skip to content
Tuesday, June 18, 2024

skip to content
Homeচতুর্থ স্তম্ভFourth Pillar | নির্বাচন শেষ, এবার কার্তিককে জেলে পোরা হোক
Fourth Pillar

Fourth Pillar | নির্বাচন শেষ, এবার কার্তিককে জেলে পোরা হোক

আজ সনাতন ধর্মের নাম করে যা চলছে তা আদতে এক ভণ্ডামি আর মূর্খামি ছাড়া আর কিছুই নয়

Follow Us :

বাংলার মানুষ জানল এক কার্তিক মহারাজের কথা, এক অশিক্ষিত সন্ন্যাসীর বিষ ছড়ানোর কথা, এবং সেই তিনি আপাতত এই নির্বাচনে এক চর্চিত ব্যক্তিত্ব। রাজনীতিতে সন্ন্যাসীরা, সাধুরা আসবে না? এ নিয়ে দেশে দ্বিমত ছিল, আছেও। কিন্তু এটা তো ঠিকই যে মধ্যযুগীয় ইতিহাসে এই চার্চের প্রিস্ট, মসজিদের ইমাম, বৌদ্ধ ভিক্ষু বা হিন্দু ঋষি পুরোহিত, সাধুরা এক বিরাট ভূমিকা পালন করত। তারা শাসকের পাশে থেকেছে, এক শাসকের হয়ে অন্য আর এক শাসকের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে শামিল হয়েছে এবং তার কোনওটাই ধর্মের জন্য নয়, তাঁদের নিজেদের অস্তিত্ব, নিজেদের বাড়বাড়ন্ত, তাদের সমৃদ্ধির জন্যই ছিল। রাসপুটিন থেকে ধীরেন্দ্র ব্রহ্মচারীরা রাজনীতিতে নাক গলিয়েছে, তাদের নিজেদের স্বার্থসিদ্ধির জন্যই। কিন্তু এক সময়ে যখন ধর্ম তার সমস্ত কাঠামো নিয়েই শাসকের সঙ্গে থাকত, তা কেবল নাক গলানো নয়, তা ছিল প্রাতিষ্ঠানিক ধর্ম আর শাসন ব্যবস্থার সহাবস্থান। আধুনিক গণতান্ত্রিক কাঠামো তৈরি হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তা ধীরে ধীরে ক্ষয়ে যায়। এখন ভ্যাটিকানের চার্চ খ্রিস্টান জনসংখ্যা অধ্যুষিত দেশগুলোর প্রশাসনিক ব্যবস্থায় বিরাট কোনও প্রভাব ফেলার জায়গাতেই নেই। কখনও সখনও ব্লাসফেমি, অ্যাবরশন ইত্যাদি ইস্যুতে তারা সরব হলেও সেই কথা বিরাট গুরুত্ব পায় বা সমগুরুত্বও পায়, তেমনও নয়। কিন্তু প্রায় মধ্যযুগীয় ব্যবস্থায় পড়ে থাকা বা সেদিকেই চলতে থাকা ইসলামিক দেশগুলোতে এই ধর্মযাজক মোল্লা ইমামদের বিরাট ভূমিকা, তাঁরা সরকার রাখেন, ফেলেন, ভাঙেন গড়েন। সভ্য সমাজ বা রাষ্ট্র ব্যবস্থায় তা কি কাম্য? কেউই একমত হবেন না, এমনকী সেই ইসলামিক দেশগুলোতেও বহু মানুষ ক্রমশ এই ধর্মীয় শাসন বা অনুশাসনের বিরুদ্ধে সরব হচ্ছেন, কথা বলছেন। সভ্য সমাজ তার রাষ্ট্র কাঠামোকে ধর্মবিযুক্ত করেছে বহু আগে থেকে। আমাদের দেশে কিন্তু ঋষি মুনি সন্ন্যাসীরা এমনকী সেই ষোড়ষ জনপদের পার্টিসিপেটরি ডেমোক্রেসিতে, যেখানে হাত তুলে রাজা নির্বাচন হত সেখানেও মাথা গলিয়েছেন, তাঁদের মাথা গলাতে দেওয়া হয়েছে। তাঁরা রাষ্ট্রের স্বার্থেও যেমন কাজ করেছেন, তেমন তাঁদের বড় অংশ রাষ্ট্র নয়, শাসকের স্বার্থ, নিজের স্বার্থকে প্রাধান্য দিয়েছেন। স্বাধীনতা সংগ্রামে অংশগ্রহণ করেছেন, সন্ন্যাসী বিদ্রোহ, ফকির বিদ্রোহ হয়েছে, স্বাধীনতার অন্দোলনেও বহু সন্ন্যাসী পির ফকিরের অবদান আছে।

