জয়জ্যোতি ঘোষ, রাঁচি: ভারতের স্কোর তখন ১২০/৫, পাশে বসা ইংল্যান্ডের ক্রিকেট সাংবাদিক বললেন, ‘আর চিন্তা নেই, ধরমশালায় ইংল্যান্ড যাচ্ছে ২-২ করে।’ বলার সময় একটু টেরা চোখে তাকালেন। বলা বাহুল্য, ভারতীয় সাংবাদিকের উদ্দেশে ছোড়া তাঁর মাইন্ডগেমের ইয়র্কার! মাইন্ডগেমের খেলা শুধু ক্রিকেটারদের মধ্যে নয়, দুই দেশের সাংবাদিকদের মধ্যেও যে চলে তার প্রত্যক্ষ সাক্ষী থাকলাম। মনে মনে যে ভয় হচ্ছিল না তা নয়। কারণ আর ২ উইকেট পড়লে ভারত এই টেস্ট ম্যাচ হারতেও পারতো। খুব কাছে গিয়েও ভারতের হারের কিছু স্মৃতি মনে পড়ছিল-১৯৯৭ সালে বার্বাডোজে ভারত-ওয়েস্ট ইন্ডিজ টেস্ট, ১৯৯৯ সালে চেন্নাইতে ভারত-পাকিস্তান টেস্ট ইত্যাদি। কিন্তু ম্যাচ শেষে ভাবলাম এটা অন্য ভারত- নয়া টিম ইন্ডিয়া! দলে এমন একজন ক্রিকেটার আছেন যার বাবা ১৯৯৯ সালের কার্গিল যোদ্ধা। একজন কার্গিল যোদ্ধার স্নেহধন্য কঠিন সময়ে টিম ইন্ডিয়ার ত্রাতা হবেন এটাই তো স্বাভাবিক। আর হলও তাই। ধ্রুব জুরেল (Dhruv Jurel) জুটি বাধলেন ক্রিজে থাকা শুভমান গিলের (Shubman Gill) সঙ্গে। শুভমান গিল খেললেন ক্যালকুলেটিভ নক। করলেন অতিমূল্যবান অর্ধশতরান। যেসময়ে শোয়েব বশির পরপর ২ উইকেট নিয়ে ৯৯- এর সাকলিন মুস্তাক হয়ে উঠছিলেন, ঠিক সেইসময় তাঁকে থামালেন এই ভারতীয় জুটি। ষষ্ঠ উইকেটে গিল-জুরেলের ৭২ রানের পার্টনারশিপ শুধু ম্যাচ নির্ধারক নয়, হয়ত সিরিজ নির্ধারকও! গ্যালারিতে একদল সুন্দরীদের হাতে প্ল্যাকার্ড চোখে পড়ল- ‘হর দিল- গিল গিল’….’গিল হ্যায় কি মানতা নেহি…..’
ম্যাচ শেষ। সাংবাদিক সম্মেলনে এলেন সিরিজ জয়ী অধিনায়ক রোহিত শর্মা (Rohit Sharma)। শুধু এলেনই না। তাঁর ভিন্টেজ পুল শটও মারলেন। বললেন, ‘টেস্ট ক্রিকেট সবথেকে কঠিন ফরম্যাট। টেস্ট ক্রিকেট খেলার খিদে যাঁদের মধ্যে নেই, তাঁদেরকে টেস্ট দলে থাকতে হবে না। দেখে বোঝা যায় কার মধ্যে টেস্ট খেলার খিদে রয়েছে, আর কার মধ্যে নেই।’ এখানেই থামলেন না, আরও বললেন, ‘সুযোগ বারবার আসে না, যখন যে সুযোগ পাচ্ছে সে যদি কাজে লাগাতে না পারে তাহলে পরবর্তীতে সুযোগ নাও আসতে পারে।’ ইঙ্গিতপূর্ণ দুটি মন্তব্য অবশ্যই। ইশারা কি তিনজন(মধ্যাঞ্চল-পশ্চিমাঞ্চল এবং পূর্বাঞ্চল) ভারতীয় ক্রিকেটারের দিকে? হাইলি সাসপিশিয়াস! ভারতের সিরিজ জয়ের দিনও কিছুটা অস্বস্তি থেকেই গেল প্রেস কনফারেন্সের চার দেওয়ালে।
আরও পড়ুন: কারার ওই লৌহকপাট, ভেঙে ফেল কর রে লোপাট (পর্ব-১০)
তবে এই সিরিজ (India Vs England) থেকে প্রাপ্তির ভান্ডারও কম নয়। সিনিয়র ক্রিকেটারদের অভাব মিটিয়ে ধোনির শহরে ভারতের সিরিজ জয়ের বীরগাথা রচনা করলেন জয়সওয়াল-জুরেল-আকাশদীপরা! এরমধ্যে একজনের বাবা ছিলেন পানিপুরি বিক্রেতা-আরেকজনের বাবা কার্গিল যুদ্ধের যোদ্ধা-অপরজন আবার একইবছরে তাঁর বাবা এবং ভাইকে হারিয়েছেন! স্বীকার করতেই হবে, এই ভারতীয় দলের পরতে পরতে লুকিয়ে রূপকথার কাহিনী! যা আগামীর জন্য দৃষ্টান্ত হতেই পারে।
আরও পড়ুন: তরুণ ব্রিগেডের সিরিজ জয়ে কোহলির কী বার্তা?
‘ধ্রুব জুরেল কি পরবর্তী এমএসডি?’ এই প্রশ্ন ম্যাচ শেষে প্রাক্তন ভারতীয় উইকেটকিপার-ব্যাটার দীনেশ কার্তিককে করাতে হেসে বললেন, ‘পরবর্তী এমএসডি নাকি পরবর্তী ডিকে সেটা বলতে পারবো না। তবে ভালো ক্রিকেটার। চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি দাঁড়াতে ভয় পান না ধ্রুব জুরেল। খুব বেশি ঘরোয়া ক্রিকেট খেলেননি। কিন্তু তারপরও আন্তর্জাতিক মঞ্চে তাও আবার টেস্ট ক্রিকেটে এরকম টেম্পেরামেন্ট ভাবাই যায় না। তাঁকে ডিজে-ই থাকতে দিন আপাতত….’
সত্যিই তো! ধ্রুব জুরেল ডিজে হয়েই থাকুক না
….মন্দ কী….আর তাঁর ব্যাটিং টিউনে আন্দোলিত হোক আসমুদ্রহিমাচলের হৃদয়!
আরও খবর দেখুন