এমনিতে ইডি যে এখন সরকারের ভাতকাপড়ের দায় নেওয়া পোষ্য জীব তা নিয়ে তো কোনও সন্দেহ নেই। সিবিআই সম্পর্কে কথা বলতে গিয়ে সেই কবেই সুপ্রিম কোর্ট খাঁচার তোতাপাখি বলেছিল, কিন্তু ইডি তার থেকেও অনেক বেশি কার্যকরী দেখাই যাচ্ছে। আগেই ঠিক হয়ে যাচ্ছে কী করা হবে, প্রায় রঘু ডাকাতের মতো রাজ্যের বিজেপি নেতারা জানিয়েই দিচ্ছেন তোর ঘরে ইনকাম ট্যাক্স রেড করিয়ে দেব, সিবিআই পাঠাব, ইডি লেলিয়ে দেব, হচ্ছেও তাই। যে কোনও ভিজিলেন্স এজেন্সি সন্তর্পণে কাজ করে, ইডি সব্বাইকে জানিয়ে। একবার ধরলে মাসের পর মাস বছরের পর বছর জেলে পচিয়ে মারবে, বেল মিলবে না, এতটুকু প্রমাণও নেই কিন্তু জেলে থাকো, বের হবে সেদিন যেদিন উপর থেকে নির্দেশ আসবে তার আগে নয়। আর উপর থেকে নির্দেশ কবে আসবে? যাঁকে ধরা হয়েছে তিনি যদি ঘাড় ও মাথা নিচু করেন, সুড়ুৎ করে পদ্মফুল হাতে ধরেন, কিংবা নিদেনপক্ষে মুচলেকা দেন যে জেল থেকে বেরিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, রাহুল গান্ধীর গুষ্টির তুষ্টি করে দেব, তাহলে বেল মিলবে, আর ইডি আসবে না। এক জামিনে মুক্ত ইটিং ফায়ার ভমিটিং ফায়ার সাংবাদিককে দেখে সে ধারণা আরও শক্তপোক্ত হয়েছে। কিন্তু ইডি এই দেশের আইনের, প্রশাসনিক ব্যবস্থার অঙ্গ, বিজেপি তৈরি করেনি, ইউএপিএ থেকে এই সিবিআই, ইডি, বিভিন্ন কালা কানুন যা নিয়ে এখন বিরোধীরা ব্যতিব্যস্ত, সেসব তো তৈরি হয়েছিল কংগ্রেস আমলেই, মোদি–শাহ কেবল তার সুযোগ নিচ্ছেন মাত্র। এবং এই সব ভিজিলেন্স বডি, ইডি, সিবিআই, ইনকাম ট্যাক্স ইত্যাদি যেহেতু সাংবিধানিক সবুজ ঝান্ডা নিয়েই কাজ করে তাই তারা জেরা করতে চাইলে হাজিরা দিতে হবে বা বড়জোর আদালতে সেই সমনকে চ্যালেঞ্জ করা যায়। তারা আদতে সরকারের লেঠেল বাহিনী হিসেবেই কাজ করছে কিন্তু তাদের সঙ্গে লাঠি গুলি পিস্তল দিয়ে মোকাবিলা তো করা যায় না। এবং এটাও ঘটনা যে বিভিন্ন মামলায়, বিভিন্ন লোকজনের কাছ থেকে এই এজেন্সিগুলো বিরাট পরিমাণে টাকা, সোনা গয়না উদ্ধার করেছে, কাজেই দুর্নীতি একটা বিষয় তো বটেই। সেই ইডিই বিষয় আজকে, ইডি অভিযান, শাহজাহান এবং সাংবাদিক পেটানো।
এটা তো ঘটনাই যে আমাদের রাজ্যের শাসকদলের মধ্যে দুর্নীতি আছে, বিরাটভাবেই আছে। কিছুদিন আগে সাইকেলে মাছ বিক্রি করা মানুষের ব্যাঙ্কে যদি তিনশো চারশো কোটি টাকা থাকে তাহলে সেটা তো নিশ্চিতভাবেই দুর্নীতি। মন্ত্রীর বান্ধবীর বাড়ি থেকে যদি অজস্র জমির দলিল বের হয়, তোড়া তোড়া টাকা বের হয়, তাহলে তাকে তো দুর্নীতিই বলব। বালু থেকে ডাকু, পার্থ থেকে কল্যাণময়, ধরা পড়েছে এবং পড়েনি এমন দুর্নীতিবাজেরা তো তৃণমূলের নাম উজ্জ্বল করছে না। পাড়ায়, গ্রামে, মহল্লায় যে সব উচ্চিংড়ে নেতারা দামি স্করপিও আর বিদেশি মদে অভ্যস্ত হয়েছে, যাদের বাড়ি এই ক’ বছরে হয়েছে প্যালেস, তারা যে দুর্নীতিগ্রস্ত তা কি দল জানে না? জানে বইকী।
আরও পড়ুন: Aajke | ভিড় কবে ভোট হবে?
