skip to content
Sunday, June 16, 2024

skip to content
Homeচতুর্থ স্তম্ভচতুর্থ স্তম্ভ : খাই খাই

চতুর্থ স্তম্ভ : খাই খাই

Follow Us :

খাই খাই কর কেন, এস বস আহারে-

খাওয়াব আজব খাওয়া, ভোজ কয় যাহারে ।

যত কিছু খাওয়া লেখে বাঙালির ভাষাতে,

জড় করে আনি সব, থাকো সেই আশাতে ।

ডাল ভাত তরকারি ফলমূল শস্য,

আমিষ ও নিরামিষ, চর্ব্য ও চোষ্য,

রুটি লুচি, ভাজাভুজি, টক ঝাল মিষ্টি,

ময়রা ও পাচকের যত কিছু সৃষ্টি,

আর যাহা খায় লোকে স্বদেশে ও বিদেশে-

খুঁজে পেতে আনি খেতে- নয় বড় সিধে সে!

জল খায়, দুধ খায়, খায় যত পানীয়,

জ্যাঠাছেলে বিড়ি খায়, কান ধরে টানিও।

ফল বিনা চিঁড়ে দৈ, ফলাহার হয় তা,

জলযোগে জল খাওয়া শুধু জল নয় তা ।

ব্যাঙ খায় ফরাসিরা (খেতে নয় মন্দ),

বার্মার ‘ঙাম্পি’তে বাপরে কি গন্ধ !

মাদ্রাজি ঝাল খেলে জ্বলে যায় কণ্ঠ,

জাপানেতে খায় নাকি ফড়িঙের ঘণ্ট!

আরশোলা মুখে দিয়ে সুখে খায় চীনারা,

কত কী যে খায় লোকে, নাহি তার কিনারা ।

আজ খাওয়া নিয়ে কথা। খিদে হল মানুষের বেসিক ইন্সটিংক্ট, প্রতিদিন পাবে, নিয়ম করেই পাবে। বিশ্বজোড়া কত খাবারের সমাহার, কত খাবার, কত বাহারি নাম, কত হোটেল, রেস্তঁরা, তাদের উর্দি পরা শেফ, লোভনীয় সব পদ। তাই নিয়ে কত বই, কত লেখা, কত রেসিপির বই, ইউটিউব ভিডিও, টিভি শো, রিয়েলিটি শো, সিনেমা।

আরও পড়ুন : গোয়ায় ঘাসফুলের কোর্টে লিয়েন্ডারের নতুন ম্যাচ, তৃণমূল বলছে ‘খেলা হবে’

ঝলমলে সে সব রেস্তঁরার মধ্যে, উজ্বল পোশাক পরা ছিপছিপে বা মোটা মহিলা, কম খায় বা প্রচুর খায় এমন পুরুষ, বাচ্চাদের সামনে মনপসন্দ আইসক্রিম, খাওয়া দাওয়া নিয়ে এক বিরাট শিল্প, অর্থনীতি। রোজকার বেশাতিতে যা কেনা হয়, তার ৬০ কী ৭০ শতাংশই তো খাবার, মশলা, তেল ঘি, মাখন। রাস্তায় চলতে বিলবোর্ডে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় থেকে অমিতাভ বচ্চনের ছবি, খাবারের বিজ্ঞাপণ। কত্ত ডায়াটিসিয়ান, কী খাবেন, কতটা খাবেন নিয়ে কত আলাপ আলোচনা, দিনের ক্যালরি ইনটেক মাপার জন্য মোবাইল অ্যাপ, বেশি খেলে কত ওষুধ, চিকিৎসা, ডাক্তার, হাসপাতাল। রাস্তার পাশে পাইস হোটেল থেকে রোলের দোকান, খোমচাওয়ালা থেকে ফুচকা চুরমুর।

