এমনিতে রাজ্যের একটা উপনির্বাচনে রাজ্য রাজনীতির ভারসাম্যে কোনও পরিবর্তন আসবে না, বিজেপির জেতা আসন, জিতলে বলা হবে আসন ধরে রাখল। সিপিএম প্রার্থী দিয়েছে ১৯৭৭ থেকে এমনকী ২০১১-তে সিপিএম এই কেন্দ্রে জিতেছে। এবার জিতলে, বিধানসভায় একজন বাম বিধায়ককে দেখা যাবে, এবং বড়জোর বলা হবে বামেরা জোর বাড়াচ্ছে। তৃণমূল ২০০১-এ জিতেছিল, জিতলে বলাই হবে তৃণমূল পুনরুদ্ধার করল তাদের আসন, এই তো। কিন্তু ঠিক এই মুহূর্তে এর থেকেও কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় উঠে আসবে এই উপনির্বাচনের ফলাফল থেকে। কখনও সখনও হাঁড়ির একটা চাল টিপে গোটা হাঁড়ির হাল বোঝা যায়, ধূপগুড়ির নির্বাচন তাই গুরুত্বপূর্ণ। এই আসন সেই কবে ৫১-তে কংগ্রেসের ছিল, তারপর সম্যুক্ত সোশ্যালিস্ট পার্টি, তারপর ৭১ আর ৭২-এ কংগ্রেস দখল করেছিল, ব্যস, কংগ্রেসের খেলা ওই শেষ। ৭৭ থেকে একটানা সিপিএম জিতেছে, বনমালি রায়, জলপাইগুড়ি জেলা সভাধিপতি এখানকার বিধায়ক ছিলেন। তারপর মাত্র ২০১৬-এ মিতালি রায় তৃণমূলের টিকিটে জিতেছিলেন, ২১-এ সেই আসন বিজেপি কেড়ে নেয়, কাজেই প্রত্যেকের জোর সেখানে আছে। বিজেপি উত্তরবঙ্গে শক্তিশালী বলে দাবি করে, তৃণমূল এবারের পঞ্চায়েত নির্বাচনে জলপাইগুড়ি ক্লিন সুইপ করেছে। ওদিকে এই ধূপগুড়িতে সিপিএম না অনুমতি দিলে নাকি মেঘ থেকে বৃষ্টিও পড়ত না। কাজেই এই আসনের উপনির্বাচন অনেক সম্ভাবনার কথা তুলে ধরবে বইকী। তাই বিষয় আজকে হল, ধূপগুড়ি উপনির্বাচনে কী হবে?
সারা দেশে শুরু হয়েছে এক নতুন খেলা, আইডেন্টিটি পলিটিক্স, বাঙালি, বাঙালির মধ্যে ঘটি বা বাঙাল, পশ্চিমবাংলার মধ্যে দক্ষিণ না উত্তরবঙ্গ? পাহাড় না সমতল। সেই ধারাতেই এসেছে রাজবংশী পরিচয়। এ খেলাতে মাহির হল বিজেপি, কাজেই তাঁরা কিছুদিন আগে এক স্বঘোষিত মহারাজ যিনি এই পশ্চিমবঙ্গ থেকে আলাদা এক বাসভূমির দাবি করেন, যিনি নিজেকে এখনও রাজা বলেই পরিচয় দেন, সেই অনন্ত মহারাজকে রাজ্যসভার সদস্যপদ দিয়েছেন। তৃণমূল যে অনন্ত মহারাজকে তাঁদের দিকে রাখার চেষ্টা করেনি তেমন কিন্তু নয়, কিন্তু তার জন্যে এতটা দাম দিতে রাজি ছিল না। মহারাজ তাঁর রাজ্যসভা সদস্যপদ বাগিয়েছেন, কিন্তু সে ঘোষণা আসার পরে পঞ্চায়েত নির্বাচনের ফলাফলে কিন্তু ধস নেমেছে বিজেপির। এখন দেখার রাজবংশী ভোটকে কতখানি প্রভাবিত করতে পারেন এই অনন্ত মহারাজ। যদি ধূপগুড়িতে বিজেপি প্রার্থী অন্তত ১৫-২০ হাজার ভোটে জেতে তাহলে কৃতিত্ব পাবেন অনন্ত মহারাজ, যদি