নয়াদিল্লি: আফগান পরিস্থিতি নিয়ে ভারতের অবস্থান সংসদের নেতাদের সামনে তুলে ধরবে কেন্দ্র সরকার। বিদেশমন্ত্রকের তরফে সে বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য দেওয়া হবে। সোমবার দুপুরে টুইটে এ কথা জানান বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর। তিনি টুইটে লেখেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে আফগানিস্তানের পরিস্থিতির অগ্রগতির বিষয়ে সংসদের নেতাদের ব্রিফ দেবে বিদেশমন্ত্রক। সংসদ বিষয় মন্ত্রী প্রহ্লাদ যোশী এ বিষয়ে বিস্তারিত জানাবেন। সূত্রের খবর, আগামী ২৬ অগস্ট বৈঠক হবে৷
In view of developments in Afghanistan, PM @narendramodi has instructed that MEA brief Floor Leaders of political parties.
Minister of Parliamentary Affairs @JoshiPralhad will be intimating further details.
— Dr. S. Jaishankar (@DrSJaishankar) August 23, 2021
কয়েক সপ্তাহে তালিবানের আফগানিস্তান দখলের প্রক্রিয়া প্রায় সম্পূর্ণ। ফলে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে ২০ বছর ধরে গণতান্ত্রিক আফগানিস্তান নির্মাণে উদ্যোগী দেশ গুলি বড় ধাক্কার সম্মুখীন হতে চলেছে। তারমধ্যে শুধু যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাটো মিত্র নয়, ভারতও রয়েছে। আফগানিস্তানের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে বিভিন্ন দেশ নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করলেও ভারত এখনও কোনও উচ্চবাচ্য করেনি৷ তবে, কাবুলে ভারতীয় দূতাবাসের সমস্ত কর্মীকে ধাপে ধাপে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে৷ ভীত সন্ত্রস্ত আফগানিদের সাহায্যের আশ্বাসও দিয়েছে৷
আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশ, তালিবানরা যুক্তরাষ্ট্র, চীন, রাশিয়া, ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ বড় শক্তিগুলোর কাছ থেকে স্বীকৃতি নিয়ে নিতে পারে৷ কারণ, তারা যেভাবে অল্প দিনের মধ্যে আফগানিস্তান দখল নিয়েছে, তাতে গৃহযুদ্ধের আশঙ্কা অনেকটাই কমে গেছে। তাই, ভারতকে নতুন করে ভাবতে হচ্ছে। কারণ, আফগানিস্তানে শান্তি ও স্থিতাবস্থা ফেরাতে প্রায় ৩০০ কোটি ডলার অর্থ বিনিয়োগ করেছে ভারত। ভারত ও কাবুল শক্তিশালী অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক সম্পর্ক রয়েছে। ৯ কোটি ডলার বিনিয়োগে ভারত কাবুলে আফগান পার্লামেন্ট তৈরি করেছিল। ২০১৫ সালে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ভবনটি উদ্বোধন করেন। ২০১১ সালে আফগানিস্তান পুনর্গঠনের প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হয়ে কৌশলগত অংশীদারত্ব চুক্তি করেছিল ভারত। সেই চুক্তি অনুযায়ী, ১০ বছর ধরে আফগানিস্তানে বিপুল অর্থ ভারত বিনিয়োগ করেছে।
ভারতের বর্ডার রোড অর্গানাইজেশন আফগানিস্তানে ইরান সীমান্তের কাছাকাছি এলাকায় জরঞ্জ-দেলারাম নামে ২১৮ কিলোমিটার দীর্ঘ সড়ক নির্মাণ করেছে। প্রায় ১৫ কোটি ডলার ব্যয়ে তৈরি এই সড়ক কান্দাহার, গজনি, কাবুল, মাজহর-ই-শরিফ ও হেরাত শহরকে ছুঁয়ে গেছে। এ রাস্তা দিয়ে পাকিস্তানকে এড়িয়ে ইরানের চাবাহার বন্দর ব্যবহার করতে পারে নয়াদিল্লি। কাবুলে বিদ্যুৎ সরবরাহ বাড়ানোর জন্য বাঘলান প্রদেশের রাজধানী পুল-ই-খুমরি থেকে ২০০ কেভি ডিসি ট্রান্সমিশন লাইন স্থাপনেক কাজ করেছে ভারত। ইন্ডিয়ান মেডিকেল মিশনের আওতায় আফগানিস্তানে জায়গায় জায়গায় বিনা মূল্যের চিকিৎসা পরিষেবা ছাড়াও বহু ক্লিনিক তৈরি করেছে নয়াদিল্লি। ২০১৬ সালে আফগানিস্তানে সালমা বাঁধ নামে একটি বাঁধ তৈরি করে ভারত।
২০০৯ সালে ভারত, আফগানিস্তান ও আগা খান ডেভেলপমেন্ট নেটওয়ার্কের পুনঃস্থাপনের জন্য একটি ত্রিপক্ষীয় চুক্তি স্বাক্ষর করে। আগা খান ট্রাস্ট ফর কালচার প্রকল্পটি ২০১৩ থেকে ২০১৬ সালের মধ্যে সম্পন্ন করে। শুধু তা–ই নয়, ভারত সরকার আফগানিস্তানকে ২০০ মিনিবাস, ৪০০ বাস, ১০৫ সরকারি গাড়ি, ২৮৫টি সেনার গাড়ি, ৫টি শহরে ১০টি অ্যাম্বুলেন্স, ৩টি এয়ার ইন্ডিয়ার বিমান উপহার হিসেবে দিয়েছিল। বিশ্লেষকদের মতে, তালিবান–সংকট আফগানিস্তানে ভারতের বিনিয়োগকে ব্যর্থ করে দেবে কি না, তা বড় প্রশ্ন৷ এরকম পরিস্থিতি আগামী ২৬ অগস্ট আফগান পরিস্থিতি নিয়ে ভারতের অবস্থান সংসদের নেতাদের সামনে তুলে ধরবে কেন্দ্র সরকার।