পঞ্চায়েত ভোট হয়ে গেলে তৃণমূলের দু’ নম্বর নেতা বিদেশে যাবেন, এ রাজ্যের কনিষ্ঠ সাংবাদিকেরও জানা ছিল, খবর জোগাড় করতে হয়নি, অভিষেক নিজেই জানিয়েছিলেন। কিন্তু সাড়ে তেত্রিশ বাঘ শিকার করা এক সাংবাদিক স্কুপ নিউজ দিলেন, পাখি উড়ে গেছে। আমরা স্বপনকুমারের দস্যু কালনাগিনীতে পড়তাম, পাখি উড়ে গেছে, ঘর খাঁ খাঁ, এবারের মতো কালনাগিনী দীপক কুমারের হাত থেকে পালিয়ে গেল, এর পরের বারও পালাবে কিন্তু আমরা তা জেনেও পড়তে বসতাম সাগরবক্ষে কালনাগিনী। সেই রকম আর কী। কার কোথায় ঘটি উল্টে গিয়েছে তো জানা নেই, তো থাক সে কথা উনি স্কুপ খবর দিলেন। সে খবরে মেতে উঠল উচ্ছিষ্ট ভোজী ইউটিউবারেরা, যাদের জন্ম ২০১৪-র পর, মৃত্যু নির্ঘাত এই জমানার অবসানে। তাদের সম্মিলিত প্রচারে জানা গেল, ফিরলেই হাজতে ঢুকবে, তাই অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় আর দেশেই ফিরবেন না। ওদিকে দেশে তো এখন ইডি রাজ চলছে, এক অপূর্ব তদন্ত প্রক্রিয়া, তদন্তে শুধু কী কী পাওয়া গেছে তাই-ই নয়, কী কী পাওয়া যেতে পারে এবং সেগুলো পেলে কী কী করা হবে তাও জানিয়ে দেন তাঁরা। চুপি চুপি নন, এঁরাও ওই দীপক কুমারের মতো এক হাতে টর্চ অন্য হাতে রিভলভার নিয়ে পাইপ বেয়ে বেয়ে ছাদে উঠে সাংবাদিকদের সব তথ্য জানাচ্ছেন, যাতে দোষীরা আগাম ব্যবস্থা নিতে পারে। সেসব কথা শুনেও আমআদমির মনে হল সত্যি বোধহয় পাখি পালিয়েছে। কিন্তু সংবাদমাধ্যম জানাল ইনি ১৭/১৮ তারিখ নাগাদ ফিরবেন। উনি ফিরলেন, এইবার প্রচার শুরু হল ওঁকে গ্রেফতার করা হবে। তো ওঁর গ্রেফতারির আগাম খবর আমরা গত এক বছর ধরেই পাচ্ছি, গ্রেফতার হলে খবর হবে, অন্যদের সঙ্গে আমাদেরও টিআরপি বাড়বে। আশায় বাঁচে চাষা, সাড়ে তেত্রিশ বাঘ মারা বৃদ্ধ সাংবাদিক সমেত সাংবাদিককুল অপেক্ষায় আছি কবে সেই দিন আসবে। শেষমেশ রাজ্যের বিরোধী দলনেতা আশার আলো জ্বালালেন, ঠিক প্রমাণ যাকে বলে তা নয়, কিন্তু অনেক কিছু বলে তিনি মোদ্দা জানালেন, হবে হবে, চাক্কি পিসিং, চাক্কি পিসিং। এদিকে খেলা জমে উঠতেই ঘুঁটি কাঁচিয়ে দেওয়ার জন্যই অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় জানালেন, সামনা সামনি আসুন, বিতর্ক হোক, দুধ কা দুধ পানি কা পানি হো যায়ে। মিডিয়ার সামনে বিতর্কে আহ্বান জানালেন তৃণমূলের যুবরাজ, এ রাজ্যে বিজেপির সিপাহসালার কে। সেটাই বিষয় আজকে অভিষেকের চ্যালেঞ্জ, শুভেন্দু ব্যাকফুটে।
