skip to content
Thursday, July 4, 2024

skip to content
Homeচতুর্থ স্তম্ভচতুর্থ স্তম্ভ: ধর্ষকের জন্য জেড সিকিউরিটি, কেন?

চতুর্থ স্তম্ভ: ধর্ষকের জন্য জেড সিকিউরিটি, কেন?

Follow Us :

২০২০, ২ অক্টোবর বলেছিলাম, ‘‘হ্যামলেট, অ্যাক্ট ওয়ান, সিন ফোর, মার্সিলাস বলছে, ‘সামথিং ইজ রটন ইন দ্য স্টেট অফ ডেনমার্ক’। সেই কথা মনে পড়ে গেল৷ কিছু একটা পুড়ছে৷ গন্ধ পাচ্ছেন? পোড়া মাংসের গন্ধ? ক্রমশ পেট্রোল ঢেলে তাড়াতাড়ি একটা দেহকে চুপিসাড়ে পুড়িয়ে বাড়ি ফিরে যাবে, রাষ্ট্রীয় ডালকুত্তার দল।
কী পুড়ছে? জানি না। ওই তো আগুন, কিসের আগুন? জানি না। আপনারা এখানে কেন? আইন শৃঙ্খলা দেখার জন্য, তাহলে ওখানে আগুন কেন? জানি না। আপনারা কাকে এনেছেন? আমরা কাউকে আনিনি। তাহলে ওটা কী? কোনটা? ওই যে আগুন? জানি না। সাংবাদিক এতক্ষণে ঘুরে দাঁড়ালেন৷ ক্যামেরা দিকে মুখ নিয়ে গিয়ে বললেন, ওখানে ধর্ষিতা হাথরস নির্যাতিতার দেহ পুড়ছে।
এ এক নতুন ন্যাকামি৷ ধর্ষণ হবে, করবে কতগুলো জানোয়ার৷ আর তার নাম বলা যাবে না৷ তাতে নাকি মহামান্য সুপ্রিম কোর্ট জানিয়েছেন, মেয়েটি তাঁর পরিবারের সম্ভ্রম হানি হবে৷ কুকুরে কামড়ানো মানুষের নাম জানা যাবে না৷ জানলেও বলা যাবে না৷ এটাই নির্দেশ৷ তাই হোক৷ বাল্মিকী সম্প্রদায়ের এই মেয়েটিকে আমরা সীতা বাল্মিকী বলেই ডাকি৷ এই রাম রাজ্যে, নামটাও মানানসই। তো সেই সাংবাদিক বলতে থাকলেন, কেমন করে কোথায়, কবে, কতজন মিলে ধর্ষণ করেছিল, সীতা বাল্মিকী  কে? কেমন করে টানা ১৫ দিন লড়াই চালানোর পর সীতা বাল্মিকী  মারা গিয়েছে? কেমন করে তাঁর বাবা মার হাতে মৃতদেহ না দিয়ে মাঝরাতে সীতার দেহ জালিয়ে দিচ্ছে, যোগীজির পুলিশ। এসব আপনারা জানেন, প্রতিটা রেপ একবার হয় ঘটনাস্থলে, তারপর তা হতেই থাকে, কাগজের পাতায় পাতায়, সম্পূর্ণ বিবরণ, আঁখো দেখা বিবরণ, আবার নিরাভরণ হয় ধর্ষিতার শরীর, জ্যোতি, নিরাভরণ হয়। প্রিয়াঙ্কাও, পরনের পোশাক খুলে নেওয়া হচ্ছে মনীষার, আরও ডিটেইল চাই, আরও নিঁখুত বর্ণনা। এবং সার বক্তব্য একটাই, ওইখানে সীতার ধর্ষণ হয়েছিল, ওইখানে সীতার লাশ পুড়ছে, ওইখান থেকেই আধপোড়া মাংসের গন্ধ পাওয়া যাচ্ছে, দেহ পুড়ছে সীতার, আগুন জ্বলছে।
