কলকাতা: পুজো অন্ত প্রাণ ছিলেন রাজ্যের প্রয়াত মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়৷ মৃত্যুর আগের দিনও এসএসকেএম হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে গ্রামের কালীপুজোর খোঁজখবর নিয়েছিলেন৷ ওই দিন তাঁর সঙ্গে দেখা করতে এসএসকেএম গিয়েছিলেন সারেঙ্গাবাদ গ্রামের প্রদীপ কুমার বন্দ্যোপাধ্যায়৷ তাঁকে দেখেই প্রশ্ন করেন, ‘আমাদের ওখানে কালীপুজোটা হচ্ছে তো? প্যান্ডেল তৈরি?’ ঘাড় নেড়ে প্রদীপবাবু তাঁকে বলেন, ‘সব হয়ে গেছে৷ তুমি থাকলে আজকের দিনে তো বাজি পোড়াতে৷’ শুনে হেসে ওঠেন দু’জন৷
আরও পড়ুন: বিকেল ৪.৫২, প্রিয়-সোমেনের দেশে মিলিয়ে গেলেন সুব্রত
সেই পুজো অন্ত প্রাণ মানুষটি আজ নেই৷ তাঁর প্রয়াণের খবরে কালীপুজোর রাতে আঁধারে ডুবে যায় সারেঙ্গবাদ গ্রাম৷ পেশায় মাস্টারমশাই বিপ্লব কুমার হালদার সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের মৃত্যুর খবর শুনে হাউ হাউ করে কেঁদে ওঠেন৷ বলেন, ‘টিভিতে খবরটা দেখলাম৷ মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস যখন ছুটোছুটি করছিল তখনই আমরা বুঝতে পেরেছিলাম৷ তার পর দিদি বেরিয়ে এসে যা বলল, তখনই বুঝলাম দাদা আর নেই৷’
বৃহস্পতিবার কালীপুজোর রাত ৯টা বেজে ২২ মিনিটে মৃত্যু হয় রাজ্য-রাজনীতির এক বর্ণময় চরিত্রের৷ ঠিক ছিল, আজ শুক্রবার তিনি হাসপাতাল থেকে বাড়ি ফিরবেন৷ কিন্তু জীবন থেকেই ছুটি নিয়ে নিলেন৷ সারেঙ্গাবাদের মানুষ এখনও সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের প্রয়াণের খবর বিশ্বাস করতে পারছে না৷ দু’দিন আগেই তো অ্যাঞ্জিওপ্লাস্টি হল৷ সবই তো ঠিক ছিল৷ হঠাৎ কী হল…?
![Sarengabad](https://kolkatatv.org/wp-content/uploads/2021/11/New-Project-11-1.jpg)
হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পর থেকে সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে প্রায় প্রত্যেকদিন দেখা করতে যেতেন প্রদীপবাবু৷ সেই তিনি জানান, মারা যাওয়ার আগের দিন সুব্রতদার সঙ্গে ১৫ মিনিট গল্প করেছেন৷ তাঁর শরীরের খোঁজখবর নেন৷ সুব্রত মুখোপাধ্যায় তাঁকে বলেন, শরীর ঠিক আছে৷ প্রদীপবাবুর কাছে তিনি পাড়ার কালীপুজোর খোঁজখবর নেন৷ আক্ষেপ প্রকাশ করে প্রদীপবাবু বলেন, ‘দাদা থাকলে কালীপুজোর রাতে বাজি পোড়াত৷ তুবড়ি প্রতিযোগিতা হত৷ সুব্রতদাকে ছাড়া আমরা অন্য কিছু ভাবতে পারি না৷ বিরাট ক্ষতি হয়ে গেল৷ ওমন এক নেতার কাছে যে কোনও মানুষের ফ্রি অ্যাকসেস ছিল৷ সারেঙ্গাবাদ গ্রামটার পরিচিতি তো উনার জন্যই৷’
আরও পড়ুন: বইটা আর সুব্রতদার হাতে তুলে দেওয়া হল না… গলা ধরে এল পার্থর
ছেলেবেলাটা এই গ্রামেই কেটেছে সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের৷ এখন তাঁর গ্রামের বাড়িতে মেজো ও ছোট ভাই এবং তাঁদের পরিবার থাকে৷ সদা হাসিখুশি সুব্রত মুখোপাধ্যায় ছোটবেলায় ভীষণ ডানপিটে ছিলেন৷ তাঁর দস্যিপনায় গ্রামের মানুষরা অতিষ্ট ছিলেন৷ ডাব খেতে ভালোবাসতেন৷ পাড়ার বাগান থেকে ডাব পাড়তেন বলে নামই হয়ে গিয়েছিল ‘ডাব চোর’৷ সেই ‘ডাব চোর’-এর দাপট দেখা গিয়েছিল বাংলার রাজনীতিতে৷ সবচেয়ে কম বয়সে একজন ক্যাবিনেট মন্ত্রী হয়েছিলেন৷ মারা যাওয়ার আগেও তিনি ছিলেন মমতা মন্ত্রিসভার প্রবীণতম মন্ত্রী৷ এত উঁচুদরের নেতা হয়েও গ্রামকে ভুলে যাননি৷ প্রতি সপ্তাহে শনিবার অথবা রবিবার তিনি সারেঙ্গাবাদ আসতেন৷ শেষ এসেছিলেন বিজয়া দশমীর পরের দিন৷ প্রদীপবাবু জানিয়েছেন, সুব্রতদা আমাদের ‘বুস্ট আপ’ করত৷ সব সময় বলত, কী রে সব ঠিক আছে?
এখন গ্রামের কেউ কথাগুলি শুনতে পাবে না৷ বলার লোকটাই তো চলে গেল৷