রবিবার ডুরান্ড ডার্বি ঘিরে দুই ক্লাবের সমর্থকদের আবেগের যে বন্যা বয়েছে ময়দানে সেই তুলনায় দুই ক্লাবের ফুটবল টিম তেমন প্রস্তুত নয়। নামেই দুই দল দুটো করে ম্যাচ খেলেছে। এবং কোনও দলই একটা ম্যাচেও জেতেনি। দুটো ম্যাচে ইস্ট বেঙ্গল একটা গোলও করতে পারেনি। আর মোহনবাগান তিনটে গোল করলেও চারটে গোল খেয়েছে। এই অবস্থায় রবিবাসরীয় সন্ধ্যায় কোন টিম এগিয়ে তা বলা খুব মুশকিল। তবে এটিকে মোহনবাগানের পক্ষে যেটা অ্যাডভ্যান্টেজ হতে পারে তা হল তাদের মোটামুটি সেট টিম। ডিফেন্সে ফিওরিন্টিন পোগবা এবং আশিস রাই যেমন নতুন , তেমনই প্রীতম কোটাল এবং শুভাশিস বসু আবার বহু স্মরণীয় যুদ্ধের বিজয়ী যোদ্ধা। সাম্প্রতিক কালে দুই দলের ডার্বিতে গত পাঁচটা ম্যাচেই জিতেছে মোহনবাগান এবং প্রীতম-শুভাশিস সেই পাঁচটা ম্যাচের মধ্যে চারটিতে খেলেছেন এবং জিতেছেন।
তবে মোহনবাগানের আসল শক্তি তাদের ফ্রন্ট লাইনে। মাঝ মাঠ এবং অ্যাটাকে পরীক্ষিত যোদ্ধার ছড়াছড়ি। জনি কাউকো, হোগো বুমো, কার্ল ম্যাকহিউর মতো আই এস এল-এর সফল বিদেশিদের পাশাপাশি ভারতীয় ব্রিগেডও বেশ জোরদার। লিস্টন কোলাসো যেদিন নিজের ফর্মে থাকবেন সেদিন তাঁকে আটকানো মুশকিল। এই গোয়ান মূলত বাঁ দিক দিয়ে অপারেট করতে করতে কখন যে বক্সের মধ্যে পেনিট্রেটিভ জোনে পৌছে যান তার হদিশ পায় না বিপক্ষ ডিফেন্স। তাঁর সঙ্গে ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার হিসেবে দীপক টেংরি কিংবা অ্যাটাকিং মিডিও হিসেবে মনবীর সিং বেশ ভাল। এদের পাশে থাকবেন নতুন মরসুমের মোহনবাগানের তাজা ঘোড়া আশিক কুরিয়ান। এই ছেলেটা গোল করতে পারে। গোল করাতে পারে। আর গত মরসুমে লাল হলুদের বিরুদ্ধে হ্যাটট্রিক করা কিয়ান নাসিরির হয়তো জায়গা হবে না প্রথম একাদশে। কিন্তু সুপার সাব হিসেবে তিনি কিন্তু কারুর চেয়ে কম নয়। গোলে গত বছর ছিলেন অমরিন্দর সিং। এবার এসেছেন বিশাল কাইথ। দুটো মাত্র ম্যাচ হয়েছে। বাগান কোচ জুয়ান ফেরান্দো প্রথম ম্যাচে আর্শ আনোয়ারকে খেলিয়েছেন। কিন্তু তিনি সেই ম্যাচে তিন গোল খাওয়ায় মুম্বই সিটি এফ সি ম্যাচে বিশালকে নামিয়েছেন। বিশালও একটি গোল খেয়েছেন। কিন্তু বেশির ভাগ সময় তিনি বিশাল ভরসা জুগিয়েছেন।
একটা কথা খুব শোনা যাচ্ছে। তা হল রয় কৃষ্ণ এবং ডেভিড উইলিয়ামসের মতো প্রতিষ্ঠিত স্ট্রাইকারদের ছেড়ে দিয়ে ভুল করেছে মোহনবাগান। এখনই এই ব্যাপারে শেষ কথা বলা যাবে না। জুয়ান ফেরান্দো ভাল কোচ। গত বছর এফ সি গোয়াকে ডুরান্ড চ্যাম্পিয়ন করেছেন। মোহনবাগানকে আই এস এল-এ চ্যাম্পিয়ন করতে না পারলেও তাৃঁর টিমের খেলা প্রশংসা কুড়িয়েছে। একটা গেম প্ল্যান অনুযায়ী তিনি দলটা নিজের মতো করে সাজিয়েছেন। রয় কৃষ্ণর মতো স্ট্রাইকার তো গাছে ফলে না। ডেভিড উইলিয়ামস সম্পর্কেও একই কথা। কিন্তু লিস্টন কোলাসো, মনবীর সিংরা যে গোল করতে জানেন না তা তো নয়। এখন তাদের সেই স্ট্রাইকিং বুট জোড়া তাঁরা রবিবারের ডার্বিতে খুঁজে পাওয়া যায় কি না তাই এখন দেখার।