স্বাধীনতার পরে নেহরু চেষ্টা করলেও রাষ্টকাঠামো, প্রশাসন ধর্মবিযুক্ত হয়নি, তার দীর্ঘ ইতিহাস আর প্র্যাকটিস ছেড়ে হঠাৎ তা হওয়াও কঠিন। কিন্তু সেই সব ধর্মীয় সংগঠন বা বাবাজি মাতাজিদের হস্তক্ষেপ ছিল ব্যক্তিগত স্তরে। আর সাংগঠনিকভাবে তার বহু আগেই রামকৃষ্ণ মিশনের ক্ষেত্রে বিবেকানন্দ খুব পরিষ্কার করেই মঠ মিশনকে রাজনীতির বাইরেই রেখেছিলেন, সিস্টার নিবেদিতাকে লেখা চিঠি তা প্রমাণ করে। এমনকী ইংরেজদের বিরুদ্ধে স্বাধীনতা সংগ্রামে নিবেদিতার অংশগ্রহণকে তিনি অনুমোদন দেননি। ভারত সেবাশ্রমও ধারাবাহিকভাবে সংগঠনগতভাবে কোনও বিশেষ রাজনৈতিক দলকে সাহায্য করেছে এমন তথ্যও নেই। কিন্তু স্বাধীনতার পরে এই আরএসএস, জনসঙ্ঘ আর পরে বিজেপি এবং তার শাখা সংগঠন বিভিন্নভাবে ধর্মকে রাজনীতির সঙ্গে মিশিয়ে এক বিষাক্ত ককটেল করার কাজ করেই গেছে, লাগাতার। সেই রাম জন্মভূমি বিন্যাস থেকে শুরু করে বিশ্ব হিন্দু পরিষদ বজরঙ্গ দলকে নিয়ে উত্তর ভারতে জঙ্গি হিন্দু সংগঠন আর আন্দোলন গড়ে তোলার কাজ করেছে, যার ফসল আজকের এই বিজেপি সরকার। বিভিন্ন মঠ মিশনের প্রত্যক্ষ পরোক্ষ সাহায্য নিয়েই এই কাজ তারা করেছে। এবং সনাতন ধর্মের নামে গড়ে ওঠা, বেড়ে ওঠা এই আন্দোলনই বিজেপির আদত ভিত্তি। এই কারণেই সে বেড়েছে উত্তর ভারতে, দক্ষিণ ভারতে তার ভিত্তিভূমি নেই, নেই কারণ সেখানে তার আগেই ওই সনাতন ধর্ম নিয়ে বা তার বিরুদ্ধে হিন্দু ধর্মের মধ্যেই বহু ধরনের প্রতিবাদী সত্তা গড়ে ওঠার বদলে সনাতনীদেরই সংখ্যালঘিষ্ঠ করে মূল হিন্দু ধারা গড়ে উঠেছে। উত্তর ভারতে হিন্দু ধর্মের বিরুদ্ধেই বেশ কিছু প্রতিবাদী ধর্ম গড়ে উঠেছিল, কিন্তু পরবর্তী সময়ে তাদের আলাদা অস্তিত্ব থাকলেও তারা ওই মূল হিন্দু ধর্মের ব্র্যাকেটে হিন্দু সনাতনীদের সঙ্গেই থাকে। আর সেই কারণেই হিন্দু ধর্মের বিভিন্ন শাখা, বিভিন্ন আলাদা আলাদা মতের গোষ্ঠীর সাধু সন্ন্যাসীরা আদতে ওই আরএসএস–বিজেপির মূল সনাতনী ধারণাকেই সমর্থন করতে পারে। আরএসএস–বিজেপি এই একই কায়দায় এমনকী আদিবাসীদের, যাঁরা হিন্দুও নয়, যাঁরা অ্যানিম্যালিস্ট, যাঁরা পাহাড়, নদী, গাছ আর কল্পিত কিছু ভগবান বা বোঙাদের পুজো করত, তাদেরও ওই হিন্দু ব্র্যাকেটের মধ্যে নিয়ে আসতে পেরেছে।

