Monday, July 7, 2025
HomeScrollAajke | তিলোত্তমার বাবা-মা ভুলে গেছেন বিজেপির ইতিহাস?
Aajke

Aajke | তিলোত্তমার বাবা-মা ভুলে গেছেন বিজেপির ইতিহাস?

আরএসএস বিজেপির সংবিধান হল মনুসংহিতা, যেখানে স্পষ্ট লেখা আছে নারী নরকের দ্বার

Follow Us :

কারও কারও অস্বস্তি হবে, মাত্র ১০০ দিন পার হয়েছে সেই বীভৎস ধর্ষণ আর খুনের ঘটনার, এরই মধ্যে সেই নির্যাতিতার বাবা-মাকে নিয়ে প্রশ্ন তোলা কি উচিত? আজকের আলোচনা তাঁদের প্রশ্ন করে বিব্রত করার জন্য নয়, বরং তাঁরা যা বলছেন, যা যা করছেন, তার প্রেক্ষিতে কিছু কথা বলা। আমাদের দেশে প্রতি ৯ মিনিটে একটা ধর্ষণ হয়, সেই হিসেব মতো ওই ঘটনার পর থেকে কমবেশি ১৬ হাজার ধর্ষণ হয়ে গেছে, তার কিছু এ রাজ্যেও ঘটেছে। সেই ১৬ হাজার ধর্ষিতার কেউ কেউ খুনও হয়েছেন, কেউ কেউ অত্যাচারের ফলে হাসপাতালে যাওয়ার পরে মারা গেছেন, এবং মাথায় রাখুন এগুলো সেই তথ্য যা কোনও না কোনওভাবে পুলিশের কাছে এসেছে, যা লজ্জা আর সামাজিক প্রতিষ্ঠার ভয়ে সামনেই আসেনি, তা বাদ পড়ে থাকল। কিন্তু এক মধ্যবিত্ত নাগরিক আবেগ আরজি কর আন্দোলনের ভিত্তি ছিল। সরকার বিরোধী বাম কেবল নয়, সেই বৃত্তের বাইরেও বহু মানুষ অন্য আরও হাজার এই ধর্ষণ এবং খুনের ঘটনাতে সেইভাবে প্রতিক্রিয়া না দেখালেও, এই ঘটনায় পথে নেমেছিলেন। কাজেই এক শোকাচ্ছন্ন বাবা-মা তাঁদের পাশে ওই অসংখ্য মানুষকে পেয়েছিলেন। কিন্তু প্রথমত এ আপাতত এক তদন্ত আর বিচার প্রক্রিয়ার ব্যাপার যা হুট বলতে ঝুট শেষ হবে না, সময় লাগবে। আর তার উপরে ওই আন্দোলনে বহুবার বলেছি তাও আবার বলি একের পর এক মিথ্যেকে এনে হাজির করা হয়েছে, যা আজ চরম মিথ্যে বলে বুঝতেও পারছেন মানুষজন, কাজেই সময়ের চাপে আর নিজেদের ভুলে আন্দোলনে ভাটা এসেছে। আর ঠিক সেই সময়ে খুব স্বাভাবিকভাবেই নির্যাতিতার বাবা-মা ধৈর্য হারিয়েছেন, এবং তাঁরা হাজির হলেন শুভেন্দু অধিকারীর কাছে। এর আগেও শুভেন্দু অধিকারী যোগাযোগ করেছিলেন, দেখা করেছিলেন, অমিত শাহের সঙ্গে কথা হয়েছিল এটা জেনেও যে আন্দোলনকারীরা এই বিজেপির কোনও নেতাকে মঞ্চের ধারেকাছেও ঘেঁষতে দেননি, রীতিমতো তাড়া করে খেদিয়ে দিয়েছিলেন। ওনারা একই সঙ্গে সেই আন্দোলনকারীদের সঙ্গেও থাকবেন, আবার বিজেপির সঙ্গে থাকবেন, এটা কি এক স্ববিরোধিতা নয়? সেটাই বিষয় আজকে, তিলোত্তমার বাবা-মা ভুলে গেছেন বিজেপির ইতিহাস?