তারপরেও বিশ্বজুড়ে খিদে, অসম্ভব খিদে। পৃথিবীর এক তৃতীয়াংশ জনসংখ্যার খিদে মেটে না, একপেট জল খেয়ে তাকিয়ে দেখে বিলবোর্ড, সেখানে মুরগির ঠ্যাং, এগ স্যান্ডুইচ বা টু মিনিটস ন্যুডল, অভুক্ত বাচ্চা ভাবে দু’মিনিট কেন? সে তো দু ঘন্টা অপেক্ষা করতে রাজি, কিন্তু তার পাতে আসে না সপসপে ন্যুডলস, যা তৈরি হয় দু মিনিটেই। কোনও হিসেব নেই, কেউ এ হিসেব নেবে না, নিলেও লিখবে না, তবুও বলি আমাদের কোলকাতায় তিন, চার বা পাঁচ সিতারা হোটেলের জমকালো রেস্তঁরা, কলকাতার বিভিন্ন অঞ্চলে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা ফাইন ডাইনিং রেস্তঁরায় এক দিনে, হ্যাঁ এক দিনে যত টাকার খাওয়া হয়, সেই টাকায় কলকাতার প্রত্যেকটা মানুষ, পেটপুরে ডালভাত খেতে পারবে, তাকানোর ইচ্ছেই হবে না ওই অভিনেতার দিকে, যাঁর হাতে ইনস্টান্ট কষা মাংসের বিজ্ঞাপণ, যিনি বিলবোর্ডে ঝুলছেন, কারণ পেট ভরে গেলে ঘুম পায়।

সেই বিলবোর্ডকে প্রাসঙ্গিক রাখতে হলে ক্ষুধাকে বরকরার রাখতে হবে, চতুর্দিকে খিদেওলা মানুষ চাই, চাহিদা চাই, খাবারের চাহিদা, তাহলেই তো প্রথমে ভাতের স্বপ্ন, সেই স্বপ্ন মাথায় গেঁথে গেলে ঘি ভাত পোলাও, বিরিয়ানি, দমপক্ত বিরিয়ানি, আরও আরও আরও চাহিদা।

খিদের মর্ম বোঝাও, একবার বুঝলে সারা জীবন চাহিদা বরকরার। শোনেন না, জুহু বিচে কেবল জল খেয়ে স্ট্রাগল করা অভিনেতার কথা? সে আর জীবনে খিদের ধার কাছ মাড়াতে চাইবে না, সে গরম ভাত থেকে পাস্তা, পিৎজা, বিরিয়ানিতে চলে গেছে। খিদে এমনই এক জিনিস, যা মানুষকে আপোস শেখায়, আপোসের প্রথম পাঠশালার নামই হল ক্ষুধা। সেই হাঙ্গার, ক্ষুধা, খিদেকে নিয়ে দু ধরণের ব্যবসা চলে সারা পৃথিবীতে। প্রথমটা হল খাবার, খাদ্যদ্রব্য বিক্রি। দ্বিতীয়টা হল খাবার পাইয়ে দেব, খাবারের যোগান দেব, দু’বেলা পেট পুরে খাবারে প্রতিশ্রুতির ব্যবসা, সোজা বাংলায় যাকে রাজনীতি বলে।

আরও পড়ুন : রাজনীতির মঞ্চ থেকেই টেনিসকে বিদায় লিয়েন্ডার পেজের

ক্ষিদে না থাকলে পটলা ব্যানার ধরে ঠায় দাঁড়িয়ে থাকবে না, খিদে না পেলে হারাধন মাইকে স্লোগান দিতে দিতে ক্লান্ত হবে না, খিদের কথা মনে না এলে আসলাম দল বেঁধে গিয়ে বিরোধী দলের কর্মীকে পেটাবে না, খিদে না পেলে মিতা, আয়েশা, কমলারা হাড়কাটা গলিতে সার দিয়ে দাঁড়াবে না। খাবারের প্রতিশ্রুতির সঙ্গে রাজনীতির সম্পর্ক এটাই, ঠিক সেই কারণেই স্বাধীনতার পর থেকে, প্রত্যেক রাজনৈতিক দল, নেতা আর সংগঠন গরম ভাতের স্বপ্ন দেখিয়েছে, রুটি আর ডালের স্বপ্ন দেখিয়েছে, গরিবি হাঠাও, মানে কাল থেকে ওহে জনগণ তোমরা পেট পুরে খেতে পাবে, মিত্রোঁ হরেক কে খাতে মে পন্দরা পন্দরা লাখ আ যায়েঙ্গে, মানে ভাইসকল ভোটটি দিলেই তোমার পেট ভর্তি।

