কলকাতা: এই বাদলে কে কোথায় রাস্তা পার হচ্ছে কে জানে। কার হাত ধরে? কোথায় কোন ছোট সাঁকোর উপর মেঘ ঝুঁকে আছে। স্কুলে, স্কুলে রেইনি-ডে। ওহ্ এখন তো স্কুলই নেই। রবি ঠাকুরের সহজপাঠে, ‘বাদল করেছে। মেঘের রং ঘন নীল’। নাহ্,তাও নেই। ঢং ঢং করে ঘণ্টাও পড়ে না। জিপিএস লোকেশন অন করে আমরা এখন হারিয়ে যাওয়া রাস্তা থেকে বেরিয়ে আসার উপায় খুঁজছি। কে জানে এই গোলকধাঁধা, ভুলভুলাইয়া থেকে কেউ আমাদের উদ্ধার করতে পারবে কিনা। যেমন জানা নেই স্যাটেলাইট, বা বহুদূরের স্পেস-স্টেশন বাদল আর তার ঘনিয়ে আসার সম্পর্ক নিয়ে এই মুহূর্তে কী গণিত শিখছে। আর চোখে চোখ পড়তেই কী ভাবে ‘ঈশান কোণে অমনোযোগে মেঘের ঝুঁটি ধরেছে রোগে’। শালবন দুমড়ে পড়েছে।
আসলে আমাদেরও ‘আর্মানি গির্জের কাছে আপিস।’ আমরাও সকাল থেকে বসকে লিখছি, হ্যাঁ রবি ঠাকুর ধার করেই লিখছি। ‘যাওয়া মুশকিল হবে’। দেখছ না, ‘পূব দিকের মেঘ কেমন ইস্পাতের মত কালো’। আর ‘পশ্চিম দিকের মেঘ ঘন নীল’। সত্যিই এই ‘বাদলা বেশিক্ষণ স্থায়ী না হলে বাঁচি’। এ ভাবে ‘মেঘের পরে মেঘ জমেছে’ আর কহাঁতক সহ্য করা যায়।
স্থায়ী-অস্থায়ীর টানাপড়েন দীর্ঘ হতে থাকে। ঘন ঘন ফোন আসে। নিতান্ত কেজো ফোন। সাঁকোর উপর মেঘ ঝুঁকে থাকার মত ফোন নয়। ট্রাম লাইনের জটের মতো বহু কাজ বাকি পড়ে থাকে। এক এক সময় গুছিয়ে ফের তাকে অগোছাল করে দিতে ইচ্ছে করে। কিন্তু তোকে তো সবুজ বোতাম দেখাচ্ছে, তাও তুই কি ভুলেও একবার পিং করতে পারিস না। নাকি বহুদূরের উপগ্রহের মত তুইও আজকাল শুধুই গণিত শিখিস?
লগ-ইন আমাদের নির্ভরতা দেয়। ওয়ার্ক ফ্রম হোম ভুলিয়ে দেয় পুরনো গাড়িবারান্দা গুলোকে। বাদল শেখায় আজ শহরের কোথায় কোথায় কত সেন্টিমিটার ধারা-বারি জমা হয়ে আছে। কে কোথায় ফেঁসে গিয়েছে। সাংঘাতিক ঝোড়ো বাতাস সামলিয়ে ট্রলার গুলো সব ঘরে ফিরে এল তো? হ্যালো, হ্যালো লালবাজার ট্র্যাফিক কন্ট্রোল? কলকাতা টিভি ডিজিটাল পেজ থেকে বলছিলাম। একটু ট্র্যাফিক আপডেটটা দেবেন? কোথাও কোনও মহীরুহের নিঃশব্দ পতন হয়নি তো? থুড়ি গাছে পড়ে যায়নি তো! পুরসভা, পাম্পিং স্টেশন গুলো চালু করুন। প্লিজ।