আমি অস্বীকার করছি মেনে নিতে, আমি প্রতিবাদ করছি এই অর্ধসত্যের, আমি জানি অর্ধেক জানানো হচ্ছে, লুকিয়ে ফেলার চেষ্টা চলছে বাকি সমস্ত সত্যি৷ ওখানে আরও অনেক কিছু পুড়ছে। হ্যাঁ মাননীয় ধর্মাবতার, ওখানে আরও অনেক কিছু পুড়ছে৷ ওখানে সংবিধান পুড়ছে৷ শুনতে পাচ্ছেন না? উই দ্য পিপল অফ ইন্ডিয়ার আর্তচিৎকার? ওখানে সংবিধানের মৌলিক অধিকার দাউ দাউ করে পুড়ছে৷ আর্টিকল ১৪, আর্টিকল ১৫ জ্বলছে৷ জ্বলছে মানবাধিকার, হিউম্যান রাইটস চার্টার৷ পুড়ে ছাই হচ্ছে গণতন্ত্র৷ পোড়া গন্ধ পাচ্ছি আদালতের৷ পুলিশের, প্রশাসনের, নাকে আসছে দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর দেহ থেকে বেরোনো পোড়া গন্ধ৷ বুকে হাত দিয়ে দেখেছি আমাদের বিবেক সেখানে নেই৷ ওই আগুনেই সীতার ধর্ষিতা দেহের সঙ্গেই তাও পুড়ছে৷ গোটা দেশ পুড়ছে।
উত্তরপ্রদেশের সেই হাথরসে গণতন্ত্রের উৎসব চলছে৷ নির্বাচন হচ্ছে। নির্বাচনে হাজির আমাদের মিথ্যেবাদী প্রধানমন্ত্রী৷ তিনি বলছেন, আগে মহিলারা সন্ধ্যেয় ঘর থেকে বের হতে ভয় পেত৷ যোগীজির জমানায় মহিলারা সুরক্ষা পেয়েছেন৷ বলছেন, বড় গলায় বলছেন। ওদিকে হরিয়ানার বিজেপি সরকার দুটো খুন এবং ধর্ষণের মামলায়, না অভিযুক্ত নন, আদালত তাকে দোষী হিসেবে চিহ্নিত করেছে৷ তিনি দুটো খুনের ষড়যন্ত্রে জড়িত ছিলেন৷ ধর্ষণের মামলায় দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন৷ সেই ডেরা সচ্চা সওদার বাবা রাম রহিমকে, জেড প্লাস সিকিউরিটির ব্যবস্থা করেছে৷ পঞ্জাব নির্বাচনের প্রচার চলাকালীন তাঁকে প্যারোলে ছাড়া হয়৷ ওই ৭ ফেব্রুয়ারিতেই তাঁকে জেড প্লাস সিকিউরিটি দেওয়া হয়৷
শুনে আঁতকে উঠছেন তো, হ্যাঁ এটাই সত্যি৷ বিজেপি সরকার, দল, প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী একদিকে নারী সুরক্ষার কথা বলে ভোট ভিক্ষা করছেন, অন্যদিকে এক ধর্ষক খুনিকে প্যারোলে শুধু ছাড়ছেন না, তাঁর জেড প্লাস সিকিউরিটিরও বন্দোবস্ত করছেন। এটাই বিজেপি। ফলও হাতে নাতে, জেল থেকে বেরিয়েই বাবা রাম রহিম জানিয়ে দিয়েছে, ডেরা সচ্চা সওদার শিষ্যরা নির্বাচনে, বিজেপি, অকালি দল আর বিক্ষুব্ধ কংগ্রেসীদের ভোট দেবে৷ কেবল ভোট পাবার জন্য এক জঘন্য অপরাধী প্যারোল পেল৷ জেড প্লাস সিকিউরিটি পেল। এই রামরহিম বাবার, কাহিনিটা একটু মনে করিয়ে দিই।
ডেরা সচ্চা সওদা শুরু হয়েছিল ধার্মিক, সামাজিক কিছু লক্ষ্য নিয়ে৷ মূলত গরিব নীচু জাতের হরিয়ানা, পঞ্জাবের মানুষজন এই সংগঠনে তাঁদের আইডেনটিটি খুঁজে পান৷ ১৯৪৮-এর ২৯ এপ্রিল মাস্তানা বালোচিস্তানি এই সংগঠন তৈরি করেন৷ যা খুব তাড়াতাড়ি জনপ্রিয় হয়ে ওঠে৷ ১৮ এপ্রিল ১৯৬০৷ বাবা বালোচিস্তানির মৃত্যুর পরে সংগঠনের দায়িত্ব নেন বাবা সতনাম সিং৷ ১৯৯০ সালে প্রায় হঠাৎ করেই তিনি অবসরের ঘোষণা করেন৷ আরও অবাক করে সংগঠনের দায়িত্ব দেন মাত্র ২৩ বছর বয়সী গুরমিত সিংকে৷ তাঁর নাম হয় হুজুর মহারাজ গুরমিত রাম রহিম৷
