পুরুলিয়া: দেশজুড়ে পালিত হচ্ছে স্বাধীনতার ৭৫তম বর্ষ। অথচ স্বাধীনতার এত বছর পরেও এমন কিছু অঞ্চল আছে, যেখানে শিক্ষার আলো পৌঁছয়নি। আশা ছিল, সরকার থেকে নিশ্চই স্কুল তৈরির দিকেও জোর দেওয়া হবে। কিন্তু এতো বছরেও তা হয়নি। তাই সরকার বা মন্ত্রীর অপেক্ষায় না থেকে এলাকায় স্কুল তৈরির উদ্যোগ নিলেন এক গ্রামবাসী। স্কুল বানানোর জন্য নিজের জমি শিক্ষা দফতরকে দান করলেন আদিবাসী সম্প্রদায়ের ওই ব্যক্তি।
পুরুলিয়ার (Purulia) আড়ষা থানার অন্তর্গত অযোধ্যা পাহাড়তলীর আদিবাসী গ্রাম ফুসড়াটাড়। প্রায় শতাধিক পরিবারের বাস এখানে। এই গ্রামে কোনও স্কুল ছিল না এত দিন। গাছতলা থেকে শুরু হয়েছিল পঠনপাঠন। সেখান থেকে পাড়ার জরাজীর্ণ টালির ছাউনি দেওয়া একটি ছোট্ট ক্লাবঘরে চলত পড়াশোনা। প্রায় ৫০ জন আদিবাসী পড়ুয়া আর দু’জন শিক্ষকদের নিয়ে চলত পাঠনপাঠন। অতিবৃষ্টির দিনে বা চড়া গরমের মধ্যে বন্ধ থাকত ক্লাস। তখন সমস্যায় পড়তে হত ছাত্রছাত্রী এবং শিক্ষকদের। মিড-ডে-মিলের ঘর বলে আলাদা করে কিছু ছিল না তাঁদের। খোলা আকাশের নীচে দেওয়া হত মিড-ডে-মিল। কিন্তু বর্ষার সময় সেও বন্ধ। এই অবস্থায় একটি স্কুল ভবনের ভীষণ ভাবে দরকার ছিল ছাত্রছাত্রীদের। এমনকি বেশকিছু পড়ুয়াদের কয়েক কিলোমিটার দূরে রাধানগর বা মুদালী গ্রামে পড়তে যেতে হয়। এত অসুবিধার কারণে দীর্ঘ ৪০ বছরেরও বেশি সময় ধরে এলাকায় একটি স্কুল তৈরির জন্য লড়াই চালিয়ে ছিলেন আদিবাসীরা।
আরও পড়ুন : Turga Hydroelectric Project: পুরুলিয়ায় টু্রগা জলবিদ্যুৎ প্রকল্পে ছাড় কলকাতা হাইকোর্টের
তাঁদের এই লড়াইয়ে আরও এক ধাপ এগিয়ে থাকলেন ওই গ্রামেরই এক বাসিন্দা নরেন চন্দ্র হাসদা। স্কুল ভবন তৈরির জন্য শিক্ষা দফতরকে প্রায় ১২ ডেসিমেল জমি দান করেছেন তিনি। পরিকল্পনা অনুযায়ী, এই স্কুল ভবনের মধ্যে একটি ঘর থাকবে। একটি শেড তৈরি করা হবে, যেখানে মিড ডে মিলের রান্না ও খাওয়া দাওয়ার ব্যবস্থা থাকবে। শৌচালয় নির্মাণ করা হবে। মঙ্গলবার থেকে এই স্কুল ভবন নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছে। কোভিড পরিস্থিতির মধ্যে বন্ধ স্কুল। এই সময়ের মধ্যে নতুন স্কুল নির্মাণ শেষ হয়ে যাবে বলে জানিয়েছেন আদিবাসীরা। কোভিড পরিস্থিতি কেটে গেলে নতুন স্কুল ভবনে গিয়ে পড়াশোনা করতে পারবে ছাত্রছাত্রীরা।