নয়াদিল্লি ও গুয়াহাটি: পদবি জুড়লেই লোকে ডাকাত থেকে সাধু হয়ে যায় না। রাহুলজি আপনি গান্ধী পদবি ত্যাগ করুন। আপনাদের মতো লোক হচ্ছে নকল গান্ধী। ঠিক এই ভাষাতেই কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধীকে আক্রমণ করলেন অসমের বিজেপি মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মা। এদিকে, কেন্দ্রীয় মন্ত্রী অনুরাগ ঠাকুরও রাহুল গান্ধীকে তোপ দেগেছেন। অনুরাগ বলেন, সনাতন ধর্মকে অপমান করার একটা চক্রান্ত চলছে। কিন্তু, এবিষয়ে কংগ্রেসের এমপি রাহুল এবং উদ্ধব ঠাকরে চুপ কেন, প্রশ্ন তুলেছেন অনুরাগ।
গুয়াহাটিতে বিজেপির সদর কার্যালয়ে এক অনুষ্ঠানে হিমন্ত বিশ্বশর্মার কটাক্ষ, গান্ধী পরিবার গান্ধী পদবির অপমান ও অপব্যবহার করে চলেছে। রাহুল গান্ধীকে উদ্দেশ করে তাঁর মন্তব্যের অর্থ, পদবি ছাড়া ব্যক্তি পরিচয় কিছু নেই কংগ্রেস নেতার। তিনি বলেন, সকলেই কি গান্ধী হতে পারেন? আমি দীর্ঘদিন ধরে দেখেছি কীভাবে, কোন ফর্মুলায় ইন্দিরা গান্ধী, রাজীব গান্ধী, রাহুল-প্রিয়াঙ্কারা গান্ধী হয়েছেন। কংগ্রেস বলে বেড়াচ্ছে, ইন্ডিয়া জোটের নামকে ভয় পাচ্ছে বিজেপি। কাল যদি দেখা যায়, কোনও ডাকাত তার নাম-পদবি বদলে গান্ধী হয়ে যায়, তাহলেই কী সে সাধু হয়ে যাবে?
আরও পড়ুন: গোপন চিঠি গোপনই থাক, মুখ্যমন্ত্রীকে টেনশন দিতে চাই না’, মন্তব্য রাজ্যপালের
হিমন্তের আরও মন্তব্য, গান্ধীজি দেশকে স্বাধীন করেছিলেন। আর আপনারা গান্ধী পদবিটাকে দখল করেছেন। ভারতের প্রথম কেলেঙ্কারি এই পদবি থেকেই শুরু হয়েছে। আপনারা নকল গান্ধী। অন্যদিকে, অনুরাগের দাবি সনাতন ধর্মের অপমান নিয়ে রাহুলের মুখ খোলা উচিত। বিরোধীরা লাগাতারভাবে সনাতন ধর্মকে অপমান করে চলেছে। ফ্রান্সের প্যারিসে রবিবার রাহুল গান্ধীর মন্তব্যের জবাবে ঠাকুর বলেন, কিছু মানুষের আতঙ্ক ছড়ানো এবং বিভ্রান্তি সৃষ্টি করা, মিথ্যা বলা অভ্যাসে পরিণত হয়ে গিয়েছে। সারা জীবন তারা একই কাজ করে থাকে।
প্রসঙ্গত, প্রতিবারের মতো এবারেও বিদেশ সফরে গিয়ে নরেন্দ্র মোদি নেতৃত্বাধীন বিজেপি সরকারের কঠোর সমালোচনায় মুখর কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী। ইন্ডিয়া ও ভারত নামের বিতর্কে কেন্দ্রীয় সরকার তথা মোদির নাম না করে রবিবার তির্যক আক্রমণ করেন তিনি। রাহুল বলেন, যারা ইন্ডিয়ার আত্মাকে আঘাত করছে, তাদের যোগ্য জবাব দিতে হবে। কড়া মূল্য চোকাতে হবে। ফ্রান্সের প্যারিসে সায়েন্সেস পিও বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়াদের