ধর্ষণের সঙ্গে সাধারণ যৌনতার কোনও সম্পর্কই নেই, পৃথিবীর বহু গবেষকের মিলিত গবেষণা বলছে যে সাধারণ যৌন চাহিদার জন্য মানুষ ধর্ষণ করে না। এর পিছনে বেশ কয়েকটা আর্থ সামাজিক কারণ কাজ করে, বেশ কিছু ধ্যানধারণা, মধ্যযুগীয় চিন্তাভাবনা কাজ করে। তার মধ্যে সবথেকে বড় বিষয় হল নারী, মহিলা, যৌনতা নিয়ে মানুষের ধ্যানধারণা। গবেষকরা বলছেন, রেপ হল এক ধরনের সাবজুগেশন, বশ্যতা স্বীকার করানো, নতিস্বীকার করানোর পদ্ধতি। আরও অনেক পদ্ধতি আছে, একজন পুরুষকে নতিস্বীকার করানোর জন্য তার চাকরি কেড়ে নেওয়া হয়, জমি কেড়ে নেওয়া হয়, পাগড়ি কেড়ে নেওয়া হয়, বাড়ি কেড়ে নেওয়া হয়। কারণ আমাদের সমাজ শিখিয়েছে পুরুষরা রোজগার করবে, সংসার চালাবে। অতএব তাদের নতিস্বীকার করানোর জন্য তাদের উপার্জন কেড়ে নাও, তার বাড়ি কেড়ে নাও, যাকে সে আপদে বিপদে রক্ষা করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে বাড়িতে এনেছে, তাকে, মানে তার স্ত্রীকে কেড়ে নাও, কারণ আমাদের শেখানো হয়েছে, বাড়ি ঘর, খেত জমি, ফসল, স্ত্রী পুরুষের সম্পদ, একে ভোগ করা, একে দখলে রাখা পুরুষের কাজ। এবার সেই পুরুষকে নতিস্বীকার করানোর জন্য তার স্ত্রীকে তুলে আনা হল, পাঁচ ছেলের মা, শীর্ণ, দুর্বল, অসুস্থ বা সুন্দরী, সবল, যাই হোক না কেন, তার আছেটা কী? সেটাও শেখানো হয়েছে, ইজ্জত, লজ্জা, তার শরীর। এটাই তার সম্পদ, তার মেধা নয়, তার বুদ্ধি নয়, তার ইজ্জতই যখন সম্পদ, তাহলে তাকে নতিস্বীকার করাতে তার ইজ্জত কেড়ে নাও। কীভাবে? তাকে উলঙ্গ করে, তাকে ধর্ষণ করে। তাকে রেপ করো। দ্রৌপদীকে ভরা রাজসভায় ডেকে তাকে নিরাভরণ করতে চাওয়া কৌরব ভায়েদের ইচ্ছে বা চাহিদাটা কী? পাণ্ডবদের নতিস্বীকার। অন্য কিচ্ছু নয়। তার মানে ধর্ষণের প্রথম কারণ হল, সমাজে নারীর অবস্থান। সে যতদিন পুরুষের একান্ত নিজের সম্পদ হিসেবে চিহ্নিত হবে, তার নিজের সম্পদ তার মেধা নয়, বুদ্ধি নয়, তার ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট নয়, যতদিন তার একমাত্র সম্পদ হয়ে থাকবে তার ইজ্জত, লজ্জা, ততদিন তা কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা হবে, তা কেড়ে তার পুরুষকে নতিস্বীকার করানোর চেষ্টা হবে। শাস্ত্র বলবে লজ্জা নারীর ভূষণ, তাহলে তা কেড়ে নেওয়াই যায়। দখল করা যায়, কারণ নারী ও বসুন্ধরা নাকি বীরভোগ্যা।

দ্বিতীয় কারণ হল বিকৃত যৌনতা। যৌনতা সম্পর্কে অস্বচ্ছ, বিকৃত, ভুল ধারণা আছে, তা মূলত শিক্ষার অভাব থেকেই তৈরি হয়, এবং শিশুধর্ষণ, নাবালিকা ধর্ষণ এই কারণেই হয়। দেশে শিক্ষার অভাব নিয়ে নতুন কিছু বলার নেই।

