ফ্রান্স–৩ পোল্যান্ড—১
(অলিভার জিরু, কিলিয়ান এমবাপে-২) (রবার্ট লেয়নডস্কি)
পোল্যান্ডকে উড়িয়ে দিয়ে বিশ্ব কাপের কোয়ার্টার ফাইনালে উঠে গেল বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ফ্রান্স। রবিবার তারা যে দাপটে খেলল সেই ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে পারলে তারা কিন্তু এ বারও বিশ্বজয়ীদের তাজ মাথায় রাখতে পারে। পোল্যান্ড যে খেলাটা খেলেছিল আর্জেন্তিনার বিরুদ্ধে তার ধারে কাছেও যেতে পারেনি। বা বলা যায় ফ্রান্সের তিন ফরোয়ার্ডের দাপটে তারা সারাক্ষণ কুঁকড়ে থেকে বিশ্রি হারের স্বাদ পেল। ফ্রান্সের এই জয়ের কারিগর দুজন। প্রথমে আলিভার জিরু এবং পরে কিলিয়ান এমবাপে। ৪৪ মিনিটে এমবাপের পাস থেকে গোল করে জিরু হয়ে গেলেন ফ্রান্সের সর্ব কালের সেরা গোলদাতা। এত দিন রেকর্ডটা ছিল থিয়রি অঁরির। সেই ৫১ গোলের রেকর্ড ভেঙৈ জিরু করলেন ৫২ গোল। আর কিলিয়ান এমবাপে জোড়া গোল করে এবারের বিশ্ব কাপে করে ফেললেন ৫টি গোল। এবং হয়ে উঠলেন গোল্ডেন বুট পাওয়ার বড় দাবিদার। আর শেষ দিকে রবার্ট লেয়নডস্কির পেনাল্টি থেকে গোলটা খানিকটা সান্ত্বনা পুরস্কারের মতো।
ব্যাক্তিগত রেকর্ডের কথা মাথায় রেখেও বলা যায় ফ্রান্স যা ফুটবল খেলছে তা বিপক্ষদের ভয় ধরানোর মতো। বিশেষ করে চার ফরোয়ার্ডের যা কেরামতি তা কিন্তু অন্য দলে নেই। ব্রাজিলের মতো নয় জন স্ট্রাইকার নিয়ে ফ্রান্স আসেনি। তাদের দলে লিওনেল মেসির মতো ম্যাজিসিয়নও নেই। কিন্তু তাদের যে চার ফরোয়ার্ড আছে তারাই বিপক্ষের রাতের ঘুম কেড়ে নেওয়ার জন্য যথেষ্ট। দিদিয়র দেশঁ এদিন সামনের দিকে রেখেছিলেন চারজনকে। তিনজনকে মাঝ মাঠে রেখে সামনে শুধু অলিভার জিরুকে। বাঁ দিকে কিলিয়ান এমবাপে, ডান দিকে ওসুমানু দেম্বলে এবং মাঝখানে আঁতোয়া গ্রিজম্যান। এই চতুরঙ্গ আক্রমণে দিশেহার হয়ে গেল পোল্যান্ড। তাদের ডিফেন্ডারদের সাহায্য করতে নেমে আসছিলেন মিডফিল্ডাররা। কিন্তু তাতেও কি ফ্রান্সকে আটকানো যায়? বাঁ দিক দিয়ে এমবাপের দৌড় এবং ডান দিক দিয়ে দেম্বলের সর্পিল গতিতে উঠে সেন্টার করার মধ্যেই লুকিয়ে ছিল ফ্রান্সের কারকুরি। অন্য দিন পোল্যান্ডের গোলকিপার উইচেখ সেজনি যে দাপটে খেলেন তা দেখাতে পারেননি এদিন। ফ্রান্সের গোলগুলির সময় তাঁকে বেশ অসহায় লাগছিল।
শুরুর থেকেই গোলের জন্য মরিয়া হওয়া ফ্রান্স কিন্তু অনেক আগেই গোল পেতে পারত। শেষ পর্যন্ত তা হেল ৪৪ মিনিটে। পোল্যান্ডের দুই ডিফেন্ডারের মধ্য দিয়ে চমৎকার বলটা বাড়িয়েছিলেন এমবাপে। পিছন থেকে ছুটে গিয়ে বলটা ধরে আলতো পুশে গোল করলেন জিরু। তবে দিনের সেরা ছিল ৭৪ মিনিটে এমবাপের গোল। দেম্বলের পাসটা ধরে তিনি যখন বক্সে ঢুকলেন তখন তাঁর সামনে কেউ নেই। ইচ্ছে করলে আরও এগিয়ে যেতে পারতেন। কিন্তু ওখান থেকেই একটা গোলার মতো শট বেরোল এমবাপের পা থেকে। সেজনি নড়ার সুযোগ পাননি। আর ৯১ মিনিটে এমবাপের দ্বিতীয় গোলটার বল বাড়িয়েছিলেন মার্কাস থুঁর। এবার কিন্তু বক্সের বাঁ দিক দিয়ে উঠে আবার ডান পায়ের শট। ৯৭ মিনিটে লেয়নডস্কির পেনাল্টি গোলটা তাই কোনও কাজে আসেনি। ম্যাচ তখন কার্যত শেষ।
কোয়ার্টার ফাইনালে ফ্রান্সের সামনে এখন ইংল্যান্ড। বেশ ভাল খেলছে। এখন পর্যন্ত অপরাজিত। ফ্রান্সকে জিততে হলে হারও ভাল খেলতে হবে। কারণ ইংল্যান্ড ডিফেন্স বেশ ভাল। আর পর পর দুবার বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হওয়া খুব কঠিন। প্রায় অসম্ভবও। ব্রাজিল হয়েছিল সেই মান্ধাতার আমলে। ১৯৫৮ এবং ১৯৬২। এখন ফুটবল অনেক কঠিন। প্রযুক্তির জন্য সব কিছু হাতের মুঠোয়। ফ্রান্সের কাজটা বেশ কঠিন। তবে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার মতো শক্তি তাদের আছে। সেটা হবে কি না তা সময়ই বলবে।