সামনে এক সেমিনারে কংগ্রেসের প্রাক্তন সভাপতি বলেন, যারা ভারতের আত্মাকে বিঁধছে তাদের একদিন না একদিন এর মূল্য চোকাতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী মোদির নাম না করে রাহুল আরও বলেন, যাঁরা দেশের নাম বদলের চেষ্টা করছেন, বাস্তবিক তাঁরা ইতিহাসকে অস্বীকার করছেন। কিন্তু মানুষের কথা আমরা বলতে চাই, বলে যাব। আমরা নিশ্চিত করে বলতে চাই, দেশের মানুষ যারা এটা করছে তাদের উচিত শিক্ষা দেবে। সুতরাং, কেউ যদি ভারতের আত্মাকে আহত করে, তাদের জেনে রাখা উচিত এই কাজের মাশুল গুনতে হবে তাদেরও।
ইন্ডিয়া ও ভারত কোনও নামেই আপত্তি নেই রাহুলের। কিন্তু, এর মধ্যে একটা উদ্দেশ্য আছে বলে তাঁর মনে হয়। রাহুলের দাবি, আসলে দেশের বিরোধী জোটের নাম যেহেতু ইন্ডিয়া, তাই তড়িঘড়ি সরকার ভারত নামবদলের জন্য আদাজল খেয়ে নেমে পড়েছে। রাহুলের কথায়, ভারতের সংবিধানে ইন্ডিয়া এবং ভারত দুটো নামই আছে। দুটোই খুব সুন্দর। কিন্তু, কেন্দ্রীয় সরকারের মধ্যে একটা চিড়বিড়ানি শুরু হয়েছে বিরোধী জোটের নাম শোনার পর থেকে। আমাদের জোটের নাম ইন্ডিয়া। আর এই একটাই কারণে ওরা দেশের নাম বদলের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
রাহুলের দাবি, ভারতীয় জনতা পার্টি এবং কট্টর রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘ ভারতের সংখ্যালঘুদের দমিয়ে রাখতে চাইছে। কিন্তু, দেশে এমনটা যাতে না হয়, তার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন বলে জানান রাহুল। তিনি বলেন, আমি চাই না, কেউ সংখ্যালঘু বলে তার সঙ্গে দুর্ব্যবহার করা হবে। নিজের দেশে সংখ্যালঘুদের অস্বস্তি-ভয়ে ভয়ে বেঁচে থাকতে হবে, এটা ভারতের পক্ষে লজ্জার। দেশের ২০ কোটি সংখ্যালঘু মানুষ ভারতে স্বস্তিতে নেই। শিখরা যদি ভাবে তারা শান্তিতে নেই, মহিলারা যদি ভাবেন নিরাপদে নেই— তবে তা দেশের পক্ষে লজ্জার। এগুলোর সংশোধন প্রয়োজন, প্যারিসে দাবি রাহুলের।
বিজেপির হিন্দুত্ববাদের সমালোচনা করে তিনি বলেন, ভারতীয় হিন্দুত্বের সঙ্গে এদের আদর্শের কোনও মিল নেই। রাহুলের ভাষায়, আমি ভাগবত গীতা পড়েছি। উপনিষদ এবং অন্যান্য হিন্দু পুরাণ পড়েছি। একজন শিক্ষিত হিন্দু ব্যক্তি একবার আমায় বলেছিলেন, নিজের থেকে দুর্বলতর কারও ক্ষতিসাধন করা উচিত নয়। কিন্তু এই বিজেপি হিন্দু জাতীয়তাবাদী নয়। তারা ক্ষমতার জন্য যা খুশি তাই করতে পারে। শাসনে টিকে থাকতে যে কোনও রাস্তা নিতে পারে। সেখানে হিন্দু বলে কিছু নেই।