কী করবে ইমামি ইস্ট বেঙ্গল? তাদের টিম তো তৈরিই হয়নি। ইনভেস্টর এসেছে দেরিতে। টিম হয়েছে দেরিতে। বিদেশি ফুটবলার এসেছে দেরিতে। প্র্যাক্টিস শুরু হয়েছে দেরিতে। এমনই কপাল তাদের যে ডার্বির আগের দিন প্র্যাক্টিসও করতে পারলেন না ফুটবলাররা। কোচ স্টিভন কনস্ট্যানটাইন বিকেলে প্র্যাক্টিস ডেকেছিলেন। নিউ টাউনের হোটেল থেকে ঠিক সময়ে ইস্ট বেঙ্গল মাঠেও পৌছে যান ফুটবলাররা। কিন্তু দুপুরের প্রবল বৃষ্টিতে মাঠে জল জমে যাওয়ায় প্র্যাক্টিস বাতিল করে দিতে হল কোচকে।
এই অবস্থায় ইস্ট বেঙ্গলের ভরসা বিদেশিরা। কাগজে কলমে পাঁচজন বিদেশি এখন লাল হলুদ ড্রেসিং রুমে মজুত। কিন্তু তাঁরা যে কী রকম ফর্মে আছেন তার কোনও হদিশ পাওয়া যায়নি। জামশেদপুর থেকে আসা ব্রাজিলিয়ান মিডফিল্ডার অ্যালেক্স লিমাকে দুটো ম্যাচেই খেলানো হয়েছে। লিমা এখনও তাঁর জাত চেনাতে পারেননি। বাকি চারজনের মধ্যে ইভান গঞ্জালেস বহু দিন ভারতীয় ফুটবলে খেলছেন। এফ সি গোয়ার সেন্টার ব্যাক ছিলেন। কনস্ট্যানটাইন তাঁকে রাজস্থান ইউনাইটেড ম্যাচের শেষ দিকে নামিয়েছিলেন। ওইটুকু সময়ে তাঁকে বোঝা যায়নি। সাইপ্রাসের ডিফেন্ডার কিরিয়াকৌ দুটো ম্যাচেই খেলেছেন। আহামরি লাগেনি। ব্রাজিলিয়ান স্ট্রাইকার এলিয়ান্দ্রো রাজস্থান ম্যাচে শেষ দিকে নেমেছিলেন। প্যাসেঞ্জার মনে হয়েছে।
বিদেশিরা নন, ইস্ট বেঙ্গলকে ভরসা জোগাতে পারেন স্বদেশীরা। আনকোরা ছেলে তুহিন দাস গত সন্তোষ ট্রফিতে বাংলার হয়ে ভাল খেলেছিলেন। বাঁ পায়ের ফুটবলার তুহিন লেফট হাফে বেশ ভাল খেলছেন। সুমিত পাসি লাল হলুদ কোচের খুবই ফেভারিট প্লেয়ার। কখনও রাইট ব্যাকে কখনও মাঝ মাঠে তাঁকে খেলিয়েছেন কোচ। খুব খারাপ নন। দুই নতুন ডিফেন্ডার লালচুংনুঙ্গা এবং জেরি লালরিনজুয়ালার উপর ভরসা করা যায়। কিন্তু এখনও ভাল বিদেশির সামনে তাদের পরীক্ষা হয়নি। গোলে কমলজিৎ সিং দোটো ম্যাচেই মন জয় করে ফেলেছেন। রবিবার ইস্ট বেঙ্গলকে যদি মাথা উঁচু করে মাঠ ছাড়তে হয় তা হলে কমলজিতের হাত জোড়ার হাতযশ দেখাতে হবে।
তবে এ সব কথা হচ্ছে কাগজে কলমে। বড় ম্যাচে বেশির ভাগ সময় এ সব হিসেব মেলে না। একটা ভাল থ্রু পাস, একটা ভাল হেড, একটা ভাল শট ম্যাচের রঙ পাল্টে দিতে পারে এক লহমায়। আবার একটা সামান্য ভুলও অসামান্য হয়ে বিপদ ডেকে আনতে পারে। সব মিলিয়ে বড় ম্যাচের অঙ্ক যে কখন পাল্টে যাবে তা বলা যায় না। তবু মোহনবাগান সেট টিম। তাদের বিদেশিরা লাল হলুদের তুলনায় অনেক এগিয়ে। এই বিদেশিদের জন্যই রবিবারের ডুরান্ড ডার্বিতে এগিয়ে এটিকে মোহনবাগানই।