কোভিড সংক্রমণের পর টেস্ট রিপোর্ট নেগেটিভ আসা মানে যেন হাতে চাঁদ পাওয়া। অসুখ তো নয়, যেন মৃত্যু জয় করে ফেরা। তবে সংক্রমণ সেরে গেলেও শরীরে কখন কোন সমস্যা মাথাচাড়া দেবে তা বলা কঠিন। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই একাধিক শারীরিক সমস্যায় ভুগছেন অনেকেই। এগুলির অন্যতম কোভিড আক্রান্তদের মধ্যে চুল পড়ার সমস্যা। মাথায় হাত দিলেই উঠে আসছে গোছা গোছা চুল। আতঙ্কিত হয়ে পড়ছেন অনেকেই। কলকাতা টিভি-র প্রতিনিধি নিমাই পান্ডার সঙ্গে কথা বললেন বিশিষ্ট চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ অভিষেক দে।
- কোভিডের সঙ্গে চুল পড়ার সত্যি কি কোনও যোগ রয়েছে?
প্রথম ঢেউয়ের সময় সেরে ওঠার পরেও অধিকাংশ কোভিড আক্রান্তদের মধ্যে একটানা সর্দি বা কাশি, প্রচণ্ড ক্লান্তি, কিংবা স্কিন অ্যালার্জির মত শারীরিক সমস্যা দেখা গেছে।করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের পর অধিকাংশ আক্রান্তদের মধ্যে চুল পড়ার সমস্যা দেখা গেছে। চুলে হাত দিলেই উঠে আসে গোছা গোছা চুল। পোস্ট কোভিড চুল পড়ার এই সমস্যাকে ডাক্তারি ভাষায় বলা হয় টেলোজেন এফ্লুভিয়াম (telogen effluvium)।
- কোভিডের পর কেন হয় এই সমস্যা
কোভিড সংক্রমণের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয় আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা। এর ফলে মাথার ত্বকে যে হেয়ার ফলিকলগুলো থাকে সেগুলি কিছু সময়ের জন্য ইমিউনোলজিক্যাল শকের কারণে নিস্তেজ হয়ে পড়ে। এর ফলে চুলের গোড়া হালকা হয়ে বেড়ে যায় চুল পড়ার সমস্যা।
- কখন বাড়ে চুল পড়ার সমস্যা
অনেক সময় এই সমস্যা কোভিড সেরে যাওয়ার কিছু সময় পর শুরু হয়৷ তাই চুল পড়ার আসল কারণ নিয়েও অনেকেই দ্বন্দ্বে থাকেন।কখনও কোভিড সংক্রমণ সেরে ওঠার ২ সপ্তাহ আবার কখন ২ মাসের মাথায় চুল পড়ার সমস্যা দেখা দিতে পারে।
- এই চুলপড়া কি স্থায়ী
না, এই টেলোজেন এফ্লুভিয়াম (telogen effluvium) রিভার্সিবিল অর্থাৎ যে চুল ঝরে যায়, সেখানে আবার নতুন চুল গজায়। প্রচুর চুল পড়ার কারণে স্বাভাবিক ভাবেই অনেকে আতঙ্কিত হয়ে পড়েন৷ তবে ভাল ব্যাপার হল চুলের এই সমস্যা স্থায়ী নয়। কারণ, হেয়ার ফলিকল নিস্তেজ হয়ে পড়লেও নষ্ট হয়ে যায় না। সংক্রমণ সেরে গেলে ধীরে ধীরে আবার আগের আগের অবস্থায় ফিরে যায় এই হেয়ার ফলিকলগুলি। তখন আবার চুল গজাতে শুরু করে। খুব বেশি হলে এই সমস্যা ৩ মাস পর্যন্ত থাকতে পরে। তারপর আবার অবস্থার উন্নতি হয়। এই সময় বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ মেনে চললে চুল গজানোর প্রক্রিয়া নিঃসন্দেহে গতি পায়।
- তা হলে টেলোজেন এফ্লুভিয়াম নিয়ে চিন্তার কোনও কারণ নেই?
পোস্ট কোভিড অধিকাংশ আক্রান্তদের ক্ষেত্রে তেমন ভাবে চিন্তার কোনও বিষয় নয় এই চুল পড়ার সমস্যা। তবে যে সব ব্যক্তির শরীরে ফেরিটিন(ferritin), ভিটামিন ডি (vitamin D), ভিটামিন ১২ (vitamin B 12)-এর ঘাটতি রয়েছে এবং থাইরয়েড হরমোন (thyroid hormone) স্তর নীচে রয়েছে তারা ক্রনিক টেলোজেন এফ্লুভিয়ামে ভুগতে পারে। এক্ষেত্রে চুল পড়া ভয়াবহ আকার নিতে পারে এবং নতুন করে চুল গজানোর সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে।
- কোভিডের পর চুল পড়ার কি কোনও চিকিৎসা আছে?
যাঁরা ক্রনিক টেলোজেন এফ্লুভিয়ামের সমস্যায় ভোগেন তাঁদের চিকিৎসার প্রয়োজন আছে। তাঁদের শারীরিক অবস্থা বুঝতে চিকিৎসকের পরামর্শ অত্যন্ত উপকারী। এক্ষেত্রে হেলথ সাপ্লিমেন্ট ও বিশেষ সেরাম ও লোশনের ব্যবহারে সমস্যা অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে আসবে। প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ৩ থেকে ৬ মাসের একটি কোর্স করলে সমস্যার সহজ সমাধান হতে পারে।
(ডা: অভিষেক দে, ডার্মেটোলজিস্ট, কলকাতা ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ অ্যান্ড হসপিটাল)
(ছবি সৌজন্য: Deposit photos)