রাম রহিম দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই ডেরা সচ্চা সওদা বেড়ে উঠতে থাকে৷ তাদের রাজনৈতিক প্রভাব বাড়তে থাকে৷ ক্যাপ্টেন অমরিন্দ্র সিং থেকে নরেন্দ্র মোদী বিভিন্ন সময়ে তাঁর সঙ্গে দেখা করেছেন৷ তাঁর প্রশংসা করেছেন৷ সম্পদ বাড়তে থাকে হু হু করে। এক নারী বাহিনী তৈরি হয়, যারা রাম রহিমকে ঘিরে থাকত। বিভিন্ন মিথ তৈরি হতে থাকে, অলৌকিক গল্প ছড়াতে থাকে। এরই মধ্যে ২০০২ সালে, এক মহিলা ভক্ত অভিযোগ জানান যে তাঁকে ধর্ষণ করা হত, অত্যাচার করা হত রোজ৷ তিনি জানান বাবার ডেরায় এরকম আরও বহু মহিলা তাঁর মতনই ধর্ষিতা, নিপীড়নের শিকার।
তাঁর চিঠি ছাপা হয়, সিরসা থেকে প্রকাশিত এক পত্রিকা পুরা সচ এ৷ সাংবাদিক, সম্পাদক রাম চন্দর ছত্রপতি এ নিয়ে লিখতে থাকেন৷ সিবিআই তদন্ত শুরু হয়৷ এরই মধ্যে খুন হন সাংবাদিক রাম চন্দর ছত্রপতি৷ সিবিআই গ্রেফতার করে রাম রহিম বাবাকে, বিপুল সম্পত্তি, ভোগ বিলাসের বিরাট ছবি সামনে আসে৷ ১২ বছর মামলা চলার পরে, ২০১৭ সালের ২৫ অগস্ট, সিবিআই রায়দানের দিন ঠিক করে, সেদিন প্রায় ৪০০ গাড়ির কনভয়ে রাম রহিম রোহতক জেল থেকে পঞ্চকুলা সিবিআই আদালতে আসে, ধর্ষণের মামলায় তাঁকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়, সেদিন দাঙ্গা বাঁধায় তার সমর্থকেরা৷ ৩৬ জন মারা যায়৷ একে ৪৭ থেকে রিভলবার, পিস্তল ব্যবহার হয়৷ পুলিশ তার কিছু উদ্ধারও করে৷ অসংখ্য বাস, স্কুল ভ্যান, সংবাদ মাধ্যমের ও বি ভ্যান জ্বালানো হয়, দোকান পোড়ে। পরে হিসেব বলছে ১০০ কোটির বেশি ক্ষয়ক্ষতি হয়েছিল সেদিন৷
রাম রহিমকে সড়কপথে নয়, হেলিকপ্টারের করে রোহতক জেলে নিয়ে যাওয়া হয়৷ জানুয়ারি ২০১৯-এ তাঁকে সাংবাদিক রাম চন্দর ছত্রপতির খুনের ষড়যন্ত্রেও অভিযুক্ত বলে রায় দেয় আদালত৷ ২০ বছরের জেল হয়। সেই খুনী ধর্ষক রাম রহিম, আজ জেড প্লাস সিকিউরিটি পাচ্ছে৷ দিচ্ছে বিজেপি সরকার। কারা পায় জেড প্লাস সিকিউরিটি৷ এ বাংলার সবথেকে বড় বিজেপি নেতা, কাঁথির খোকাবাবুওও পান না৷ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, সোনিয়া গান্ধী, রাহুল গান্ধী, অমিত শাহ, রাজনাথ সিংয়ের মতো মোট ৪০/৪৫ জন এই জেড প্লাস সিকিউরিটি পায়। জেড প্লাস সিকিউরিটি মানে? ১০ জন এর বেশি এনএসজি কমান্ডো সহ মোট ৫৫ জনের সুরক্ষা বলয়৷ খরচ? আজকের দিনে ২৪ লক্ষ টাকা প্রতি মাসে৷ মানে ৮০ হাজার টাকা প্রতিদিন৷ কার পয়সা? আমার আপনার ট্যাক্সের পয়সা। কার জন্য খরচ হচ্ছে? একজন ধর্ষণের দায়ে হত্যার ষড়যন্ত্রে সামিল হবার দায়ে দোষী সাব্যস্ত হওয়া মানুষের জন্য, ধর্ষক খুনি রাম রহমের জন্য৷ চিন্তাও করা যায়?
