skip to content
Thursday, July 4, 2024

skip to content
Homeচতুর্থ স্তম্ভচতুর্থ স্তম্ভ : বনধ, বনধ, আবার বনধ

চতুর্থ স্তম্ভ : বনধ, বনধ, আবার বনধ

Follow Us :

বনধ, মিছিল, ধরনা, জমায়েত, এমনকি অনশন প্রতিবাদের নানান উপায়, আজ থেকে নয়, বহুকাল ধরেই প্রতিবাদী মানুষেরা নানান ইস্যুতে বিভিন্ন আন্দোলনের সময় এসব করেছেন, করছেন, করবেনও। হাঁড়িকাঠে মাথা ঢোকানো ছাগলের ধড় থেকে মাথা নামিয়ে দিতে, ছুরি নয়, রাম দা লাগে, পেয়ারা কাটতে রাম দা নয় ছুরি লাগে, এও সবার জানা। অতএব আন্দোলনের ধাপে ধাপে, তার বিস্তারের সঙ্গে সঙ্গে তার স্বরূপও বদলায়। রাজা, সামন্ত, সম্রাটদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ হয়েছে, ষড়যন্ত্র হয়েছে, আন্দোলন নয়। শিল্পবিপ্লবের হাত ধরে যে আধুনিক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ব্যবস্থার উদয় হল, সেই রাষ্ট্রব্যবস্থাতে মূলত শ্রমিক, সাধারণ মানুষ আন্দোলনের এই সমস্ত ধাপগুলো নিয়ে মাঠে নামে, তাকিয়ে দেখুন হে মার্কেটে শ্রমিকদের লড়াইয়ের দিকে, ৮ ঘন্টার কাজের দাবিতে লড়াই, আন্দোলন, জমায়েত, মিছিল।

তারপর থেকে পৃথিবীর দেশে দেশে শাসকের অন্যায়ের বিরুদ্ধে আন্দোলন হয়েছে, সব দেশে, আমাদের দেশেও। স্বাধীনতার আগে ব্রিটিশ সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনের সময় হরতাল হয়েছে, বনধ হয়েছে, রোজ সভা, সমাবেশ মিছিল হয়েছে, গান্ধীজি অনশন করেছেন, কংগ্রেস নেতারা অনশন করেছেন, আন্দোলনের প্রতিটা ধাপ, আন্দোলনের ইস্যুকে, আন্দোলনের বিষয়বস্তুকে মানুষের কাছে নিয়ে গিয়েছে, মানুষ আরও বেশি বেশি করে সেই আন্দোলনে যোগ দিয়েছেন, আন্দোলন এগিয়েছে, সফল হয়েছে, এবং এই প্রত্যেকটা আন্দোলনের মিলিত ফসল আমাদের দেশের স্বাধীনতা।

চম্পারণ সত্যাগ্রহ, বরদলই সত্যাগ্রহ, অসহযোগ আন্দোলন, লবণ আইন ভঙ্গ আন্দোলন থেকে ৪২ এর ভারত ছাড়ো আন্দোলন, এ সবই ছিল স্বাধীনতা আন্দোলনের বিভিন্ন ধাপ৷ কখনও মিছিল হয়েছে৷ কখনও হরতাল, মানুষের মধ্যে দেশের স্বাধীনতার চাহিদা তৈরি করেছে এই সমস্ত আন্দোলন, মানুষ আরও বেশি করে জড়ো হয়েছে। এবার স্বাধীনতা এল৷ তারপরেও মানুষের আন্দোলন কি থেমেছে? এই বাংলাতেই আমরা তেভাগা আন্দোলন দেখেছি, তিনভাগের একভাগ ফসল চাই, এই দাবীতে মিছিল, সভা, হরতাল হয়েছে, গ্রামের কৃষক বুঝেছেন দাবীর কথা, আন্দোলনে সামিল হয়েছেন। চাল নেই, খাদ্য আন্দোলন শুরু হয়েছে, ভাত চাই দাবীতে স্তব্ধ হয়ে গেছে মহানগর কলকাতা, গুলি চলেছে, হরতাল হয়েছে, মানুষ ঘর থেকে বের হন নি, বের হলেও মিছিলে গেছেন আবার, ট্রাম বাস ভাড়ার বিরুদ্ধে আন্দোলন, সেদিন ধর্মতলা বাস ডিপোর দখল নিয়েছিল কমিউনিস্ট পার্টি, মানুষ বাস ভাড়া, ট্রামভাড়া বাড়ানোর বিরুদ্ধে রাস্তায় নেমেছিলেন, ৪৮ ঘন্টা বনধ হয়েছে, মানুষ সামিল হয়েছে।