তা তিন, চার কি পাঁচ হাজার হয় তাহলে বোঝা যাবে বিজেপি তার আগের ভোটটুকুই কেবল ধরে রেখেছে। যদি ওই আসনে ৪-৫ হাজার ভোটে তৃণমূল হারে তাহলে অনন্ত মহারাজ এবং বিজেপি, দুজনের মুখ পুড়বে, বিজেপি সর্বভারতীয় নেতৃত্ব লোকসভার কথা ভেবে আশঙ্কিত হবেন। তৃণমূল হাজার ১৫-২০ ভোটের মার্জিনে জিতলে সেই আশঙ্কা আরও বড় হবে এবং উত্তরবঙ্গের বিজেপি কর্মীদের শিবির পাল্টানো শুরু হবে, নেতারা একে অন্যের ঘাড়ে দোষারোপ করা শুরু করবেন।
আরও পড়ুন: Aajke | র্যাগিং মেল চালু করুন
সিপিএম যদি ৫-৬ শতাংশ ভোট পায় তাহলে বোঝা যাবে ঘুরে দাঁড়ানো কঠিন, যদি ১৫-১৬ শতাংশ পায় তাহলে ঘুরে দাঁড়াচ্ছে বাম, এটাই অন্তত মিডিয়াতে বলা হবে। সাধারণভাবে বামেরা বেশি ভোট পেলে তৃণমূলের জেতার সম্ভাবনা বাড়বে। কিন্তু যদি কোনওভাবে বামেদের ভোট কাটার ফলে তৃণমূল হারে তাহলে তা কিন্তু ওই জোটের বৈঠকে উঠবে, যেখানে মমতা আর ইয়েচুরি দুজনেই থাকবেন। সবচেয়ে বড় কথা হল, তৃণমূল যদি এই উপনির্বাচনে ইন্ডিয়া জোটের প্রার্থী ইত্যাদি লেখা শুরু করে, তাহলে আর এক রাজনৈতিক তামাশা আমরা দেখতে পাব, আর ক’দিন পরেই প্রচার শুরু হলেই এটা দেখা যাবে। এবং সহানুভূতি ভোট, একজন শহীদ জওয়ানের স্ত্রীকে ধূপগুড়ি আসনে দাঁড় করিয়ে বিজেপি সহানুভূতি ভোটের অঙ্ক কষেছে, কিন্তু তা এই মুহূর্তে পুলওয়ামার দোষীদের শাস্তি, কেন হয়েছিল বিস্ফোরণ? কার গাফিলতি ছিল? সৎপাল মালিককে কেন মুখ বন্ধ রাখতে বলা হয়েছিল ইত্যাদি প্রশ্নগুলো তো উঠবেই। সবটা মিলিয়ে রাজ্য রাজধানী থেকে বহু দূরে ওই ধূপগুড়ির উপনির্বাচন কিন্তু অনেক সম্ভাবনার ইঙ্গিত দেবে। আমরা আমাদের দর্শকদের জিজ্ঞেস করেছিলাম যে ইন্ডিয়া জোটে তৃণমূল, কংগ্রেস এবং বাম দলগুলো আছে, ৩১ তারিখে আবার তারা মুম্বই বৈঠকেও যাবে। এদিকে তারা এ রাজ্যে ধূপগুড়ি উপনির্বাচনে একে অন্যের বিরুদ্ধে লড়বে, এটা কী ধরনের জোট? শুনুন মানুষজন কী বলেছেন।
ক’দিন আগেই রাজ্য কংগ্রেস সভাপতি, লোকসভায় কংগ্রেস দলের নেতা অধীর চৌধুরী রাজনীতিতে অপার সম্ভাবনার কথা বলেছেন। আমরা সেই অপার সম্ভাবনার কথা জানি কিন্তু এটাও জানি যে এখনই বাম-তৃণমূল জোট সেই সম্ভাবনার তালিকাতে নেই। কিন্তু যেটা দেখার তা হল ধূপগুড়ি উপনির্বাচনে কংগ্রেসের ভূমিকা। তাঁরা প্রার্থী তো দেবেন না, কিন্তু বাম কংগ্রেসের জোটধর্ম মেনে প্রচারে যাবেন? তৃণমূলের বিরুদ্ধে প্রচার করবেন? নাকি ধূপগুড়ি থেকেই সেই অপার সম্ভাবনার নদী আর পুকুরের গল্প শুরু হবে?