এসব হঠাৎ হয়নি। বহু দিন ধরে তাদের বনবাসী, মূলবাসী সমিতি কাজ করেছে, বনবাসী আশ্রম করেছে, এখন দেশের এক বিরাট সংখ্যক আদিবাসী তাঁদেরকে ওই হিন্দু ব্র্যাকেটের মধ্যে সুরক্ষিত মনে করেন। এইভাবেই ধর্ম এবং একমাত্র ধর্মকে কাজে লাগিয়ে আরএসএস-বিজেপির উত্থান সারা উত্তর ভারতে। দক্ষিণ ভারতে এতদিনের চেষ্টাতেও তা তারা করে উঠতে পারেনি। আর পূর্ব ভারতের দুটো জায়গাতে তাদের সমস্যা, প্রথমটা হল ওড়িশা, সব কিছুর আগে, ওসব সনাতন, বেদ, বৈদিক সভ্যতা, যুজ্ঞ এসবের আগে তাঁদের ধর্মের পরিচিতি জগন্নাথ মহাপ্রভু, যা ওড়িশার আদিবাসী, দলিত, শূদ্র, ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়র কাছে সব থেকে আগে। সেখানে রামমন্দির আবেগ তৈরি করে কিন্তু তা দু’কূল ছাপিয়ে যায় না, হনুমান পুজো হতেই পারে কিন্তু তা সেই আবেগ তৈরি করে না। এবারে সম্বিত পাত্রের মুখ ফসকেই বলে ফেলা কথা, জগন্নাথদেব মোদিজির ভক্তের পরের ১১টা আসনের ভোটের রেজাল্ট মিলিয়ে দেখে নিয়ে বুঝতে পারবেন কেন ওড়িশা উত্তর ভারতের গোবলয়ের থেকে আলাদা। আর আলাদা ছিল আমাদের বাংলা, তার কারণ এখানকার ধর্ম সাধকেরা, এখানকার নবজাগরণের ইতিহাস, রবীন্দ্রনাথ, নজরুল আর বামপন্থার এক দীর্ঘ চর্চা আর ইতিহাস। এই সবকিছু মিলেই আরএসএস-বিজেপির ওই হিন্দুত্বকে সনাতন ধর্মের গোঁড়া চিন্তা চেতনাকে রুখে দিয়েছে বহু আগে থেকেই। কিন্তু সে আগল খুলছে, খুলছে কারণ সনাতনীদের, হিন্দুত্বের ধ্বজাধারীদের প্রবল আক্রমণ থেকে বাঁচতে আপাতত প্রধান রাজনৈতিক বিরোধী তৃণমূল দল দুটো হাতিয়ার ধরেছে। প্রথমটা হল উদার হিন্দু ধর্মের বিভিন্ন উপকরণকে নিয়ে বলা যে দেখো আমরাও হিন্দু, যা এতদিন বাংলার মানুষজনকে বলতে হয়নি। কাজেই আমরাও রামনবমী করব, আমরাও পাড়ার মোড়ে মোড়ে শোভাযাত্রা বের করব, প্রতিযোগিতামূলক ধর্মীয় প্রচার। দুই, সংখ্যালঘু ধর্মের মধ্যের গোঁড়া অংশকে কাজে লাগিয়ে একধরনের মেরুকরণ রাজনীতি, পোলারাইজেশন পলিটিক্স প্র্যাকটিস করা। এই দুইয়ের ফলে একধারে গোঁড়া হিন্দুত্ববাদী সংগঠন তাদের মেরুকরণ ক্ষমতা বাড়াতে পারল আর দুই, এক তত্ত্ব উঠে এল যে আরএসএস-বিজেপি আদতে আমাদের ঐতিহ্য সনাতন ধর্মের একমাত্র রক্ষাকর্তা। আসুন সেটা নিয়েও খানিক আলোচনা করা যাক।

