হায়দরাবাদ এফ সি-৪ এস সি ইস্ট বেঙ্গল–০
(ওগবেচে-৩, অনিকেত যাদব)
অকাল প্রয়াত সুভাষ ভৌমিকের স্মরণে দুটো দলই কালো আর্ম ব্যান্ড পরে নেমেছিল। ম্যাচ শুরু হওয়ার আগে সুভাষের স্মরণে এক মিনিট নীরবতাও পালন করা হয়। কিন্তু ইস্ট বেঙ্গলে সুভাষের পুত্রসম ফুটবলাররা এর পর যা ফুটবল খেললেন তাতে ইস্ট বেঙ্গলের স্মরণেও এক মিনিট নীরবতা পালন করা যেতে পারে। গত বারের আই এস এল থেকে নিয়মিতভাবে ইস্ট বেঙ্গলের হার দেখতে দেখতে যখন বিরক্তি ধরে আসছিল তখন মুক্ত বাতাসের মতো ছিল গত ম্যাচে এফ সি গোয়ার বিরুদ্ধে জয়। কিন্তু সেটা যে ছিল নেহাতই নিয়মের ব্যতিক্রম সেটা সেদিন বোঝা যায়নি। সোমবার ভাস্কোর তিলক ময়দানে তা বোঝা গেল। এই প্রথম আই এস এল-এ ইস্ট বেঙ্গলে কোনও টিমের কাছে এক গণ্ডা গোলে হারল। গত বারের শেষ ম্যাচে তারা হাফ ডজন গোল খেয়েছিল ওড়িশা এফ সি-র কাছে। কিন্তু পাঁচটা গোলও করৈছিল। ম্যাচের ফল ছিল ৬-৫। কিন্তু আজ তো একেবারে কেলেঙ্কারির এক শেষ। হ্যাঁ, এটা মানতেই হবে হায়দরাবাদ ধারে-ভারে ইস্ট বেঙ্গলের চেয়ে অনেক এগিয়ে। এদিনের জয়ের পর তারা বারো ম্যচে ২০ পয়েন্ট নিয়ে লিগের মগ ডালে উঠে গেল। আর ইস্ট বেঙ্গল আবার নেমে গেল এগারো নম্বরে। তেরো ম্যাচে তারা খেয়েছে ২৪ গোল। এখনও সাতটা ম্যাচ বাকি। শেষ পর্যন্ত কোথায় গিয়ে থামবে এই অধঃপতন তা ভাবলেও শিউরে উঠতে হয়। বিরতির আগেই ০-৩ গোলে পিছিয়ে পড়া ইস্ট বেঙ্গল চার নম্বর গোলটা খেল ৭৪ মিনিটে। এর পরেও একটা গোল শোধ করার মতো সুযোগ পেয়েছিল তারা। ব্রাজিলিয়ান মার্সেলো নিজের কৃতিত্বে একটা পেনাল্টি আদায় করেছিলেন। কিন্তু ফ্রানিও পার্সের শট রুখে দেন হায়দরাবাদ গোলকিপার কাট্টিমণি।
একটা টিমকে জেতাবার ব্যাপারে সবচেয়ে বেশি কার্যকরী ভূমিকা নেন তাদের স্ট্রাইকাররা। আর বার্থোমিউ ওগবেচের মতো স্ট্রাইকার যে টিমে থাকেন তারা একটু এগিয়েই মাঠে নামে। ৩৭ বছর বয়সী এই নাইজিরিয়ানের ১২টা গোল হয়ে গেল এবারের লিগে। শেষ পর্যন্ত গোল্ডেন বল হয়তো তাঁর হাতেই উঠবে। ঠিক বক্স স্ট্রাইকার যাকে বলে ওগবেচে তা নন। একটু পিছন থেকে খেলেন। কিন্তু বক্সের মধ্যে তাঁর আগ্রাসী মনোভাব তাঁকে এগিয়ে রাখে অন্যদের চেয়ে। লাল হলুদের এক নম্বর ডিফেন্ডার আদিল শেখের কাজ ছিল ওগবেচেকে পাহাড়া দেওয়ার। প্রথম দিকে ঠিকঠাকই চলছিল। কিন্তু