প্রাথমিক শিক্ষকদের মাইনে, স্থায়িত্ব নিয়ে আন্দোলন, ডাক তার কর্মীদের আন্দোলন হয়েছে, মানুষ জেনেছেন কোন ইস্যুতে আন্দোলন হচ্ছে, মানুষ সমর্থন করেছেন, ৭৪ এর রেল ধর্মঘট, কেবল রেল শ্রমিকরা নয়, রাস্তায় নেমেছেন সাধারণ মানুষ। শ্রমিকদের অধিকার হরতাল করার, স্ট্রাইক করার, মালিকরা ছাঁটাই করবে তাদের ইচ্ছে মত, শ্রমিকরা তার বিরুদ্ধে স্ট্রাইক করবে, এটাই তো স্বাভাবিক। হরতাল বললেই সলিল চৌধুরির গানের কথা মনে পড়তো সবার,
শোষণের চাকা আর ঘুরবে না ঘুরবে না, চিমনীতে কালো ধোঁয়া উঠবে না উঠবে না, বয়লারে চিতা আর জ্বলবে না জ্বলবে না।
চাকা ঘুরবে না, চিতা জ্বলবে না, ধোঁয়া উঠবে না
লাখে লাখ করতাল হরতাল হেঁকেছে, হরতাল, হরতাল, হরতাল।
আজ হরতাল, আজ চাকা বন্ধ।

খাদ্য আন্দোলনের শহীদ নুরুল ইসলামের মৃত দেহ নিয়ে মিছিল হয়েছে, স্তব্ধ হয়েছে রাজপথ, এসব বাংলা দেখেছে। বাম সরকার ক্ষমতায় এসেছে, তারপরেও হয়েছে হরতাল, বনধ, বিভিন্ন ইস্যুতে হয়েছে। কিন্তু ক্রমশ এই বনধ হয়ে উঠল এক নিছক আনুষ্ঠানিকতা, বছরে নিয়ম মাফিক একটা, দুটো তিনটে বনধ হতে থাকলো, সকাল থেকে একই ছবি, পাড়ায় পাড়ায় রাস্তার ওপর ক্রিকেট খেলছে ছোটরা, খাসির মাংসের দোকানটা কেবল আধখোলা, দুপুরে মাংস ভাত, বনধ নয়তো যেন হলিডে।

তারও কিছুদিন পর থেকে বনধ হতে থাকল শুক্রবার বা শনিবার, রবিবারের সঙ্গে মিলিয়ে৷ এক আধদিনের ছুটির সঙ্গে মিলিয়ে, তিনদিন, কখনও চারদিনের নির্ভেজাল ছুটি৷ দিঘা, মন্দারমনি, বকখালিতে হৈ হৈ রৈ রৈ৷ আজ হরতাল আজ চাকা বনধ এর জায়গায় আজ আমাদের ছুটি রে ভাই আজ আমাদের ছুটি৷

সিনেমা হল হাউসফুল, সক্কাল থেকে রুটিনটা ছিল কিছুটা এই রকম। সিগারেটের দোকান আধখানা ঝাঁপ খোলা৷ মাংসের দোকানেও তাই। সাতটার মধ্যে পাড়ার মোড়ে ভ্যাবলা দা, ন্যাপলা দা, ক্যাবলা দারা হাজির, বাজারের দোকানদার, অটো চালক, রিকশা চালকদের হাজিরা মাস্ট, আসতেই হবে। তারপর, কালোদার দোকানের লিকার চায়ে গলা ভিজিয়ে স্লোগান উঠল, বনধ বনধ বাংলা বনধ। আধঘন্টার প্রোগ্রাম, মেজ সেজ নেতারা ভাষণ দিলেন৷ কেন্দ্র সরকারের বিমাতৃসূলভ আচরণ, আমেরিকার সঙ্গে গ্যাট চুক্তি, মাসুল সমীকরণ নীতি ইত্যাদি সাংঘাতিক বিষয়৷ কিছু পথ চলতি লোক, নেতার চোখের সামনে চলে যাওয়াটা বিবেচনার কাজ হবে না বলেই দাঁড়িয়ে গ্যালো,