আরও পড়ুন: Fourth Pillar | সত্যি মিথ্যে, মিথ্যে সত্যি

সনাতন ধর্ম বিষয়টা কী? সনাতন মানে ইটারনাল, সনাতন সত্য মানে ইটারনাল ট্রুথ, সনাতন ধর্ম হল ইটারনাল রিলিজিয়ন। আধুনিক মানুষের ইতিহাস কত পুরনো? তিন লক্ষ বছরের কিছু বেশি। তখন কি কোনও ধর্ম ছিল? ছিল বা ছিল না, কারণ থাকারও কোনও প্রমাণ নেই, আবার না থাকারও কোনও প্রমাণ নেই। কিন্তু এটা বলাই যায় যে বিরাট অঞ্চল, দেশ জুড়ে কোনও সংগঠিত ধর্ম ছিল না কারণ মানুষ তখনও ছোট ছোট গোষ্ঠীতে বিভক্ত। হয়তো এ গোষ্ঠীর মানুষ শেয়ালের মাথাকে দরজায় ঝুলিয়েছে, সেই গোষ্ঠীর মানুষ পেঁচার মাথাকে ঝুলিয়েছে, এরকম কিছু টোটেম বা ট্যাবুর জন্ম হয়ে থাকতে পারে। এদিকে এই বেদ ইত্যাদির ইতিহাস কত পুরনো? গবেষণা বলছে ঋক বেদ কমবেশি ৮০০০ বছরের পুরনো। এবং মজার কথা হল এই ঋক বেদে সনাতন শব্দটাই নেই। তো শব্দটা এল কবে থেকে? গীতায় আমরা এই সনাতন শব্দটা বহুবার পেয়েছি। এই গীতা কত বছরের পুরনো? কম বেশি ৫১৫০ বছরের। সেখানে বহুবার আমরা সনাতন শব্দটা পেয়েছি। কীভাবে? সেখানে কৃষ্ণ অর্জুনকে কিছু শাশ্বত কথা বলছেন, কীরকম? বলছেন, অর্জুন, আত্মার জন্ম হয় না, মৃত্যু হয় না, তাকে দহন করা যায় না ইত্যাদি, বলার পরে বলেছেন এটাই সনাতন। অর্থাৎ এ এক আদিকাল থেকে চলে আসা সত্য। আচ্ছা খেয়াল করুন, উনি কিন্তু বলছেন না যে অনন্তকাল ধরেই এটা চলবে, উনি বারবার বলছেন সনাতন, মানে এ পর্যন্ত চলে আসা সত্য। আমরা বুদ্ধের মুখে এই সনাতন ধর্মের কথা পাই, শাশ্বত সত্যের কথা বৌদ্ধ ধর্ম বলে, তাই বৌদ্ধ ধর্ম সনাতন। বৌদ্ধ ধর্ম কিন্তু ভগবানে বিশ্বাস করে না, কিন্তু তাও সনাতন ধর্ম। একই ভাবে জৈন ধর্মও নিজেকে সনাতন ধর্ম বলে, তা কি হিন্দু ধর্ম? এক্কেবারেই নয়, কারণ জৈন ধর্ম তো পরমাত্মায় বিশ্বাসই করে না, কিন্তু তারাও নিজেদের সনাতন ধর্ম বলে। অর্থাৎ যে ধর্মে সনাতন সত্যের কথা বলা হল, বা এমন কিছু কথা যা দার্শনিক ভাবে আদিকাল থেকে চলে আসা সত্য, তাই সনাতন ধর্ম। কিন্তু সেসবই দার্শনিক পটভূমিকায় সনাতন।

