কলকাতা: ফায়ারব্র্যান্ড ছাত্রনেতা থেকে ঝানু রাজনীতিবিদ ও দক্ষ প্রশাসক হয়ে ওঠা সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের পাঁচ দশকের বর্ণময় রাজনৈতিক কেরিয়ারের গ্রাফ অনেক ওঠা-নামার মধ্যে দিয়ে গিয়েছে৷ পর পর তিনবার তিনি রাজ্য মন্ত্রিসভার সদস্য হলেও একটা সময় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে মতবিরোধের জেরে তৃণমূল কংগ্রেস ছেড়ে বেরিয়ে যেতে হয়েছিল তাঁকে৷ পরে মমতার সিঙ্গুর আন্দোলন সুব্রত মুখোপাধ্যায়কে ফের তৃণমূলের কাছাকাছি এনে দেয়৷ তার পর আমৃত্যু তৃণমূলের সঙ্গেই ঘর করেন৷ বঙ্গ রাজনীতির খুঁটিনাটি সম্পর্কে ওয়াকিবহাল মানুষের এসব জানা৷ তবুও আজকের দিনে এই আলোচনা বার বার ঘুরে ফিরে আসবে৷ নইলে সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের মতো বাংলার রাজনীতির ‘এভারগ্রিন’ মানুষটির রাজনৈতিক মূল্যায়ণ অসম্পূর্ণ থেকে যাবে৷
সালটা ২০০০৷ কংগ্রেস ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দেন সুব্রত মুখোপাধ্যায়৷ ৮৭ নম্বর ওয়ার্ড থেকে তৃণমূলের প্রার্থী হিসেবে জিতে কলকাতার মেয়র হন৷ মেয়রের চেয়ারে বসে একগুচ্ছ সংস্কারমূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করে পুর পরিষেবার মানোন্নয়ন ঘটিয়েছিলেন৷ প্রশাসনিক দক্ষতার জন্য কলকাতার ইতিহাসে তাঁকে অন্যতম সেরা মেয়র হিসেবে বিবেচনা করা হয়৷
কিন্তু পাঁচ বছর তাল কাটল৷ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে মতবিরোধের জেরে তৃণমূল ছেড়ে বেরিয়ে আসেন৷ তবে কংগ্রেসে ফেরেননি৷ নতুন মঞ্চ গড়েছিলেন৷ কংগ্রেসের সঙ্গে জোট করে ‘ঘড়ি’ চিহ্নে লড়েছিলেন পুরভোটে৷ সুব্রত নিজে জয়ী হলেও মঞ্চ হেরে গিয়েছিল৷ পরে কংগ্রেসে ফিরে যান তিনি৷
তবে সেই ফিরে যাওয়াটা ছিল ক্ষণস্থায়ী৷ ২০০৮ সালে সিঙ্গুর আন্দোলনের সময় মমতার ধরনা মঞ্চে উপস্থিত হতেন৷ সিঙ্গুর ও পরবর্তীতে নন্দীগ্রাম আন্দোলনের পর রাজ্যে পরিবর্তনের হাওয়া বইতে শুরু করে৷
২০১০ সাল৷ পুরভোটের সময় ফের কংগ্রেস ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দেন সুব্রত মুখোপাধ্যায়৷ পরের বছর বিধানসভা ভোটে ৩৪ বছরের বামেদের জগদ্দল পাথর সরিয়ে বিপুল সমর্থন নিয়ে ক্ষমতায় আসেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ বালিগঞ্জ থেকে ভোটে দাঁড়িয়ে জয়ী হন সুব্রতবাবু৷ তাঁকে পঞ্চায়েত মন্ত্রী করেন তৃণমূল নেত্রী৷ সেই থেকে ওই বালিগঞ্জ থেকে জিতে আমৃত্যু রাজ্যের মন্ত্রীই ছিলেন সুব্রত মুখোপাধ্যায়৷