বাংলা নক আউট পর্যায়ে খেলতে নামবে। সামনে রঞ্জি ট্রফি জয়ের হাতছানি। সোমবার বাংলার তিন কর্তা আর কোচ অরুনলাল, অধিনায়ক অভিমুন্য ঈশ্বরণকে সি এ বি-মিডিয়া সেলের পাঠানো ছবিতে দেখলাম।
যে দল সাজানো হল, এই মুহুর্তে ফর্মের বিচারে সেরা দল নিশ্চয়। ঋদ্ধিমান সাহা, মহম্মদ শামিকে দলে রাখা হয়েছে। শামি জাতীয় দলে থাকায় বাংলার হয়ে গ্রুপ ম্যাচ খেলেননি। আর ব্যক্তিগত কারণে সাহাও নিজেকে সরিয়ে নিয়েছিলেন।
আরও পড়ুন: Exclusive Widdhiman: ‘আমার জন্য কাউকে কিছু করতে বলিনি কোনোদিন, নিজের যোগ্যতায় বিশ্বাসী’
![](https://kolkatatv.org/wp-content/uploads/2022/05/IMG-20220517-WA0005-300x157.jpg)
নির্বাচন কমিটির ছবি গুলো ভালো করে দেখছিলাম। সভাপতি অভিষেক ডালমিয়া। একপাশে সচিব স্নেহাশিস গঙ্গোপাধ্যায়। আর অন্য পাশে যুগ্ম সচিব দেবব্রত দাস। শেষ জনের উপস্থিতিতে এই ঋদ্ধিমান সাহাকে খেতাব জয়ের ভাবনায় দলে নেওয়া হল! আসলে ‘সাহা – বোরিয়া’ সোশ্যাল মিডিয়া বিতর্কে এই টাউন ক্লাবের কর্তার কিছু কটু কথা আবারও মনে পড়ছিল। উনি সেই বিতর্কে নিজেকে জড়িয়ে ছিলেন । কাউকে কাউকে হয়তো খুশি করতে ঋদ্ধিমানকে ‘দায়বদ্ধতাহীন’ এক ক্রিকেটার বলেছিলেন সেদিন প্রচার মাধ্যমের সামনে। সেই কর্তা মেনে নিলেন কি করে সাহার এই দলে জায়গা পাওয়া!
আমার কিছু প্রশ্ন রয়ে গেল, বাংলার নির্বাচকদের জন্য। বিশেষ করে এই টিমের চেয়ারম্যান শুভময় দাসের কাছে। আচ্ছা, জাতীয় নির্বাচন কমিটির চেয়ারম্যান চেতন শর্মা যদি ঋদ্ধিমানকে ফোন করে বলতে পারেন , টিম ম্যানেজমেন্ট আর তাঁকে একটি বিশেষ সিরিজের জন্য ভাবছে না-তাহলে শুভময় নিশ্চয়ই সেই রাস্তায় হেঁটেছেন। ঋদ্ধিমান সাহা বাংলার হয়ে গ্রুপ লিগে খেলবেন কিনা জানতে উনিই তো ফোনে প্রথম কথা বলেন।
এবার?
https://twitter.com/Jahid27/status/1525818103191351296?t=E4lgrmyMiOxkgcsAGkLoMA&s=19
যতো দূর জানি, আইপিএলে দুর্দান্ত ফর্মে থাকা ঋদ্ধিমানকে দল গড়ার আগে কেউ এবার ফোনে কথা বলেননি। বরঞ্চ শামিকে ফোন করা হয়েছিল। বাংলার এই ক্রিকেটারটি ১০ বছর খেলে ফেলেছেন আন্তর্জাতিক ক্রিকেট। সিনিয়র ক্রিকেটার। তাঁকে সময় বিশেষে সর্ব সমক্ষে অপমান করেন এক পদাধিকারী। কিন্তু না সভাপতি, না সচিব, নাহ- সিএবি’র বাকি কর্তারা-কেউ সেই কর্তার জবাবদিহি চাননি, সেই মন্তব্যের পর। আজ সেই কর্তার উপস্থিতিতে বাংলা দলে সাহাকে রাখা হল। সেই সিনিয়র ক্রিকেটারটি সততার সঙ্গে প্রমাণ করে দিয়েছেন, এক প্রচার মাধ্যমের প্রতিনিধি-তাঁর সঙ্গে যা যা করেছিলেন, তা ছিল নিয়ম বিরুদ্ধ। বোর্ড বাংলার সেই প্রচার মাধ্যমের প্রতিনিধিকে ২ বছরের জন্য ব্যান করেছে।
For his match-winning knock against #CSK, @Wriddhipops bagged the Player of the Match award. 👏 👏
Still on the 🔝 of the table…