আমরা লিপস অ্যান্ড বাউন্ডের কথা শুনেছি, আমরা কালীঘাট কাকুর জেলযাত্রা দেখেছি, তৃণমূলের দু’ নম্বর নেতার বিরুদ্ধে ইডির বিভিন্ন হয়ে উঠতে পারে অভিযোগেরও কথা শুনেছি। না, আমাদের কাছে সেসবের কোনও প্রমাণ ইত্যাদি নেই, ইডি যাঁকে যাঁকে জেলে পাঠায়, তাদের কারও কারও সঙ্গে সখ্য থাকে, জেল থেকে ছাড়ার শর্তেই সখ্য তৈরি হয়। সেই সখ্যের সুযোগে কারও কাছে তেমন প্রমাণ আছে কি না জানা নেই, কিন্তু আমাদের কাছে নেই। কিন্তু আমাদের কাছে নারদা মামলার সেই ভিডিওগুলো তো আছে, যেখানে আজকের শাসকদলের অনেককেই হাত পেতে, তোয়ালে মুড়ে টাকা নিতে দেখা গিয়েছিল, সে ছবি আমরা তো মুরলীধর লেনে বিজেপির দফতরেই প্রথম দেখেছিলাম, সে ভিডিও নিয়ে ইডি আর এগোচ্ছে না কেন? জানা নেই।
আরও পড়ুন: Aajke | পশ্চিমবঙ্গ দিবস চাই, চাই রাজ্য সঙ্গীত
সে ভিডিওর এক অংশতে আমাদের অধুনা বিরোধী দলনেতাকেও যত্ন সহকারে এক রাশ টাকা হাতে করে নিয়ে রাখতে দেখা গেছিল। সেই ছবি আবার টুইট করেছেন অভিষেক, ওপেন চ্যালেঞ্জ, মিডিয়ার সামনে বিতর্ক হোক, জয় বজরংবলী তোড় দে দুশমন কি নলি, আমনে সামনে লড়াই। আমরাও আবার আশায় বুক বেঁধেছিলাম, রোজ খুচরো খাচরা অভিযোগের বদলে শের কা দহাড় শোনা যাবে জননেতা শুভেন্দুদার মুখে। আমাদের টিআরপি বাড়বে, ওটাই তো বটমলাইন। কিন্তু কোথায় কী? সেই যে তিনি গোঁসা ঘরে ঢুকে খিল দিয়েছেন, আর বের হচ্ছেন না। কেন বের হচ্ছেন না? কারণ আমাদের কাছে খবর অভিষেক নাকি আরও কিছু জোগাড় করেছেন, সে সব দুসরা নিয়েই তিনি চ্যালেঞ্জ দিয়েছেন, সে খবর নাকি শুভেন্দুও পেয়েছেন, ওই এক পলাতক অপরাধীর সঙ্গে বিরোধী দলনেতার সখ্যের নয়া কাহিনির কিছু প্রমাণ নাকি এসেছে হাতে। জানি না, শুধু এটা জানি বাংলা বাজারে যাদবপুর দিয়ে আর টানা যাচ্ছে না, চাঁদের যা হওয়ার হয়ে গেছে, রাজ্যে ভরসা ছিল ওই চ্যালেঞ্জ, সেটাও হচ্ছে না, আমাদের কাছে দুঃসংবাদ। আমাদের দর্শকদের প্রশ্ন করেছিলাম, শুভেন্দু অভিযোগ করছিলেন, দুর্নীতির অভিযোগ, অভিষেক চ্যালেঞ্জ জানালেন মিডিয়ার সামনে মুখোমুখি আলোচনার, শুভেন্দু আসছেন না। তার মানে কি শুভেন্দু অধিকারী পিছিয়ে গেলেন? শুনুন দর্শকরা কী বলেছেন।
শুভেন্দু পিছোলেন তো বটেই, কিন্তু খেলা কি শেষ হল? এক্কেবারেই না। তবে আমি এক অন্য শুভেন্দুর কথা বলি, তিনি অবশ্য দলবদলু নন, বিজেপিরই নেতা, মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন, তারপর দল ভাঙিয়ে সরকার ফেলে যাও বা নতুন সরকার হল, সেটাতেও তিনি উপমুখ্যমন্ত্রী হলেন। হ্যাঁ, আমি দেবেন্দ্র ফড়নবিশেরই কথা বলছি, সেই ফড়নবিশ, শরদ পাওয়ারের ভাইপোর নামে জনসভায় বলতেন, বিজেপি ক্ষমতায় আসবে, তখন অজিত পাওয়ার চাক্কি পিসিং চাক্কি পিসিং অ্যান্ড পিসিং। ও শুভেন্দু দা, জানেন, সেই অজিত পাওয়ার এখন ওঁর সঙ্গেই উপমুখ্যমন্ত্রী। আপনাদের গলায় ওই দুর্নীতির কথা মানায় না। আমরা জানি দেশজোড়া হরেক কিসিমের রাজনৈতিক নেতাদের দুর্নীতির কথা, কিন্তু আপনাদের মূখে দুর্নীতি? না স্যর, এক্কেবারে বেমানান।