এরও বহু পরে হিন্দু ধর্মের বহুবিধ আচার বিচার, মানে প্র্যাকটিস নিয়ে আলোচনা হতে শুরু করল, কিছু মানুষ আজন্ম চলে আসা কিছু আচার বিচারের পরিবর্তন চাইলেন, বা অতীতে ফেলে আসা, মুছে যাওয়া কিছু ঐতিহ্যকে ফিরিয়ে আনতে চাইলেন। ব্রাহ্মণদের বাইরে, ক্ষত্রিয়দের বাইরেও বেদ শিক্ষার কথা বললেন, নারী শিক্ষার কথা বললেন, বংশানুক্রমিক নয় কাজের ভিত্তিতে জাতিবাদের কথা বললেন। এবং সঙ্গে সঙ্গেই তার প্রতিক্রিয়া দেখা দিল সমাজে, একদল বললেন আমরা সনাতনী, এতদিন ধরে যা চলে এসেছে, যা আমরা মেনে এসেছি, তা পরিবর্তন করতে দেব না। অব্রাহ্মণের মুখে গায়ত্রী মন্ত্র শুনব না, নারীদের স্থান রন্ধনশালায়, রান্নাঘর ছেড়ে তারা পাঠশালায় বেদ শিক্ষা করতে আসবে এ কেমন কথা? আমরা সনাতনী, আমরা ধর্মের মর্যাদা রাখব। শুরু হল সনাতন ধর্মের নতুন ইতিহাস। কত বছর পুরনো? হাজারখানেকও নয়। কিন্তু সমাজের চাপেই ধর্ম পাল্টেছে নিজেকে, আচার বিচার পাল্টেছে। ধরুন না দুর্গাপুজোর কথা, সনাতনীদের দুর্গার বর্ণনা আর আজকে সনাতন দিন্দা বা মিন্টু পালের মূর্তি কি এক? ডাকের সাজের দুর্গাই কী সনাতনী? বারোয়ারি পুজো কি সনাতনী? আজকালকার ক’জন ব্রাহ্মণ একাহারী? ক’জন ব্রাহ্মণের ব্রহ্মবিদ্যা জানা আছে? চামড়ার চটি পরতে অস্বীকার করতেন ব্রাহ্মণরা, আজ ক’জন করবেন? বিধবা বিবাহের বিরোধিতা সনাতনীরাই করেছিলেন, আটকাতে পারেননি। মন্দিরে কায়স্থরাই ঢুকতে পারতেন না শূদ্র তো কোন ছার, এখন ক’টা মন্দির রাখতে পেরেছে সেই শর্ত? এমনকী হিন্দু ধর্মের মধ্যেই শূদ্র জাগরণের কথা বলেছেন বিবেকানন্দ, কোরান পড়েছেন রামকৃষ্ণ, মূর্তি পুজোর বিরোধিতা করেছেন দয়ানন্দ স্বরস্বতী। কোনটা তাহলে সনাতন ধর্ম? হ্যাঁ, এতকিছুর পরেও এই বাংলা থেকেই হিন্দুত্বের কথা উঠেছে সর্বপ্রথম, হিন্দু ধর্মের শুদ্ধতার কথা উঠেছে, সেই কথা গেছে মহারাষ্ট্রে, সেখান থেকেই মনুবাদ, ব্রাহ্মণ্যবা কে ঘিরে তৈরি হয়েছে এই সনাতন ধর্মের ধারণা। কিসের সনাতন? যারা হাফ প্যান্টটুকুও বজায় রাখতে পারল না, চামড়ার বেল্ট পরে ফুলপ্যান্ট পরে নিজেদের আধুনিক করে তুলল, যাদের এই প্রজন্ম ধুতি দিলে বড়জোর গামছা বা লুঙ্গির মতো ব্যবহার করবে, তাদের মুখে রোজ শোনা যায় সনাতন ধর্ম। আপাতত যে সনাতন ধর্মের কাজ হল ব্রাহ্মণ্যবাদকে বজায় রাখা, মনুবাদকে বাঁচিয়ে রাখা।