যে দলের নেতা বেটি বঁচাও, বেটি পড়াও বলে জনসভায় হাঁক পাড়েন, যে প্রধানমন্ত্রী প্রত্যেক জনসভায় নারী সুরক্ষার কথা বলে, সেই সরকার কেবল, কেবল ভোট পাওয়ার জন্য এতটা নীচুতে নামতে পারে, এটাই বিজেপি। কেবল জেড প্লাস সিকিউরিটি দেওয়া নয়৷ তাঁকে প্যারোলেও ছাড়া হয়েছে৷ বলা হয়েছে, তিনি নাকি তেমন কোনও ঘৃণ্য অপরাধী নয়৷ ওদিকে এক জেসুইট ফাদার, ৮৩ বছরের এক বৃদ্ধ, অসুস্থ, তাঁর বিরুদ্ধে কোনও অভিযোগ প্রমাণিতও নয়, ‘আমরা একসঙ্গে গান গাইব, খাঁচায় বন্দি পাখিও গান গায়’, এই ক’টা লাইন তিনি শেষ লিখেছিলেন, রোমান ক্যাথলিক চার্চ এর ফাদার স্ট্যান স্বামী৷ তারপর আর কিছু লেখেননি৷ তাঁকে খুন করা হয়েছে৷ ঠান্ডা মাথায় পরিকল্পিত খুন৷ রাষ্ট্রের নেতৃত্বে জহ্লাদেরা তাঁকে খুন করল৷ কারণ সে ছিল অবাধ্য৷ পোষ মানা অর্ণব গোস্বামী বা সম্বিত পাত্র নয়।
স্টানিস্লাস লরডুস্বামী, কেউ স্ট্যান সাহেব বলে ডাকত৷ কেউ কেউ আবার স্বামীজি বলেও ডাকত৷ সবার ডাকে সাড়া দিতেন৷ আর মুখে লেগে থাকতো এক চিলতে হাসি৷ ২০১৯ এ ভারত সেবা হলে এক সেমিনারে এসেছিলেন, মানবাধিকার কর্মীদের সভা, পেছনের সারিতে বসে একমনে শুনছিলেন অন্যদের কথা৷ তখন বয়স ৮২। ছিপছিপে, রোগা চেহারার এই অশক্ত মানুষটা নাকি দেশের পক্ষে বিপদজনক৷ আদালত যাকে খুন আর ধর্ষণের দায়ে দোষী বলে ২০ বছরের জেলে পাঠিয়েছে, যারা কোটি কোটি টাকা মেরে দিয়ে ব্যাঙ্ক লুঠ করে বিদেশে চলে গেল, তারা দেশের পক্ষে বিপদজনক নয়৷ এই অশক্ত চেহারার ৮৪ বছর বয়সী জেসুইট ফাদার স্ট্যান স্বামী কেন দেশের পক্ষে বিপদজনক? নরেন্দ্র মোদী অধ্যাপিকা সোমা সেন, সাংবাদিক গৌতম নভলাখা, সমাজকর্মী আনন্দ তেলতুম্বেকে বেশি বিপদজনম মনে করেন৷ এক খুনি, ধর্ষক, ফোর টোয়েন্টি রাম রহম তাঁর কাছে ধর্মগুরু, তাঁকে প্যারোল দেওয়া হয়, জেড প্লাস সিকিউরিটি দেওয়া হয়।
RELATED ARTICLES

Most Popular

Video thumbnail
Aajke | জায়গায় জায়গায় এই জেসিবি, শেখ শাহজাহান, দেবাশিসদের উত্থান
00:00
Video thumbnail
Bratya Basu | অবসরের পর মিলবে বাড়তি ২ লক্ষ টাকা! বড় ঘোষণা রাজ্যে
00:00
Video thumbnail
RSS | BJP News | এবার RSS-এর হাতে বঙ্গ বিজেপির রাশ? দলবদলু নিয়ে কড়া সিদ্ধান্ত!
00:00
Video thumbnail
Maharashtra News | মহারাষ্ট্রে জিতল ইন্ডিয়া, হারল এনডিএ, কীভাবে হল দেখুন
00:00
Video thumbnail
N. Chandrababu Naidu | Modi | মোদির চিন্তা বাড়াচ্ছেন চন্দ্রবাবু নাইডু? দেখুন চাঞ্চল্যকর ভিডিও
00:00
Video thumbnail
Ghost News | রাত হলেই কান্নার শব্দ, কে ঘুরছে নুপূর পায়ে! আঁতকে ওঠার মত ভিডিও
00:00
Video thumbnail
Fourth Pillar | সংসদে দাঁড়িয়ে কাকে ইতিহাস পড়াচ্ছেন, মোদিজি?
00:00
Video thumbnail
Post of Governor | বাংলায় থাকবে না রাজ্যপাল পদ? জোরালো হচ্ছে দাবি!
02:19:22
Video thumbnail
Hathras | কোথায় লুকিয়ে ভোলে বাবা! দেখে নিন ভিডিও
03:48:23
Video thumbnail
Hathras | ভোলে বাবা'র সাম্রাজ্য কোথায় কোথায়, দেখুন চাঞ্চল্যকর ভিডিও
01:48:35