কলকাতা: শুধু ষষ্ঠীতেই নয়, বেহালার সাবর্ণ রায়চৌধুরী বাড়িতে (Savarna Roychowdhury’s house Durga Puja) তার আগেও ১৩ দিন ধরে মায়ের বোধন চলে। বছরের পর বছর ধরে এই প্রথাই চলে আসছে সাবর্ণদের পুজোয়।
১৬১০ সালে বেহালায় রায়চৌধুরী বাড়িতে পুজোর শুরু। কাঠের থামের উপর হোগলাপাতার ছাউনি দেওয়া আটচালা মণ্ডপে দেবীর আরাধনা শুরু হয়। পরে এর সঙ্গে যুক্ত হয় ষোলোটি থামবিশিষ্ট একটি নাটমন্দির। এখানে মায়ের গায়ের রং গাত্রবর্ণ। নানা অলঙ্কারে সুসজ্জিত থাকেন দেবী। গণেশের গায়ের রং হয় লাল। অসুরের সবুজ। দেবীর এক দিকে থাকেন রাম, অন্য দিকে শিব।
সাবর্ণ রায়চৌধুরী পরিবারের মোট আটটি বাড়িতে দুর্গাপুজো (Durga Puja 2023) হয়। প্রধান পুজোটি হয় বেহালা বড়িশা আটচালায়। বাকি পুজোগুলি হয় আটচালা বাড়ি, বড় বাড়ি, মাঝের বাড়ি, বেনাকী বাড়ি, কালীকিঙ্কর ভবনে। এ ছাড়াও বিরাটিতে ও নিমতা পাঠানপুরের বাড়িতেও পুজো হয়। আটচালা বাড়ির প্রবীণ সদস্য রবীন বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, বাড়িতে নিত্যদিন পুজো হয় রাধাকৃষ্ণের। রাধাকৃষ্ণের মন্দিরের পাশে রয়েছে মায়ের বোধন ঘর। দুর্গাযষ্ঠীর আগে ১৩ দিন ধরে মায়ের বোধন চলে এই বাড়িতে। বোধন ঘরে ভোগ নিবেদন করা হয় মাকে। দুপুরে অন্নভোগ আর রাতে লুচি, সুজি, দুধ নিবেদন করা হয়। সপ্তমীর দিনে ঘট প্রতিষ্ঠা করা হয় দুর্গা দালানে।
আরও পড়ুন: রামনগরে ঘোষ বাড়ির পুজোয় এসেছিলেন লর্ড ক্যানিং
লক্ষ্মীকান্তের নাতি বিদ্যাধর রায়চোধুরীর সময় এই পরিবারের পুজোতে ত্রিধারাসঙ্গম হয়। শাক্ত, শৈব এবং বৈষ্ণব— এই তিন মত মিলে যায় পুজোতে। পুজো হয় এক চালচিত্রে। একই চালচিত্রের মাঝে থাকেন সপরিবার দুর্গা। দুই পাশে থাকেন মহাদেব ও রাম। এটাই সাবর্ণ রায়চৌধুরী বাড়ির প্রতিমা গড়ার রীতি। চালচিত্রে রয়েছেন ছিন্নমস্তা, বগলা, কমলাকামিনী, মাতঙ্গী অর্থাৎ দশমহাবিদ্যা এবং সেই সঙ্গে রয়েছেন রাধাকৃষ্ণ। প্রতি বছর প্রথা মেনে প্রতিমা নিরঞ্জনের পর কাঠামো তুলে নেওয়া হয় জল থেকে। সপ্তমী থেকে দশমী পর্যন্ত ভাগে ভাগে অন্নভোগ নিবেদন করা হয় মা দুর্গাকে। মুখে কাপড় বেঁধে রান্না করতে হয় ভোগ। এটাই এ বাড়ির রীতি। সন্ধিপুজোর একটি বিশেষত্ব রয়েছে। পরিবারের সদস্যরা ভেজা গায়ে, ভেজা কাপড়ে ভোগ রান্না করেন। মায়ের ভোগে থাকে পোলাও, শোল মাছ।
বড়িশার সাবর্ণ রায়চৌধুরী পরিবারের দুর্গাপুজোই কলকাতার প্রাচীনতম দুর্গাপুজো হিসেবে মানেন অনেকে। আগের মতো জাঁকজমক না থাকলেও এখনও পুরনো ঐতিহ্যকে ধরে রেখেছেন বাড়ির সদস্যরা। পুজোর দিন গুলোতে বহু মানুষের সমাগম হয় এই বাড়িতে। সাবর্ণ রায়চৌধুরী পরিবারে আজও সনাতনী নিয়ম রীতি মেনেই পুজো হয়ে থাকে।
আরও অন্য খবর দেখুন