ফ্রান্স: শনিবার ফ্রান্সে ঐতিহ্যবাহী ব্যাঙ মেলা (Traditional Frog Fair) আয়োজিত হয়েছিল। সেখানে জীববৈচিত্র্য নষ্ট করার অভিযোগে সমাজকর্মীদের রোষানলে মেলার উদ্যোক্তা ও কর্মীরা। কারণ, বাস্তুতন্ত্রের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ প্রাণী ব্যাঙ, যারা পোকামাকড় খেয়ে, অন্য প্রাণীর খাদ্য হিসেবে, গর্ত করে মাটিতে বাতাস প্রবাহিত করে এবং ট্যাডপোল হিসেবে জল পরিষ্কার করে পরিবেশে ভারসাম্য রক্ষা করে। আর এই ব্যাঙের সংখ্যা ক্রমশ্য হ্রাস পাচ্ছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রের খবর।
সূত্রের খবর, ভিটেলে বছরের শেষ সপ্তাহের ওই মেলাতে (Annual Weekend Gathering) দর্শকরা বেশ কয়েক টন ব্যাঙের পা খায়। যেগুলি মূলত এশিয়া থেকে আমদানি করা হয়। ব্যাঙের পা ফ্রান্সে অন্যতম জনপ্রিয় খাবার। এটি সাধারণত রসুন দিয়ে মাখনে ভাজা করে খাওয়া হয়।
ফরাসি বেসরকারি সংস্থা রবিন দেস বোইসের শার্লট নিথার্ট জানিয়েছে, শুধুমাত্র এই ইভেন্টটির জন্য ৩,৫০,০০০ ব্যাঙ ধরা হয়েছে। বিশেষ করে ইন্দোনেশিয়া এবং তুরস্কে, যেখানে ব্যাঙের সংখ্যা ইতিমধ্যেই উদ্বেগজনকভাবে কমে গিয়েছে।
ভিটেলের কুইসেস ডি গ্রেনোইলেসের সভাপতি ড্যানিয়েল গিলেট জানিয়েছেন, এই মেলাটি ফ্রান্সের একটি অনন্য উৎসব। মেলাটির বয়স প্রায় ৫০ বছর। বিগত বছরগুলিতে একইভাবে উদযাপন হয়ে আসছে। এটিই প্রথমবার নয় যে ব্যাঙ খাওয়া হয়েছে।
আরও পড়ুন: Shabaash Feluda | Parambrata Chatterjee | ফেলুদা নস্টালজিয়া
প্রসঙ্গত, ব্যাঙের পা নিয়ে ইউরোপীয়দের চাহিদা দীর্ঘদিন ধরেই প্রাণীটিকে আরও বিপন্ন করে তুলেছে। ১৯৮০-এর দশক থেকেই ইউরোপের বন-বাদাড় থেকে এত বেশি পরিমাণে ব্যাঙ ধরা শুরু হয় যে, ইউরোপের অভ্যন্তরে ব্যাঙ বেচা-কেনার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে ইউরোপীয় ইউনিয়ন। তবে এরপর আইন অনুযায়ী, অন্যান্য দেশ থেকে ব্যাঙ আমদানি শুরু হয়।
সম্প্রতি একটি গবেসনার রিপোর্ট থেকে জানা গিয়েছে, প্রতিবছর পায়ের জন্য লক্ষ লক্ষ ব্যাঙ ধরা হয়। এবং এর ফলে ব্যাঙের বেশ কিছু প্রজাতি বিলুপ্ত হওয়ার সম্ভাবনা দেখা গিয়েছে।
জার্মান পরিবেশ সংরক্ষণকারী প্রতিষ্ঠান প্রো-ওয়াইল্ডলাইফের সহ-প্রতিষ্ঠাতা সান্দ্রা আলথার (Sandra Alther) জানান, পরিবেশ দূষণ, জলবায়ু পরিবর্তন এবং মারণাত্মক কাইট্রিড ফাঙ্গাসের কারণে উভচর প্রাণীরা মারাত্মকভাবে ক্ষতির শিকার হচ্ছে। এর ওপর, ইউরোপীয় ইউনিয়নের অন্তর্গত দেশগুলিতে ব্যাঙের পায়ের চাহিদার জন্য সারাবিশ্বে বুনো ব্যাঙের পরিমাণ কমছে। অথচ আইন অনুযায়ী বুনো ব্যাঙ ইউরোপীয় ইউনিয়নের অন্তর্গত ভূখণ্ডে সুরক্ষিত। কিন্তু তা মানা হচ্ছে না। তাই বুনো ব্যাঙদের অস্তিত্ব রক্ষার জন্য আমদানি বন্ধ করার ডাক দিয়েছেন তিনি।