যত খিদে তত বড় মিছিল, যত খিদে তত বেশি ক্যাডার, যত খিদে তত জয়জয়কার। দুনিয়াজোড়া সেই খিদের একটা হিসেবও হয়, তাকে হাঙ্গার ইনডেক্স বলে, আমার দেশে কতলোক খেতে পায় না, কত মানুষ অভুক্ত থাকে, তার হদিস সেখানে পাওয়া যায়। সেই হিসেবে বলা হয়েছে, বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ক্ষুধার যে তালিকা সেই তালিকায় আমরা ১০১ নম্বরে, হ্যাঁ ১১৬ টা দেশের তালিকায় আমরা ১০১। দুষ্টু লোকজন ইতিমধ্যেই জানিয়ে দিয়েছেন যে, আমাদের বহু আগে ৯২ নম্বরে আমাদের পয়লা দুশমন পাকিস্থান আছে, তারও আগে ৭৬ নম্বরে আমাদের পড়শি নেপাল আর বাংলাদেশের নাম আছে, ৭১ নম্বরে মায়নামার আর ৬৫ নম্বরে শ্রীলঙ্কার নাম আছে, দুষ্টু লোকজন এটা বলছে না যে আমাদের মহান দেশ ভারত বর্ষের পরে, আরও ১৫ টা বড় বড় দেশের নাম আছে,পাপুয়া নিউ গিনি, আফগানিস্থান, নাইজেরিয়া, কঙ্গো, মোজাম্বিক আছে। তারও পরে সিয়েরা লিয়ঁ, টিমর লেস্টের নাম আছে।

আপনি নাম শোনেন নি? তাতে কী? ওনারাও ভারতবর্ষের নাম শোনেনি, তারও পরে গিনি, গিনি বাসু, উগান্ডা, জাম্বিয়ার নাম আছে। যদিও এই সব দেশের কোনও রাষ্ট্রপ্রধান নিজের ব্যক্তিগত বিমানে চেপে দেশ ঘুরতে বের হন না, পকেটে ম ব্লাঁ পেন কিম্বা কার্তিয়েরের চশমা পরেন না, মহার্ঘ মাশরুমে লাঞ্চ করেন না, তাতে কি? তবুও তারা আমাদের পেছনে তো।

হাঙ্গার ইনডেক্সে আমাদের আগে ১০০ টা দেশ আছে? বেশ তো, কিন্তু পেছনেও তো ১৫ টা দেশ আছে, সেটা দুষ্টু লোকজন একবারও বলছে না। তারপর মোদিজী এবং মোদিজীর সরকার বলে দিয়েছেন সাফ, যে পদ্ধতিতে এই হিসেব করা হয়েছে, তা একদম ভুল। আপনি খেতে বসবেন, পাতে ইলিশ মাছের মাথা দিয়ে কচু শাক, অরহড় ডাল ঘি দিয়ে, বেগুন আলু ভাজা, শেষে ভেটকি সর্ষে দিয়ে, তারও পরে টমেটোর চাটনি। খেতে বসার আগে নাকি ফোন করেছে, খিদে পাচ্ছে? আপনি বলেছেন হ্যাঁ। ব্যস, ভারত ১০১ নম্বরে। আর বাংলাদেশের মানুষ খেয়ে দেয়ে যখন খড়কে কাঠি দিয়ে দাঁত খুঁটছে, তখন ফোন করেছে, আপনি কি ক্ষুধার্ত? তারা বলেছে না, অতএব তারা ৭৬ এ।

এইভাবে ভারতকে বদনাম করা হচ্ছে, মোদিজীর সরকার সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, গণতন্ত্রতেও তাঁর সরকার অন্যতম, খাদ্যেও অন্যতম, কেবল হিন্দুদের উপর রাগের কারণেই তাদেরকে ছোট করে দেখানোর জন্য, ভারতবর্ষকে ১০১ নম্বরে রাখা হয়েছে। তারপর ধরুন যে ডায়েট করছে, তাকে জিজ্ঞেস করা হয়েছে, ভাই খিদে পাচ্ছে? যে সেদিন পিৎজা পায়নি বলে না খেয়েই বসে আছে, সুইগির ডেলিভারি বয় কখন আসবে, তাকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছে ভাই, খিদে পেয়েছে। এসবের কোনও মানে হয়?

