কলকাতা: সালটা ১৯৯৫। কর্মরত অবস্থাতেই অবস্থায় মারা যান বাবা। মা মেনকা পানি অথৈ জলে পড়েন দুই ছেলেমেয়েকে নিয়ে। জন্মান্ধ সোনালি পানি ও তাঁর ভাই সোমনাথ পানির দেখাশোনা করতেন মা-ই। তাই চাকরি করতে যাওয়া তাঁর পক্ষে সম্ভব ছিল না। ছেলে জন্মান্ধ হওয়ায় তাঁকে চাকরি দিয়ে চায়নি সরকার। মেয়ে তো স্কুলের গণ্ডিই পার হয়নি।
তারপর থেকেই শুরু হয় তিনজনের জীবন সংগ্রাম। ব্লাইন্ড স্কুলে পড়াশোনার খরচ চালাতে গিয়ে সমস্যা হলেও দুই সন্তানের পড়াশুনো বন্ধ করেননি মেনকাদেবী। ব্রেইলের খরচও অনেকটাই বেশি। তাই পেনশনের টাকার অনেকটাই দুই ছেলেমেয়ের পিছনে খরচ হয়ে যেত। পরবর্তীকালে ব্যাংকের গোলযোগের পেনশনের টাকাও অনেকটাই কমে গিয়েছিল। দু’বেলা পেট ভরে খাবার জুটত না।
হাজারো প্রতিকূলতা এলেও জীবনযুদ্ধে হার মানেননি তাঁরা। একটা সময় দুই সন্তানকে নিয়ে আত্মহত্যার কথাও ভেবেছিলেন। এই সময় তাঁদের পাশে এসে দাঁড়ায় বেশকিছু স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা। দুই ভাইবোনের পড়াশুনোও গতি পায়। এসএসসি দিয়ে চাকরি পান মেধাবী ছাত্রী সোনালী পানি। এখন একটি স্কুলের ইতিহাসের শিক্ষিকা তিনি। তাঁর পড়ানোর দক্ষতায় মুগ্ধ স্কুলের পড়ুয়ারা।
বোনের চাকরি হয়ে গেলেও ভাইয়ের চাকরি জোটেনি। সরকারি সংস্থায় কন্ট্রাক্টরের অধীনে টুকটাক কিছু কাজ করলেও বাবার চাকরি পাননি সোমনাথ। বিভিন্ন মহলে চাকরির দাবি জানালেও কোনও লাভ হয়নি। অগত্যা প্রতিবন্ধকতাকে সঙ্গী করেই এগিয়ে চলেন তিনি। এভাবেই কেটে যায় প্রায় ২৫ বছর। দু’বছর আগে হঠাৎ বাড়িতে চিঠি আসে।
কলকাতা পুলিশের ব্যাক অফিস কাজের নিয়োগপত্র হাতে পান সোমনাথ। জীবনের অনেক কটা বছর কেটে গেলেও বীভৎস দিনগুলোর কথা আজও সোনালী ও সোমনাথের চোখে ভাসে। অবহেলা-বঞ্চনাকে পিছনে ফেলে এগিয়ে যাওয়ার ফল পেয়েছেন দুজনেই। আজ একজন স্কুল শিক্ষিকা, অন্যজন কলকাতা পুলিশের কর্মরত।