বিপ্লবীর কোনও দিন মৃত্যু হয় না। প্রতিবাদীর মৃত্যু হয় না। তেমনি ১৯২৯ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর পাকিস্তানের লাহোর জেলে তিনি আমাদের ছেড়ে চলে যান। তিনি চলে গেলেও আজও আছেন আমাদের মনের স্মৃতি কোঠায়। তিনি যতীন্দ্রনাথ দাস৷
১৯০৪ সালের ২৭ অক্টোবর উত্তর কলকাতার শিকদার বাগানে জন্মগ্রহণ করেন। বাবা বঙ্কিম বিহারী দাস ইংরেজদের দাসত্ব করবেন না বলে মিউনিসিপ্যালিটির চাকরি ছেড়ে ছিলেন। মা সুহাসিনী দাস। মাত্র ১৫ বছর বয়সে যচীন্দ্রনাথ দাস যুক্ত হয়েছিলেন বিপ্লবী কার্যকলাপের সঙ্গে। সক্রিয় সদস্য হয়েছিলেন অনুশীলন সমিতি।
বিপ্লবী কার্যকলাপ করতে গিয়েই সাক্ষাৎ হয়েছিল শচীন্দ্রনাথ সান্যালের সঙ্গে। শিখে ছিলেন বোমা তৈরীর কারুকার্য। বিপ্লবী কার্যকলাপ করার সময় ব্যবহার করেছিলেন একাধিক ছদ্মনাম৷ তারমধ্যে অন্যতম রবিন কখনো বা কালিবাবু। তাঁর বিপ্লবী কার্যকলাপের জন্য নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর স্নেহভাজন হয়ে উঠেছিলেন। ভবানীপুর মিত্র ইনস্টিটিউশনের থেকে ম্যাট্রিক পাশ করে গান্ধীজির ডাকা অসহযোগ আন্দোলনে যোগ দেন।
সেই সময়ই লালা রাজপথ রায়ের মৃত্যুর প্রতিবাদে ইংরেজ শাসককে হত্যা করে যখন ভগৎ সিং কলকাতায় পালিয়ে আসেন আশ্রয় নিয়েছিলেন যতীন্দ্রনাথ দাসের কাছেই। ভগৎ সিংয়ের অনুরোধেই আগ্রায় গিয়ে তিনি বোমা তৈরি শিখিয়ে আসেন। আর সেই বোমা ভগৎ সিং, বটুকেশ্বর দত্তরা ছুড়েছিলেন সেন্ট্রাল লেজিসলেটিভ অ্যাসেম্বলিতে। ধরা পড়ে যান ভগৎ সিং, বটুকেশ্বর দত্তরা। উঠে আসে যতীন দাসের নাম।
আরও পড়ুন-চতুর্থ স্তম্ভ : আমার ঘরে রাজার প্রবেশ নিষেধ
১৯২৯ সালের ১৪ জুন কলকাতা থেকে যতীন দাসকে গ্রেপ্তার করা হয়। এরপর লাহোর ষড়যন্ত্র মামলার আসামি হিসেবে তাঁকে পাঠিয়ে দেওয়া হয় লাহোর সেন্ট্রাল জেলে। সেখানেই আবার দেখা হয় ভগৎ সিং, শচীন সান্যাল, বটুকেশ্বর দত্ত সহ আরও অনেক বিপ্লবীদের সঙ্গে। রাজবন্দিদের সঙ্গে জেলের মধ্যে ব্রিটিশ শাসকদের অমানবিক আচরণ,অব্যবস্থার বিরুদ্ধে অনশন শুরু করেন যতীন্দ্রনাথ দাস।
আরও পড়ুন-লখনউয়ের দল কিনে সাত হাজার কোটির ক্রিকেট জুয়া খেললেন সঞ্জীব গোয়েঙ্কা
১৯২৯ সালের ১৩ জুলাই থেকে শুরু করেন আমরণ অনশন। এরই মধ্যে ঘটে যায় অমানবিক ঘটনা৷ ২০ জুলাই জোর করে ব্রিটিশরা শহীদ যতীন দাসের অনশন ভাঙতে গিয়ে তাঁর শ্বাসনালীতে ঢুকে যায় খাবার। বন্ধ হয়ে যায় তাঁর কথা। প্রায় ৫০ দিনের মাথায় তিনি পক্ষাঘাতে আক্রান্ত হন৷ টানা ৬৩ দিন আমরণ অনশনের পরে তাঁর মৃত্যু হয়। মৃত্যুর পরে তাঁর মৃতদেহ লাহোর থেকে নিয়ে আসা হয় হাওড়ায়৷ এরপর কেওড়াতলা মহাশ্মশানে তাঁর শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়।