আরও পড়ুন: Aajke | ২০২৬-এর প্রস্তুতি নিয়ে মাঠে নেমে পড়ল তৃণমূল

তৃতীয় কারণ আর্থিক ও সামাজিক অসাম্য। এবং সেখান থেকে অদ্ভুত মানসিক গঠন। মুম্বইয়ের এক ঘটনায় দেখা গিয়েছিল, এক তরুণী, যে একলা ফ্ল্যাটে থাকত, আইটি সেক্টরে উঁচু পোস্টে কাজ করত, সে এক অটো রিকশওয়ালাকে মাঝে মধ্যেই ঘরে ডাকতো, এটা সেটা রান্না করে খাওয়াত। ছেলেটি তার বিভিন্ন ফাইফরমাশ খাটত, তাকে দিয়ে বিয়ার আনাত। ছেলেটিকে সে স্নেহ করত, ছেলেটি সেই সম্পর্ককে ভালবাসা মনে করে, প্রেম মনে করে, একদিন সন্ধেয় সেরকমই এক খাওয়া দাওয়ার আয়োজন করেছিল, সেখানে ছেলেটি তার ঘনিষ্ঠ হবার চেষ্টা করে, মেয়েটি বাধা দেয়, ছেলেটি তাকে রেপ করে, খুন করে তারপর থানায় গিয়ে বলে সে তার গার্লফ্রেন্ডকে খুন করেছে। সামাজিক আর্থিক অসাম্য তার মানসিক গঠনকে ম্যাচিওর করেনি, স্বাভাবিক সম্পর্ককে বুঝতে শেখায়নি, মহিলাদের পোশাক আশাক, মহিলাদের সঙ্গকে বুঝতে শেখায়নি, সে তার মতো করে বুঝে নিয়েছে, পরিণতি ধর্ষণ আর খুন। তারমানে এই সামাজিক অপরাধের শেকড় আসলে লুকিয়ে আছে নারী-পুরুষের সম্পর্কের উপর, লিঙ্গসাম্যের অধিকারের উপর, নারী স্বাধীনতার উপর, আর নারীদের অর্থনৈতিক স্বাধীনতাও এইক্ষেত্রে এক জরুরি উপাদান। মানে এক সমাজ যেখানে নারীরা কেবল মা নয়, কেবল বোন নয়, কেবল দেবী হিসেবেই নয়, স্ত্রী হিসেবে, বন্ধু হিসেবে, সহকর্মী হিসেবে মর্যাদা পাবে, সেখানে এই ধর্ষণ কমবে, ধর্ষণের প্রবণতা কমবে। এটা সভ্যতার বিকাশের অন্যতম শর্ত। কিন্তু সমস্যা হল বিজেপি একটা দল, বা বলা ভালো সঙ্ঘ পরিবার, আরএসএস থেকে তার ছাতার তলায় প্রত্যেকটা দল ওই লিঙ্গসাম্যের অধিকারে বিশ্বাসই করে না। নারীর সম্পর্কে তাদের মধ্যযুগীয় ধারণা নারীদের অবস্থানকে আরও নীচে নামিয়ে আনছে। উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী আদিত্যনাথ যোগী মনে করেন, ‘WOMEN NOT CAPABLE OF BEING LEFT FREE OR INDEPENDENT, THEIR ENERGY SHOULD BE REGULATED, LEST IT BECOME WORTHLESS AND DESTRUCTIVE.’ মানে হল, ‘মহিলাদের স্বাধীনভাবে কাজ করতে দেওয়া যায় না, তাদের সেই সক্ষমতা নেই। তাদের শক্তির উপর নিয়ন্ত্রণ থাকা উচিত, না হলে তা মূল্যহীন এবং ধ্বংসাত্মক হয়ে উঠবে।’