উদয়নিধি স্তালিন সেই ব্রাহ্মণ্যবাদকে, সেই মনুবাদকে, সেই তথাকথিত সনাতন ধর্মকে মুছে ফেলার কথা বলেছেন, যে কথা নানক, চৈতন্য, কবীর, গুরুচাঁদ ঠাকুর বহু আগেই বলেছেন, যে গোঁড়ামির বিরুদ্ধে লড়েছেন রামমোহন, বিদ্যাসাগর, রবিঠাকুর, বিবেকানন্দ, পেরিয়ার, জ্যোতি রাও ফুলে, বাবাসাহেব আম্বেদকর। আজ রামস্বামী পেরিয়ারের প্রচারের জন্যই দক্ষিণ ভারতের বহু মন্দিরে অনায়াসে শূদ্রদের প্রবেশ সম্ভব হয়েছে, বহু মন্দিরেই আছেন অব্রাহ্মণ পুরোহিত। ওই প্রচারের জন্যই হিন্দু ধর্মের অন্যতম কাঞ্চিপুরম মঠের পাশেই আছে মসজিদ, তাদের সামনেই আছে পেরিয়ারের মূর্তি, যিনি অস্বীকার করেছিলেন ইশ্বরের অস্তিত্বকে মানতে, যিনি যুক্তিবাদের কথা বলেছিলেন। রামকৃষ্ণ মিশন? না তাঁরাও সনাতনী নন। স্বামী বিবেকানন্দ নিজেদের বৈদান্তিক বলতেন, সনাতনী হিন্দুদের গোসেবা নিয়ে ঠাট্টা করতেন। শ্রীরামকৃষ্ণ যে ‘যত মত তত পথ’-এর কথা বলেছিলেন, তা আর যাই হোক সনাতনীদের কথা নয়। উল্টে এক শূদ্র রাসমণির তৈরি দক্ষিণেশ্বর মন্দিরে মূর্তির প্রাণপ্রতিষ্ঠার অনুষ্ঠান সনাতনীরা বয়কট করেছিলেন দেখেই রামকৃষ্ণের দাদাকে কামারপুকুর থেকে এনে পূজারীর দায়িত্ব দেওয়া হয়। সনাতন তো হল সূর্য, চন্দ্র, গ্রহ তারা, মানুষের বিবর্তনের ইতিহাস, মানবিক গুণ, ক্ষমা, দয়া, প্রেম, ভালবাসা। সেই আকাশভরা সূর্যতারায় প্রাণ খুঁজে যারা পায় না, যাদের মাথায় ভুসো ভরা, তারাই জাতিবাদের কথা বলে, ধর্মে ধর্মে বিরোধের কথা বলে। আজ সনাতন ধর্মের নাম করে যা চলছে তা আদতে এক ভণ্ডামি আর মূর্খামি ছাড়া আর কিছুই নয়। আজ সংগঠনগতভাবে না হলেও আমাদের বাংলাতেও ওই কার্তিক মহারাজের মতো কিছু সন্ন্যাসী ধর্মনিরপেক্ষতার বিরুদ্ধে কথা বলেন, সংবিধান বদলানোর ডাক দেন। যে মঞ্চে বসে সেই কথাগুলো বলেন সেখানে মঞ্চ আলো করে বসে আছেন শুভেন্দু অধিকারী, তিনিও জানেন না যে এই বিষবৃক্ষ বেড়ে এক আদিত্য যোগী হয়ে উঠলে উনিও ছিটকে যাবেন কোথায় কে জানে? আর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও জানেন না যে এইসব বিষবৃক্ষ পুষে রেখে ওই মেরুকরণের রাজনীতি হয় বটে কিন্তু তা ভবিষ্যতের জন্য বিপজ্জনক। কেন বলছি? কারণ আমাদের মুখ্যমন্ত্রী তো নিজেই বলেছেন, এই কার্তিক মহারাজ রামনবমীর সময়ে দাঙ্গা লাগানোর কাজ করছিলেন, তাই যদি হয় তাহলে উনি বাইরে কেন? এতদিনে তো ওনার জেলে থাকা উচিত? নেই কেন? আরএসএস–বিজেপি যে রাজনীতি করছে তা বিষাক্ত, তা সমাজ আর দেশকে ভেঙে চুরমার করবে। কিন্তু বিরোধীরাও যে পাল্টা রাজনীতি করছেন, সে কেরালায় শবরীমালাই নিয়ে হোক, মধ্যপ্রদেশে মহাকাল মন্দির নিয়ে হোক বা এই বাংলায় এই কার্তিক মহারাজদের আশকারা দিয়েই হোক তা আদতে সমস্যার সমাধান নয়। কিছু বিষয়ে একটা নীতিগত স্ট্যান্ড নিতেই হবে, টু কল আ স্পেড আ স্পেড, হ্যাঁ, সেখানে কৌশল শেষমেশ কাজে দেয় না। যে দাঙ্গা বাঁধানোর চেষ্টা করছে তার জায়গা হোক জেলে। বিষবৃক্ষ বোঝার সঙ্গে সঙ্গেই তাকে গোড়াসুদ্ধু তুলে ফেলা উচিত।