কিন্তু নেতা যা বললেন, তার বিন্দুবিসর্গও বুঝলেন না, বোঝার চেষ্টাও করলেন না, ভাল করে শুনলে বোঝা যাবে, সেই নেতাও এই বিষয়গুলোর বিন্দু বিসর্গ বোঝেন নি, জানেন না। তাতে কী? আধঘন্টা পর দু মিনিট দম ধরে রেখে ইনকিইইইইইইলাব জিইইইইইইন্দাবাদ, দুনিয়াআআআর মজদুর এক হও বলার পরে সভা শেষ, আবার লাল চা, অতঃপর ভ্যাবলা দা, ন্যাপলা দা, ক্যাবলা দা বাড়ি ফিরে গেলেন, রাস্তার দখল নিল ছোটরা, ওধারে একদিনের ফুটবল টুর্নামেন্ট, এইট সাইড, ৮ টা করে খেলোয়াড়, শুরু হয়ে গেল। বিকেল বেলায় মুখ্যমন্ত্রী এবং দলের রাজ্য সম্পাদক, বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বনধ সফল করার জন্য মানুষকে অভিনন্দন জানালেন৷ বিরোধী দলনেতা বা নেত্রী সেই একই জনগণকে বনধ ব্যর্থ করার জন্য অভিনন্দন দিলেন৷ বিকেলেই বাস, অটো চলা শুরু, নন্দন বন্ধ তো কি, নবীনা খোলা, ইলোরা অজন্তা খোলা, চল পানসি বেলঘরিয়া।

পরদিন সকালে আবাপ এ হাওড়া ব্রিজের জনশূন্য ছবি, বনধ শেষ। দু চারটে বোমাবাজি, কিছু বিক্ষিপ্ত সংঘর্ষ ছাড়া বনধ শান্তিপূর্ণ কেটে গেল। আবার মাস ছয়েক, মাস আটেক পর বনধ, আবার গ্যাট চুক্তি, আবার ডাঙ্কেল চুক্তি, আবার মাসুল সমীকরণ প্রত্যাহার কর, আবার কেন্দ্রের বিমাতৃ সুলভ আচরণের প্রতিবাদ।

স্ট্রাইক বলতে যে রক্ত চলকে ওঠা, স্ট্রাইক মানে যে প্রত্যয়, হরতাল মানে যে ঝাঁজালো স্লোগান, সে সব মুছে গিয়ে বনধ হয়ে উঠল নিছক ছুটির দিন৷ শেষমেষ এমনও হল যে কমিউনিস্ট পার্টির পলিটব্যুরো সদস্য, রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী এক সাক্ষাৎকারে বলেই ফেললেন যে আমি লজ্জিত, আমার দল এ ধরনের বনধ ডাকে, তার জন্য আমি লজ্জিত। তার মানে কি বনধ হবে না? হরতাল ভুলে যাব আমরা? স্ট্রাইক করবে না শ্রমিক? না, তা তো নয়। কিন্তু আন্দোলনের এই হাতিয়ারকে, এমনভাবে ব্যবহার করা হল যে হরতাল, স্ট্রাইক তার অন্তর্বস্তু খুইয়ে ফেললো৷ তাকে হাস্যকর করে তোলা হল৷ তাকে বিরক্তিকর করে তোলা হল৷ তাকে অকেজো করে দেওয়া হল। লোকে বনধ শুনলে জানতে চায় না কেন বনধ? হরতাল শুনলে জানতে চায় না কেন? কোন ইস্যুতে এই হরতাল?

বরং আগের দিনেই যারা পারে তারা মাংস কিনে আনে, যাদের না বের হলে সেদিনের মজুরি জুটবে না৷ তারা অসহায়ভাবে বসে থাকে, মানুষের জন্য বনধ, মানুষের কাছে এইভাবেই প্রহসন হয়ে দাঁড়ায়। আজও তো এমন মানুষ বহু আছেন, যাঁরা কাজে বের হলে দিনের শেষে টাকা পান, বাড়িতে পোষা হাঁস বা মুরগির ৬ টা ডিম নিয়ে বাজারে বিক্রি করতে যান, পুকুরের ধার থেকে কয়েকগাছা হেলেঞ্চে, কলমি তুলে ১০/২০ টাকা পাবেন বলে বাজারের এক কোণায় বসে থাকেন, তাঁরা কী করবেন? কোনও বনধ ডাকা পার্টি তাদের সেদিনের রোজগার তাদের হাতে তুলে দেবে?