GT won by 7 wickets.#TATAIPL | #CSKvGT | #CSKvsGT #IPL2022 #GTvsCSK #WhistlePodu #MSDhoni𓃵#Dhoni @gujarat_titans #Cricket pic.twitter.com/XZAyFda37W— शुभम श्रीवास्तव (@Mr_journalist16) May 16, 2022
এটা প্রমাণ করে, সততার সঙ্গে আপোষহীন লড়াই করলে জেতা যায়। তাতে কোনো ‘গড ফাদার’ দরকার হয় না। ঋদ্ধিমান সাহা আজ মাঠে লড়ে এগিয়ে চলা এক ক্রিকেটারের নাম। যিনি অন্যায় দেখলে প্রতিবাদ করতে পিছু হটার পাত্র নন।
ভাবছিলাম, ১০-১২ বছর আগে এমনটা হলে সি এ বি কর্তারা কি করতেন? তর্কের খাতিরে ধরে নিচ্ছি সাহা নন, সেই সময় সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় খেলছেন। বাংলার হয়ে অনেক সময় সৌরভ খেলেননি। জগমোহন ডালমিয়ার আমল। এই দেবব্রত দাসের মতন কেউ, না খেলার জন্য এসব কথা বলার সাহস পেতেন? নাকি এসব বলার জন্য কেউ কাউকে ধোঁয়া দিত? সব উত্তর হবে: না।
তাহলে কি এখন সিএবি এমন ভাবেই চলছে! মনে হয়। অন্য সব বিষয়ে, এই টাউন কর্তার বাংলার ক্রিকেটের জন্য নিবেদিত প্রাণ মানুষ পাওয়া দুষ্কর। তাহলে কোন সাপোর্ট সিস্টেম সেদিন তাঁকে সাহা নিয়ে এসব বলতে সাহস জুগিয়ে ছিল?
সচিব স্নেহাশিস গঙ্গোপাধ্যায় বলেছিলেন, সেই বিতর্কিত ইস্যুতে সৌরভের (নিজের ভাই, এখন বোর্ড সভাপতি) নাম না টেনে আনলে ভালো করতো ঋদ্ধিমান। কিন্তু প্রাক্তন এই রঞ্জি ক্রিকেটার (স্নেহাশিস) আজ সফল ব্যবসায়ী। তাই শেষে বলেছিলেন,ঋদ্ধিমান এমন এক ক্রিকেটার-তিনি চাইলেই বাংলা দলের হয়ে আবার খেলতে নামতে পারেন।
আমার সঙ্গে বিভিন্ন সময় ঋদ্ধিমানের কথা হয়।কথা বলে, বার বার বুঝেছি-বাংলার ক্রিকেট তাঁর কাছে সকলের আগে। সব প্লেয়ারদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখেন। উঠতি উইকেটকিপাররা পরামর্শ চাইলে, সঙ্গে সঙ্গে সাহায্য করেন। সামনে থেকে হোক ( পন্থকে নিজে থেকে যা বিভিন্ন সময় করেছেন), বা ফোনে কথা বলে হোক।
টানা আইপিএল খেলার ধকল থেকে ক্রিকেটারদের বাঁচাতে ঘরের মাঠে দক্ষিণ আফ্রিকা দল এলে, শামি বিশ্রাম পাবেন। অর্থাৎ বোর্ডকে রাজি না করাতে পারলে — বাংলা দলে শামির নাম জুড়ে গেলেও, খেলতে পারবেন না। ঋদ্ধিমান নিয়ে এমন কিছু ঘটবে না। তাই কি এই ইন্ট্রোভার্ট ঋদ্ধিমানকে না জিজ্ঞেস করেই, তাঁকে দলে রাখা হল।
Relieved that we'll now get two bites at the cherry as we book a spot in the Top 2! Happy to stay on till the end. @gujarat_titans #BeleiveInYourself 💪#SeasonOfFirsts #AavaDe #GTvsCSK pic.twitter.com/98JLd3BWw1
— Wriddhiman Saha (@Wriddhipops) May 15, 2022
ভাবছিলাম নিজেকে ঋদ্ধিমানের জায়গায় বসিয়ে। আইপিএলে যে ব্যাটিং আর কিপিং তিনি করে দেখাচ্ছেন, তাতে সেরাদের মধ্যে জায়গা করে নিয়েছেন। আচ্ছা, আমি (ঋদ্ধিমান) যদি বলি: সেদিন আমার ক্রিকেট নিয়ে যা যা বলেছিলেন সি এ বি’র পদাধিকারী – তাঁকে প্রচার মাধ্যমের সামনে ক্ষমা চাইতে হবে। তা হজম করতে পারবে সিএবি?