RELATED ARTICLES

Most Popular

Video thumbnail
নাশকতার জঙ্গি-হুমকি ! যাদবপুর, প্রেসিডেন্সি এসএসকেএমে হুমকি মেইল
00:00
Video thumbnail
BJP | বিজেপি বনাম বিজেপি গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের ভুলভুলাইয়া , হাতড়ে বেড়াচ্ছে কেন্দ্রীয় দল
00:00
Video thumbnail
Neet | supreme court | দুর্নীতির হাত ধরে ডাক্তার আসবে সমাজে ! নিট মামলায় বড় আপডেট
00:00
Video thumbnail
Mamata banerjee | অনন্ত-মমতা সাক্ষাৎ রাজবংশী ভোটে থাবা ? মাথায় হাত বিজেপির ?
00:00
Video thumbnail
স্পিকার পদে প্রার্থী দিতে তোড়জোড় ঘুঁটি সাজাচ্ছে বিরোধীরা
00:00
Video thumbnail
Mamata Banerjee | কোচবিহারে মদন মোহন মন্দির পরিদর্শন মুখ্যমন্ত্রীর
00:00
Video thumbnail
Weather Upddate | মঙ্গলে ‘মঙ্গল’ দক্ষিণবঙ্গে , স্বস্তির বৃষ্টি শুরু , ৩ দিনের আপডেট জেনে নিন
00:00
Video thumbnail
Expanding Glacial Lakes | হিমালয়ের হিমবাহ দ্রুত গলছে, ভয়ঙ্কর বিপদ আসন্ন! দেখুন হাড়হিম করা ভিডিও
00:00
Video thumbnail
Post Poll Violence | High Court | ভোট-পরবর্তী সন্ত্রাস নিয়ে হাইকোর্টে রিপোর্ট জমা রাজ্যের
01:17
Video thumbnail
Kolkata News | নাশকতার জঙ্গি-হুমকি! যাদবপুর, প্রেসিডেন্সি, এসএসকেএমে হুমকি মেইল
03:40