আরও পড়ুন : কোভিড বিধি একমাস বাড়লেও রেঁস্তোরা-সিনেমা হলকে একগুচ্ছ ছাড়

আমাদের দেশের অন্নদাতারা পথে, মানে অন্নদাতাদের কাজ নেই, খাবার অভাবই নেই। কেবল কিছু দুষ্টু লোকজন, দেশের বদনাম করতে চায়। ফ্রানজ কাফকার দ্য হাঙ্গার আর্টিস্ট গল্পটার কথা মনে পড়ে যাচ্ছে, যে গল্পের নায়ক স্বেচ্ছায় একটা খাঁচায় বসে থাকতো, যে খাঁচাতে কেবল একটা ঘড়ি আর কিছু খড় থাকতো, মানুষজন বাইরে থেকে দেখতো কতক্ষণ, কতদিন সে না খেয়ে থাকবে, কয়েকজন পাহারা দিত, যাতে সে লুকিয়ে খেয়ে না ফেলে, সেই হাঙ্গার আর্টিস্টকে দেখতে আসত দলে দলে লোকজন, আমাদের দেশের মানুষজন সেই হাঙ্গার আর্টিস্ট, ক্ষুধা শিল্পী, তারা না খেয়ে বসে আছে, মোদিজী বার বার করে বলছেন, একে খিদে ভাববেন না, হাঙ্গার ভাববেন না, এরা প্রত্যেকেই ক্ষুধা শিল্পী, হাঙ্গার আর্টিস্ট। গুনবেন তো গুনুন আদানি আম্বানি, টাটা বিড়লা ডালমিয়া গোয়েঙ্কাদের, গুণতেও পারেন নীরব মোদী, মেহুল চোকসিকে, তারাও তো আদতে ভারতীয়, গুণে দেখুন তারা কেউ না খেয়ে বসে নেই, তাদের পেট ভর্তি, তাদের খিদে নেই।

RELATED ARTICLES

Most Popular

Video thumbnail
BJP | NDA-কে চাপে রাখতে, টিডিপির পাশে INDIA ! স্পিকার পদে বেসামাল বিজেপি?
00:00
Video thumbnail
N. Chandrababu Naidu | টিডিপির জোড়া শর্ত, বেসামাল বিজেপি এনডিএ ছাড়বেন চন্দ্রবাবু
00:00
Video thumbnail
Suvendu Adhikari | মমতার জন্য বন্ধ রাজভবনের দরজা জানিয়ে দিলেন শুভেন্দু
00:00
Video thumbnail
Election Commission | মোবাইলে আসছে ওটিপি নিয়ন্ত্রণ হচ্ছে ইভিএম, এভাবেই কি জিতল NDA? সত্যিটা কী?
00:00
Video thumbnail
Election Commission | মোবাইল ফোনে খুলছে ইভিএম! সবথেকে বড় 'ভোট-দুর্নীতিতে', কী বলবে নির্বাচন কমিশন?
00:00
Video thumbnail
Belgharia News | বেলঘরিয়ার ব্যবসায়ী কে জেল থেকেই বারবার ফোন, কী দাবি কুখ্যাত দুষ্কৃতির?
00:00
Video thumbnail
TMC | CPIM | বামশিবিরে রামধাক্কা, ৪০ বছর দল করে সিপিএম থেকে তৃণমূলে
00:00
Video thumbnail
Abhishek Banerjee | অপারেশন শেষ, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় কেমন আছেন?
00:00
Video thumbnail
Suvendu Adhikari | আজও রাজভবনের গেটে শুভেন্দু অধিকারী, ভেতরে ঢুকতে পারবেন?
00:00
Video thumbnail
EVM | Rahul Gandhi | EVM হ্যাকিং? FIR হতে চলেছে? দেখুন চাঞ্চল্যকর ভিডিও
00:00