তাদেরই একজন এই শেখ শাহজাহান, সন্দেশখালি অঞ্চলে একসময়ে বাম আমলের উচ্চিংড়ে আজ হংসচঞ্চু হয়ে উঠেছে, এরকম দুর্নীতিবাজ কি ভূ-ভারতে আর নেই? অজস্র আছে, এ রাজ্যের বিরোধী দলনেতাকেই তো হাত বাড়িয়ে টাকা নিতে আমরা দেখেছি, সেখানে ইডি যায়নি, যাবে না। কিন্তু সন্দেশখালি গেছে, সেখানে ইডির অফিসারদের ওই শেখ শাহজাহানের দলবল আটকেছে, মারধর করেছে, ল্যাপটপ মোবাইল কেড়ে নিয়েছে, সেই খবর করতে যাওয়া সাংবাদিকদের পিটিয়েছে। সাংবাদিকরা এমনিতেই সফট টার্গেট আর এই শেখ শাহজাহানেরা সাংবাদিক পিটিয়ে এক চরম সুখ পায়, সব সরকারের সময়েই এই সাংবাদিক পেটানো কিন্তু ধারাবাহিকভাবেই চলে। আন্যার্কি আর কাকে বলে, কতগুলো গুন্ডা বদমাসের দখলে চলে গেছে ওই এলাকা, ওই এলাকা কেন আরও বেশ কিছু এলাকা। এক্কেবারেই পরিষ্কার নয় যে সরকার, রাজ্য সরকার তৃণমূল দল এইসব দুর্নীতিবাজ গুন্ডাদের দায় নিচ্ছে কেন? নির্বাচনের সময়ে এরাই মাসল ফোলায় বলে? নির্বাচনে তৃণমূল ভোট পায় কিসের জন্য? স্বাস্থ্যসাথী থেকে লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের জন্য নয়? গ্রামের রাস্তা ভালো হয়েছে, হাসপাতালে কিছু ওষুধ পাওয়া যাচ্ছে, স্কুলে মিড ডে মিল পৌঁছেছে, সরকারের মানুষজন দুয়ারে এসে হাজির হচ্ছেন, এগুলোই তো কারণ। তাহলে এই গুন্ডা পোষার কারণ কী? নাকি দুইয়ের সংমিশ্রণেই চলছে সরকার আর দল? আমরা আমাদের দর্শকদের জিজ্ঞেস করেছিলাম, এই যে বিভিন্ন অঞ্চলে দুর্নীতিবাজ গুন্ডা শেখ শাহজাহান ইত্যাদিদের রমরমা, তা কি তৃণমূল সরকারের অসংখ্য ভালো কাজকে ঢেকে দিচ্ছে না? এইসব দুর্নীতিগ্রস্ত নেতাদের দল থেকে তাড়িয়ে দেওয়া কি অসম্ভব? কেন পোষা হচ্ছে তাদের? শুনুন মানুষজন কী বলেছেন।
তৃণমূল সরকার বা দলের সবথেকে নড়বড়ে জায়গাটা হল দলের নেতাদের, তলার থেকে উপর সারির কর্মীদের দুর্নীতি। খেয়াল করে দেখুন হাজার একটা ভালো কাজ হচ্ছে, ইন ফ্যাক্ট বিরোধী দলগুলোর সরকারের কাজ নিয়ে প্রায় কিছু বলারই নেই, যত কথা সবটাই দলের বিভিন্ন সারির নেতা মন্ত্রী কর্মীদের দুর্নীতি নিয়েই। এই দুর্নীতিই আগামী দিনের নির্বাচনে সবথেকে বড় ইস্যু হয়ে দাঁড়াবে। এক দল যা মানুষের পাশে থাকার অঙ্গীকার নিয়ে পথ চলা শুরু করেছে সেই দলের মধ্যে এই শেখ শাহজাহান অ্যান্ড কোম্পানিরাই বিষবৃক্ষ, এদের উপড়ে ফেলতে না পারলে আগামী দিনে হাজার একটা ভালো কাজ করার পরেও দল আর সরকারকে একদিন এর খেসারত দিতেই হবে।