কলকাতা: অনেকের মত সুব্রত মুখোপাধ্যায় ছিলেন তাঁর-ও রাজনৈতিক গুরু৷ ছাত্রজীবনে তাঁর দেখা শ্রেষ্ঠ লোক৷ বৃহস্পতিবার কালীপুজোর রাতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মন্ত্রিসভার প্রবীণতম মন্ত্রীর প্রয়াণের খবরে তাই শোকে বিহ্বল হয়ে পড়েছেন পার্থ চট্টোপাধ্যায়৷ আজ শুক্রবার কেওড়াতলা মহাশ্মশানে শেষকৃত্য সম্পন্ন হবে ‘এভারগ্রিন’ মানুষটির৷ তার আগে শেষবারের মত প্রিয় নেতাকে শ্রদ্ধা জানালেন পার্থবাবু৷ কান্না মিশ্রিত কন্ঠে বলে ওঠেন, ‘কষ্ট লাগছে এই ভেবে আমার ডানদিকে যে লোকটি বিধানসভার ভেতর বসে থাকত সেই আসনে সুব্রতদা আর বসবে না৷’
আরও পড়ুন: কেওড়াতলা মহাশ্মশানে গান স্যালুটে চিরবিদায় সুব্রতকে
সুব্রত মুখোপাধ্যায়কে নিয়ে বলতে গিয়ে মাঝে মধ্যেই বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েন পার্থ চট্টোপাধ্যায়৷ কান্নায় তাঁর গলা ধরে আসছিল৷ কোনও মতে নিজেকে সামলে নেন৷ তার পর সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের স্মৃতিচারণ করতে করতে পার্থবাবু বলেন, ‘কত কিছু মনে পড়ছে..৷ আমি যখন প্রথম দেখা করতে যাই তখন একডালিয়া পার্কের একটা রেশন দোকানের উপর সুব্রতদা থাকতেন৷ জীবনদার রেশন দোকান৷ ধুতি দিয়ে পর্দা করা হয়েছিল৷ ঘরে ছোট্ট একটা হাঁড়ির স্টোভ৷ আমি বললাম, এ নেতা? তখন সুব্রতদাকে দেখিনি৷ তার পর দেখলাম৷ সুদর্শন চেহারার ছিপছিপে ফর্সা একটা লোক বেরিয়ে এল৷ সে-ই সুব্রত মুখার্জী৷ আমার বন্ধু অচিন্ত্য মুখার্জী তাঁর কাছে নিয়ে গিয়েছিল৷ অচিন্ত্য ছিল সুব্রতদার সিএ-র ভাই৷ সেই থেকে পথ চলা শুরু৷ তার পর কত জায়গায় গেছি৷’
আরও পড়ুন: সাংবাদিকদের কাছে শেষ দিন পর্যন্ত জনপ্রিয় ছিলেন মন্ত্রী সুব্রত
সদা হাস্যময় লোকটির সঙ্গে থাকতে থাকতে তাঁর সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা তৈরি হয়েছিল পার্থর৷ পাঁচ দশকের বেশি সময় ধরে তাঁদের সম্পর্ক৷ সুব্রত মুখোপাধ্যায়কে নিজের রাজনৈতিক গুরুর মর্যাদা দেন রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী৷ ‘এভারগ্রিন’ মানুষটি যেমন ইয়ার্কি মারতে ভালবাসতেন, তেমন ভূতকেও মারাত্মক ভয় পেতেন৷ পার্থবাবু বলেন, ‘সুব্রতদা সাংঘাতিক ভূতকে ভয় পেত৷ আলো জ্বালিয়ে শুত..৷ জরুরি অবস্থার অনেক গল্প করতেন৷ আমি মাঝরাতে যেতাম রাইটার্স বিল্ডিংয়ে৷ বলত, ভূত আছে, তুই এসেছিস? সব ভূত এখানে৷ আলো জ্বালিয়ে থাকতেন৷ ইয়ার্কি মেরে জুনিয়রদের এমনও বলতেন, অ্যাই তুই কান বন্ধ কর৷ বড়দের গল্প হচ্ছে৷ বিচিত্র মানুষ ছিলেন৷’
সম্প্রতি একটি বই লিখেছেন পার্থ চট্টোপাধ্যায়৷ সেটি প্রকাশনার কাজ করছে ৷ আক্ষেপ করে পার্থবাবু বললেন, ‘ওতে সুব্রতদার কথা লেখা আছে৷ ভেবেছিলাম, লেখাটা প্রকাশ হলে বইটা নিয়ে ওর কাছে যাব৷ সেই যাওয়া আর হবে না৷’
তখনও ভাবিনি এই লেখার পরে আর সুব্রতদাকে দেখতে পাব না…