্ছে, গতবারের তুলনায় দ্বিতীয় যাত্রার পার্থক্য কোথায়, বিহারে কেন প্রথমবারের যাত্রায় আসতে পারেননি তিনি, এই ধরণের বিষয়গুলিকে তুলে ধরে এদিন বক্তব্য রাখেন রাহুল গান্ধী। তবে তাঁর ভাষণে একবারের জন্যও শোনা গেল না নীতীশ কুমারের রাজনৈতিক ডিগবাজির কথা। এদিন, বিহারের জনগণের উদ্দেশে রাহুল গান্ধী বলেন, সামাজিক ন্যায়ের ক্ষেত্রে বিহার সর্বদাই এগিয়ে। বিহারের সমস্ত নাগরিকদের বলব, দেশে প্রগতি চাইলে আর্থিক আর সামাজিক ন্যায় প্রয়োজন। সেটা আপনাদের থেকে ভালো আর কেউ বুঝবে না। বিহারে দাঁড়িয়ে তিনি বললেন মণিপুরের কথা। মণিপুর (Manipur) জ্বলছে, অথচ প্রধানমন্ত্রীর সেখানে যাওয়ার সময় হল না। মোদি সরকার ২-৩ জন শিল্পপতিকে দেশের সম্পদ দিয়ে দিচ্ছে, মন্তব্য রাহুলের।
প্রসঙ্গত, ৩১ জানুয়ারি রাহুলের ন্যায় যাত্রা বিহার থেকে মালদহ হয়ে বাংলায় প্রবেশ করবে। রতুয়া থানারা ভালুকার সেচ দফতরের গেস্ট হাউসে রাহুলের মধ্যাহ্ন ভোজের লিখিত ভাবে অনুমতি চাওয়া হয় কংগ্রসের পক্ষ থেকে। কিন্তু প্রশাসনের পক্ষ থেকে তা বাতিল করে দেওয়া হয়েছে। ৩১তারিখ মালদহে রাহুল গান্ধীর ভারত জোড়ো ন্যায় যাত্রায় বাম নেতা শতরূপ ঘোষ থাকবেন বলেই জানা যাচ্ছে। মুর্শিদাবাদে ‘ন্যায় যাত্রা’ পৌঁছনোর কথা ১ ফেব্রুয়ারি। সেখানে উপস্থিত থাকতে পারেন সিপিএম নেতা মহম্মদ সেলিম। যুবনেত্রী মীনাক্ষী মুখোপাধ্যায় (Meenakshi Mukherjee)-ও যাতে সেখানে থাকেন, তার জন্য সিপিআইএম নেতৃত্বের কাছে আবেদন করেছেন কংগ্রেস নেতৃত্ব। এরপর ২ফেব্রুয়ারি ‘ন্যায় যাত্রা’ যাওয়ার কথা বীরভূমে। সেখানে রাহুলকে সঙ্গ দিতে পারেন বাম নেতা সুজন চক্রবর্তী।
অন্যদিকে সোমবার রাহুলের ন্যায়যাত্রা প্রসঙ্গে নন্দীগ্রামে সুর চড়ান বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। সংবাদমাধ্যমের পক্ষে রাহুলের যাত্রা নিয়ে প্রশ্ন শুনেই বিরক্ত হয়ে ওঠেন শুভেন্দু (Suvendu Adhikari)। তিনি বলেন, গত চার দিন ধরে প্রশ্ন করে যাচ্ছেন, রাহুল গান্ধী, রাহুল গান্ধী। কে এই হরিদাস পাল? শুভেন্দু আরও বলেন, স্টোভের উপর কয়লা দিয়ে সকালবেলা চা তৈরি হয়। স্টোভের উপরে কয়লা দেওয়া হয় আমি তো দেখিওনি, শুনিওনি। যার এই সেন্স, তাকে কাউন্ট কেন করেন? পশ্চিমবাংলায় অপ্রাসঙ্গিক পার্টি বলে কংগ্রেসকে (Congress) খোঁচা দেন বিরোধী দলনেতা। রাহুল গান্ধীকে অকথ্য ভাষায় আক্রমণ করার জেরে শুভেন্দুর বিরুদ্ধে রায়গঞ্জ থানায় এফআইআর দায়ের করেছে কংগ্রেস। নন্দীগ্রামে শুভেন্দুর মন্তব্যের ভিডিয়ো এক্স হ্যান্ডেলে প্রকাশ করে তৃণমূলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ (Kunal Ghosh) লেখেন, এটা ভাষা? রাহুল গান্ধীকে কী ভাষায় আক্রমণ করছেন? রাজনীতিতে এই ধরনের অসভ্যতা, অপসংস্কৃতি বন্ধ হোক।
এটা ভাষা? রাহুল গান্ধীকে কী ভাষায় আক্রমণ করছেন গদ্দার? রাজনীতিতে এই ধরণের অসভ্যতা, অপসংস্কৃতি বন্ধ হোক। রাজ্য কংগ্রেস নেতারা বিজেপির দালালি করতে গিয়ে আর কত নিচে নামবেন যে এটাও হজম করছেন?
শুভেন্দুর কুৎসিত রাজনীতি বেআব্রু হয়ে পড়ছে। এই অসুস্থ ভাষার তীব্র প্রতিবাদ করছি। pic.twitter.com/x9s1mFyUMP— Kunal Ghosh (@KunalGhoshAgain) January 29, 2024
আরও পড়ুন: কংগ্রেসের ন্যায় যাত্রা নিয়ে একটি শব্দও শোনা গেল না মুখ্যমন্ত্রীর মুখে
পাশাপাশি, রাহুলের যাত্রা নিয়ে প্রথম থেকেই রাজ্যের শাসক দল তৃণমূলের (TMC) সঙ্গে কংগ্রেসের সংঘাত দেখা যাচ্ছে। সরকারি অতিথি নিবাসে রাহুলের থাকা, খাওয়া নিয়েও সংঘাত চলছে। আগামী ৩১ জানুয়ারি ভারত জোড়ো ন্যায় যাত্রার নিয়ে বিহার থেকে মালদহ জেলায় প্রবেশ করবেন রাহুল গান্ধী। আর সেদিনই মালদহে ডিএসএ ময়দানে রয়েছে মমতা বন্দোপাধ্যায় (Mamata Banerjee)-র প্রশাসনিক সভা। একই দিনে দুই দলের শীর্ষ নেতা-নেত্রীদের সভা ঘিরে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক তরজা।
আরও খবর দেখুন