আরও আছে, হরিয়ানার বিজেপি সহসভাপতি রামবীর ভাট্টি, ২০১৭ অগাস মাসে এক ঘটনা নিয়ে বলতে গিয়ে বলেছিলেন, ‘মেয়েটির ১২টার পর বাইরে থাকার কী দরকার ছিল? অত রাতে সে গাড়ি চালাচ্ছিল কেন?’ মোহন ভাগবত, আরএসএস প্রধান, তিনি বলেছেন, ‘ধর্ষণ ইন্ডিয়াতে হয়, ভারতে হয় না।’ বুঝে নিন, ‘সংস্কারি মহিলা’ মানে ঘোমটা দেওয়া, ঘরে রান্নাবান্না করে, বাচ্চাদের দেখে, পতিসেবা করে, তাদেরকে কেউ ধর্ষণ করে না, এটাই ছিল তাঁর ইঙ্গিত। মনোহর লাল খট্টর বিজেপি মুখ্যমন্ত্রী হরিয়ানা, তিনি মনে করেন, ‘একটি মেয়ে যদি সভ্য পোশাক পরে থাকে তাহলে তার দিকে কেউ নোংরা নজরে দেখবে না, এত স্বাধীনতা চাইলে উলঙ্গ হয়ে ঘোরো, স্বাধীনতারও সীমা আছে। এই ছোটখাটো কাপড় আমদের দেশের সংস্কৃতির বিরোধী।’ এ বঙ্গে বিজেপির মার্গদর্শক, পর্যবেক্ষক নেতা কৈলাস বিজয়বর্গীয়র কথায়, তিনি বলেছেন, অক্টোবর ২০১৫-তে যে, ‘মহিলাদের লক্ষ্মণরেখার ভিতরেই থাকা উচিত, মানে সীমার মধ্যে থাকা উচিত, না হলে ধর্ষণ তো হবেই’। এবং সেই বিজেপি শাসিত রাজ্যে ধর্ষণের অভিযোগে শাস্তিপ্রাপ্তদের সম্বর্ধনা দেওয়া হয়, ধর্ষণে অভিযুক্তদের ছেড়ে দেবার দাবিতে দলীয় পতাকা নিয়ে মিছিল হয়। সেই দলের নেতাদের কাছে গিয়ে তিলোত্তমার বাবা-মা কোন বিচার চাইছেন? আমরা আমাদের দর্শকদের জিজ্ঞেস করেছিলাম। আরজি করের ধর্ষিতা, মৃতা তিলোত্তমার বাবা-মা বিধানসভায় বিরোধী দলনেতা বিজেপি নেতাদের কাছে সুবিচার চাইছেন, এদিকে তদন্ত করছে সিবিআই, বিজেপি শাসিত রাজ্যে রাজ্যে ধর্ষিতা নির্যাতিতাদের বিচার হয়নি, দল ধর্ষকদের পক্ষে দাঁড়িয়ে আছে, সেই দল বিজেপি কি ধর্ষণ খুনের ন্যায়বিচার এনে দিতে পারবে? শুনুন মানুষজন কী বলেছেন।

আরএসএস বিজেপির সংবিধান হল মনুসংহিতা, যেখানে স্পষ্ট লেখা আছে নারী নরকের দ্বার। যেখানে লেখা আছে নারী ছোটবেলাতে তার বাবার সম্পত্তি, বিয়ের পরে তার স্বামীর আর বৈধব্যে তার সন্তানদের কথা শুনে চলবে, বলা আছে যে নারীর কাজ পরিবারের পুরুষদের রেঁধে বেড়ে খাওয়ানো আর তাদের সন্তানের জন্ম দেওয়া। সেই মনুবাদী আরএসএস বিজেপি লিঙ্গসাম্যের অধিকারে বিশ্বাসই করে না। সে দলের মাথা তাঁর বিবাহিতা স্ত্রীকে সন্মান দিতে জানে না, সেই দলের কাছে নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে শাস্তির আবেদন? ন্যায়বিচারের আবেদন? অবশ্য শোক মানুষের কর্তব্য, বিবেচনাবোধ, যুক্তিকে দূরে ঠেলে এক শূন্যতা তৈরি করে, সেই শূন্যতায় অনেক ভুল হয়, নির্যাতিতার বাবা-মায়ের বিজেপির উপরে ভরসাকে সেইভাবে দেখলেই ভালো।

RELATED ARTICLES

Most Popular


Deprecated: Automatic conversion of false to array is deprecated in /var/www/ktv/wp-content/themes/techinfer-child/functions.php on line 39