কলকাতা টিভি ওয়েব ডেস্ক: অল্ট নিউজের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা, সাংবাদিক মহম্মদ জুবেরকে গ্রেফতার করেছে দিল্লি পুলিস। তাঁর বিরুদ্ধে একটি নির্দিষ্ট সম্প্রদায়ের ধর্মীয় ভাবাবেগে আঘাত দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। যার জেরে হিংসা ছড়াতে পারে বলে পুলিসের আশঙ্কা। ২০১৮ সালে জুবের টুইটারে একটি ছবি পোস্ট করেন। ছবির সঙ্গে করা মন্তব্যে ‘ইচ্ছাকৃত ভাবে একটি নির্দিষ্ট ধর্মের দেবতাকে অপমান’ করার অভিযোগ ওঠে তাঁর বিরুদ্ধে। চলতি মাসে পুলিসের কাছে একটি অভিযোগও দায়ের হয়। সেই অভিযোগের ভিত্তিতেই তাঁকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে দাবি পুলিসের।
জুবেরের গ্রেফতারকে শাসকের অসহিষ্ণু মনোভাবের একটি উদাহরণ বলা যায়। এই ঘটনা সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের ধর্মান্ধতাকে মোকাবেলা করতে চাওয়া যে কারও প্রতি তার বিদ্বেষকে সামনে আনে। পাশাপাশি, সংখ্যালঘু কর্মীদের আলাদা করে চিহ্নিত করার প্রবণতাকে উৎসাহ দেয়। ঠিক যেমন প্রশাসনিক বাড়াবাড়ি থেকে শুরু করে বিক্ষোভকারীদের বাড়িঘর ভেঙে দেওয়া এবং পুলিস এবং তদন্তকারী সংস্থাগুলির অভিযোগের ভিত্তিতে কর্মীদের কারারুদ্ধ করা। এটা দেখা যাচ্ছে, হিন্দু দেবতা হনুমানের বিরুদ্ধে কথিত কটূক্তির জন্য তার বিচার নয়, বরং দীর্ঘ নিপীড়নের সূচনা করছে।
পুলিসের দাবি, যথেষ্ট তথ্যপ্রমাণ হাতে নিয়েই জুবেরকে গ্রেফতার করা হয়েছে। গ্রেফতারির পর তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিস। ২০১৮ সালে যে ‘যন্ত্রে’র (পড়ুন মোবাইল ফোন) সাহায্যে তিনি ওই টুইট করেছিলেন, তা পুলিসকে দিতে তিনি অস্বীকার করেছেন। দিল্লি পুলিসের কাছে জুবের দাবি করেন, ২০১৮-য় যে যন্ত্রের মাধ্যমে তিনি ওই টুইট করেছিলেন, তা হারিয়ে গিয়েছে। পরে অবশ্য জুবেরের বেঙ্গালুরুর বাড়ি থেকে ওই মোবাইল ফোনটি উদ্ধার করা হয়েছে বলে দিল্লি পুলিসের একটি সূত্রে খবর।
তিনি যে ছবিটি শেয়ার করেছেন সেটি একটি সিনেমার অংশ থেকে নেওয়া হয়েছে। যা দেখে মনে হয় যে, ভগবান হনুমানের অপমানের কথা অযৌক্তিক। কারণ, দেবতার বিরুদ্ধে কোনও ইঙ্গিত নেই। একজন ম্যাজিস্ট্রেট এফআইআর গ্রহণের পাশাপাশি পুলিস হেফাজত মঞ্জুর করেছেন।
আরও পড়ুন- ‘2611’: বাইক নম্বর ২৬১১!কেন পাঁচ হাজার খরচ করেছিল ধৃত রিয়াজ? উত্তর হাতড়াচ্ছে পুলিস
প্রশ্ন এখানেই। চার বছর আগে বলা কিছু কী ভাবে আজ শত্রুতাকে উস্কে দেবে ? সুপ্রিম কোর্ট নির্ধারণ করেছে, ২৯৫-এ শুধুমাত্র ধর্মের অবমাননার শাস্তির কথা বলা আছে। যা ইচ্ছাকৃত এবং বিদ্বেষপূর্ণ উদ্দেশ্য নিয়ে করা হয়। জুবেরের গ্রেফতার নিয়ে নিন্দার ঝড় উঠেছে। এটা দুর্ভাগ্যজনক হলেও, প্রশ্ন উঠছে তাহলে কি এই সরকার বাক-স্বাধীনতা এবং গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের রক্ষাকারী হিসাবে নিজেকে দেখাতে চায় না। কর্মী ও সাংবাদিকদের উপর আক্রমণ বা দমন-পীড়ন নিয়ে মুখ খুলতে চায় না। ন্যায়বিচারের এই ‘প্রতারণা’কে অব্যাহত রাখার পরিবর্তে, সরকারের উচিত এই জঘন্য মামলা প্রত্যাহার করে তাকে মুক্তি দেওয়া।