বিলক্ষণ বলতে পারি ঋদ্ধিমান এইসব বলবেন না। সকলের বিশ্বাস, তিনি এমন কড়া কথা বলতেই পারেন না। ঠিক তাই। তাই ওঁকে অনেক পরীক্ষা দিতে হয়। নানান অবিচারের শিকার হতে হয়। পাশে কাউকে পান না। বোরিয়া কাণ্ডে অবশ্য অনেকের সমর্থন পেয়েছেন । আবার অনেকে (এই বাংলারই) ওঁর উপর চাপ সৃষ্টি করেছিলেন নানান ভাবে। তিনি যেন এইসব ইস্যু প্রত্যাহার করে নেন। ঋদ্ধিমান আগে আর পরে জানতেন, কি লড়াই তিনি করতে নামছেন। তাই তিনি তাঁরই মত রয়ে যেতে পেরেছেন।
ক্রিকেটটাই তাঁর প্রথম আর শেষ প্রেম। সিএবি-র ওয়েব সাইটটি খুললে, ল্যান্ডিং পেজে একটা ছবি এখনও আছে। সিএবি সভাপতি অভিষেক ডালমিয়ার সঙ্গে সংস্থার প্রতিষ্ঠা দিবসে সস্ত্রীক ঋদ্ধিমান। শান্ত, সংযমী, আত্ম বিশ্বাসী ঋদ্ধি। আর এই ছবির সময় বলে দেয়, বাংলার সব কর্তাই তাঁর বিপক্ষে নন।
Well played, Wriddhiman Saha. He scored Brilliant 67* runs from 57 balls including 8 Fours and 1 Six against CSK in the low scoring run chase. This is sensible innings from a brilliant player. Top innings. #GTvsCSK #GujaratTitans
— MD MUSLIM KHAN (@MdMuslimKhan2) May 15, 2022
এই আইপিএল অনেক কিছু দেখিয়ে দিচ্ছে। গুজরাটের হয়ে খেলছেন ঋদ্ধিমান। প্রথম তিন ম্যাচে বিদেশি উইকেটকিপারকে খেলানো হয়। ঋদ্ধিমান প্রথম যে ম্যাচ খেলেন, সেই ম্যাচ খেলছেন তা জানতে পেরেছিলেন ম্যাচের দিন সকালে। নেতা হার্দিক পান্ডিয়া চোট পাওয়ায় খেলেন নি। সেই শুরু। রবিবার একাই গুজরাটকে জিতিয়ে ম্যাচের সেরা হয়েছেন। সেই দলের হয়ে ইডেনে ২৪ মে খেলতে নামবেন নক আউট ম্যাচে।
শিলিগুড়ি থেকে সেই ম্যাচ দেখতে আসতে পারেন তাঁর ছেলেবেলার কোচ জয়ন্ত ভৌমিক। নিজের প্রিয় ছাত্রের নানান যন্ত্রণা তিনি দেখেছেন। বোঝেনও। সারাক্ষণ শিলিগুড়ির’পাপালি’কে মনসিকভাবে সাহস জুগিয়ে যান। আর মুখে বলেন,’ঋদ্ধিমান, অন্য জাতের ক্রিকেটার। নিজেই সব সামলাতে পারে। টিভিতে ওর লাইভ ম্যাচ খুব একটা দেখি না। হাইলাইটস দেখে নিই পরে। তবে কোনও ম্যাচে ও দলের বাইরে থাকলে, সেই ম্যাচ দেখি। অন্য কেউ কতোটা ভালো করছে, সেটা দেখি।’
তাহলে ইডেনেই কেন ম্যাচ দেখতে আসা? জয়ন্ত খাড়া করলেন অন্য যুক্তি:’আমি এখন সি এ বি-র জেলা সাব কমিটির চেয়ারম্যান। আমার জন্য টিকিট রাখা থাকবে। আর এই আইপিএলের আগে যে ঝড় ঋদ্ধিমান সামলে খেলে চলেছে, তা অনুভব করতে মাঠে থাকতে চাই।’
এই কথায় বোঝা যায়, কোচের যদি মনে এতো ক্ষত-আর সেই ক্ষতে মলম লাগাতেই মাঠে এসে বসতে চাওয়া,তাহলে ভাবতে অবাক লাগে – স্বয়ং ঋদ্ধিমান কি লড়াই করে যাচ্ছেন ! কত ক্ষত নিয়ে গ্লাভস পড়ে আর ব্যাট হাতে ইনিংস শুরু করতে নামেন!
আরও একটা জিনিষ বুঝতে পারি, গ্যারি কার্স্টেন তাঁর থেকে যেটা বের করে আনতে পারেন – তাতে আশীষ নেহরা বা নেতা হার্দিকের পুরো সাপোর্ট থাকে। তাই ঋদ্ধিমান কোণঠাসা হতে হতেই আবার সামনের সারিতে এসে দাঁড়ান।
২৪ মে ইডেন যেন বাংলার এই লড়াকু-গডফাদার ছাড়া লড়ে যাওয়া ঋদ্ধিমানের নামে মুখরিত হয়। হোক কলরব: #সাহা …#সাহা।
ছবি:সৌ টুইটার