কলকাতা টিভি ওয়েব ডেস্ক: ‘হিটলারি মানসিকতা লোকেরাই আমার ঘরবাড়ি পুড়িয়েছে।’ দ্বীপরাষ্ট্র শ্রীলঙ্কার বিদায়ী প্রধানমন্ত্রী রনিল বিক্রমসিঙ্ঘে (Sri Lanka PM Wickremesinghe) সোমবার বলেন, দাঙ্গা-হাঙ্গামা যারা করছে, তারা সকলেই হিটলারের মনোভাবের মানুষজন। গত শনিবার রনিলের বাসভবন পুড়িয়ে খাক করে দেওয়ার পর এদিনই প্রথম মুখ খুললেন তিনি। একটি বিশেষ ভিডিয়ো সাক্ষাৎকার স্থানীয় একটি টিভি চ্যানেলে এদিন দেখানো হয়। তাতে রনিল বলেন, দেশের ডুবন্ত অর্থনীতি ও বিশৃঙ্খলার দিকে তাকিয়েই তিনি প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নিতে রাজি হয়েছিলেন। কিন্তু, শনিবার যেভাবে তাঁর নিজের বাড়িতে বিক্ষোভকারীরা ঢুকে তছনছ করে সবকিছু জ্বালিয়ে দিয়েছে, তাকে হিটলারের কার্যকলাপের সঙ্গে তুলনা করেন। শুধু তাই নয়, এর পিছনে আরও কারণ আছে বলেও দেশের একাংশ নেতার বিরুদ্ধে তোপ দেগেছেন রনিল।
এর ব্যাখ্যায় তিনি বলেন, তাঁর বাড়িতে আগুন লাগানোর পিছনের এক মুসলিম নেতার ইন্ধনের কথা উল্লেখ করেছেন রনিল। বলেছেন, এক মুসলিম নেতার একটি টুইটেই জনতা উত্তেজিত হয়ে তাঁর বাড়িতে হামলা করে। টুইটে বলা হয়েছিল, রনিল নাকি পদত্যাগ করতে রাজি নন এবং সর্বদলীয় সরকার গঠনেও আপত্তি জানিয়েছেন। এসব মিথ্যা প্রচার বলেও জানান বিদায়ী প্রধানমন্ত্রী। তিনি এও জানান, সর্বদলীয় সরকার গঠনের পরেই সরে যাবেন একথা আগেই জানিয়ে দিয়েছিলেন। তা সত্ত্বেও একটি টিভি চ্যানেল বিক্ষোভকারীদের তাঁর বাড়িতে হামলা চালানোর উসকানি দিয়েছিল বলেও অভিযোগ রনিলের। যদিও তিন ওই চ্যানেলকে বারবার করে অনুরোধ করেছিলেন, তারা যেন মানুষ খেপানোর কাজ না করে।
তিনি ৯ তারিখে সব বৈঠক বাতিল করে দিয়ে ঘরেই ছিলেন। পুলিস এসে তাঁকে সন্ধ্যা নাগাদ বের করে নিয়ে যায়। পুলিস তাঁকে সতর্ক করে দেয় যে, রাতে হামলার আশঙ্কা রয়েছে। যে কারণে তিনি ও তাঁর স্ত্রী বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য হন। তাঁর দাবি, দেশে ওটাই তাঁর একমাত্র মাথা গোঁজার আশ্রয় ছিল। বিদেশেও তাঁর কোনও বাড়ি নেই। রনিলের দুঃখ, ওই বাড়িতে প্রায় আড়াই হাজার বই ছিল, যার মধ্যে বহু বই দুষ্প্রাপ্য। এছাড়া, তাঁর সংগ্রহে প্রায় ২০০টি মূল্যবান ছবি ছিল। রনিলের দাবি, ওগুলোই ছিল তাঁর সম্পদ। সেসব কিছু ধ্বংস করে দিয়েছে বিক্ষোভকারীরা।
রনিল জানান, তিনি ও তাঁর স্ত্রী ভেবে রেখেছিলেন ওইসব বই ও ছবি কোনও গ্রন্থাগারকে বা আন্তর্জাতিক সংস্থাকে দান করে দেবেন। যার কিছুই এখন আর নেই। ৭৩ বছর বয়সি বিক্রমসিঙ্ঘে আরও বলেন, দেশের অর্থনীতির হাল ধরতেই তিনি দায়িত্ব নিয়েছিলেন। দেশের মানুষ যখন জ্বালানি তেল, রান্নার গ্যাস ও বিদ্যুৎ সংকটে জেরবার, জিনিসপত্রের দাম উচ্চবিত্তেরও নাগাল ছাড়িয়েছে, তখন তাঁদের বাঁচানোর আপ্রাণ চেষ্টা করেছেন তিনি। কিন্তু, একাজ একদিনে করা অসম্ভব। যুক্তি দিয়ে তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক অর্থ ভাণ্ডার (IMF) পর্যন্ত জানিয়ে দিয়েছে, এখন যা পরিস্থিতি, তাতে অন্তত ৪ বছর লাগবে অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে। তারমধ্যে প্রথম বছরটাই সবথেকে ভয়ঙ্কর হবে। রনিলও বলেন, এক-দুদিনে দেশের অর্থনীতিকে সোজা করে দাঁড় করানো কারও সাধ্যে নেই। অন্তত একটা বছর সময় লাগবেই।