আবার অন্যদিকে প্রতিদিন বাড়তে থাকা জিনিসের দাম, দেশটাকে বেচে দেবার চক্রান্ত, দেশের মানুষকে দেশকে, সমাজকে ধর্মের ভিত্তিতে ভাগ করে দেবার চক্রান্ত চালাচ্ছে যে সরকার, তার বিরুদ্ধে আন্দোলন হবে না? বনধ হবে না? স্ট্রাইক হবে না? মিছিল, জমায়েত, অবরোধ, সভা সমাবেশ হবে না? হতেই হবে, কিন্তু সে কথা তো মানুষকে বোঝাতে হবে, মানুষকে সঙ্গে নিয়েই তো সেই আন্দোলন হবে।

গান্ধীজি বলেছেন, হরতাল। কেবল হরতাল হয়নি, পালন করা হয়েছে অরন্ধন, কেউ মুখে কুটোটিও তোলেনি, যতীন দাসের মৃতদেহ নিজে কাঁধে করে নিয়ে আসলেন সুভাষ বসু, সেদিন হরতাল হয়েছিল, সভা হয়েছিল শহীদ মিনারে, অরন্ধন পালন করা হয়েছিল ঘরে ঘরে, মানুষকে বোঝাতে পারলে পেটে গামছা বেঁধেও মানুষ স্ট্রাইক করবে, কিন্তু তা যদি ক্রমশ এক আনুষ্ঠানিকতা হয়ে ওঠে? তাহলে? তাহলে মানুষের ক্ষতি, সমাজের ক্ষতি, খেটে খাওয়া মানুষের ক্ষতি, এবং সেটাই হয়েছে।

আচ্ছা আজ হঠাৎ এই কথাগুলো বললাম কেন? এই প্রসঙ্গের অবতারণা কেন? বলছি, বলছি। শুনলাম ২৮ এবং ২৯ মার্চ বনধ, ৪৮ ঘন্টার বনধ। আজ ২৫ মার্চ। কারা ডেকেছেন এই বনধ? কোন ইস্যুতে ডাকা হয়েছে এই বনধ? আমি তো জানি না, আপনারা জানেন?  জানলে আমাদের জানান, মতামত দিন, সঙ্গে থাকুন।

RELATED ARTICLES

Most Popular

Video thumbnail
TMC | আইবুড়ো বিডিওর জন্য কী করলেন তৃণমূল নেত্রী?
00:00
Video thumbnail
T20 WorldCup | India | টিম ইন্ডিয়ার বিজয় মিছিল মেরিন ড্রাইভে থিকথিকে ভিড়
00:00
Video thumbnail
T20 WorldCup | India | মেরিন ড্রাইভেই জনসমুদ্র! কী করল টিম ইন্ডিয়া?
00:00
Video thumbnail
Narendra Modi | যেমন বুনো ওল তেমন বাঘা তেঁতুল মোদিকেই চ্যালেঞ্জ কংগ্রেসের
00:00
Video thumbnail
Rahul Gandhi | রেকর্ডে বাদ রাহুলের ভাষণ পাল্টা নিশানা মোদিকে!
00:00
Video thumbnail
Lake Gardens Murder | হোটেলে গুলিবিদ্ধ প্রেমিকার নতুন বন্ধুর খোঁজ! ত্রিকোণ প্রেমেই কি গুলি?
00:00
Video thumbnail
Hathras | কোথায় লুকিয়ে ভোলে বাবা! দেখে নিন ভিডিও
00:00
Video thumbnail
BJP Leader | বাংলার বিজেপি নেতা সাসপেন্ড, কোন কাজের জন্য?
00:00
Video thumbnail
TMC | BDO | বিডিও পা ছুঁলেন তৃণমূল নেত্রীর, হুলস্থুল কাণ্ড
00:00
Video thumbnail
Hathras | আশ্রম কব্জায় বাবার সমর্থকদের, মাটিতে জল ঢেলে রাস্তা আটকানো ভয়ঙ্কর অবস্থা, দেখুন ভিডিও
00:00