একুশ মিনিটে শৌভিক চক্রবর্তীর কর্নারে তাঁর নির্বিষ হেড আটকাতে গিয়ে অরিন্দম নাজেহাল হয়ে গেলেন। গ্রিপ করতে গিয়ে পারলেন না। বল তাঁর পেটে লেগে গোলে ঢুকে গেল। এত বিশ্রি গোলকিপিং হলে টিমের গোল খাওয়া আটকাবে কে? ইস্ট বেঙ্গলের মুশকিল হল এত টাকা খরচ করে অরিন্দমকে নেওয়া হয়েছে যে বিকল্প গোলকিপাররা খুব বড় কিছু নয়। তাই ম্যাচের পর ম্যাচ দলকে ডোবালেও অরিন্দমকেই খেলিয়ে যেতে হবে। পরের ম্যাচটাই আবার কলকাতা ডার্বি। ২৭ নভেম্বর প্রথম ডার্বিতে মোহনবাগানের কাছে তিন গোল খেয়ে চোট পেয়ে বসে যান অরিন্দম। ২৯ জানুয়ারি আবার তিনি কী করেন তাই এখন দেখার।
বিপক্ষ গোলকিপারের দাক্ষিণ্যে প্রথম গোলটা পাওয়ার পর ওগবেচের মনে হয়তো একটু খুঁতখুঁতুনি ছিল। সেটা তিনি মিটিয়ে নিলেন ৪৪ মিনিটে নিজের দ্বিতীয় গোলটা করে। বক্সের একটু আগে আগুয়ান ওগবেচেকে আটকাতে ব্যর্থ হয়ে পড়ে গেলেন আদিল শেখ। কিন্তু তখন ওগবেচেকে রুখবে কে? বুলডোজারের মতো ঘাড়ের কাছে নিঃশ্বাস নেওয়া দ্বিতীয় ডিফেন্ডারকে গতিতে পরাস্ত করে সামনে শুধু পেয়ে গেলেন অরিন্দমকে। একটা ছোট ড্রিবলে তাঁকে কাটিয়ে আলতো টোকায় গোল। খাঁটি স্ট্রাইকারের গোল। এর পর মিনিট দুয়েক যেতে না যেতেই বাঁ দিক থেকে বল ধরে বক্সের মধ্যে ঢুকে অনিকেত যাদবের কোণাকুণি শট অরিন্দম দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখলেন বলটা গোলে ঢুকে গেল।
বিরতির আগেই তিন গোল হয়ে গেলে ম্যাচে কিছু আর থাকে না। কিন্তু ওগবেচের বুকে তো হ্যাটট্রিকের স্বপ্ন উঁকি দিচ্ছিল। সেটাই তিনি করে ফেললেন ৭৪ মিনিটে বক্সের বাইরে থেকে নেওয়া দুরন্ত ভলি থেকে গোল করে। ইস্ট বেঙ্গলের কোচ মারিওকে দেখে মায়া লাগবে আপনার। প্রথম ম্যাচেই টিমকে জয়ের মুখ দেখিয়েছিলেন তিনি। তার আগে রেনেডি সিং-এর ভারতীয় বাহিনী দুর্দান্ত লড়াই করেছিল। তাই আশা করা গিয়েছিল আন্তোনিও পেরোসেভিচের ফিরে আসা কিংবা ব্রাজিলিয়ান মার্সেলোর যোগদানে কিছু একটা করবে ইস্ট বেঙ্গল। পাঁচ ম্যাচ পরে মাঠে নেমে আন্তোনিও ডাহা ফেল। পিছন থেকে খেলবার চেষ্টা করলেন। না পারলেন একটা ভাল পাস বাড়াতে, না পারলেন বিপক্ষ ডিফেন্ডারদের কাটিয়ে গোলের মুখ খুলতে। পাঁচ ম্যাচ বসে থাকার জন্য একটা জড়তা কাজ করছিল। আন্তোনিও থাকা আর না থাকার মধ্যে কোনও পার্থক্য চোখে পড়ল না। ব্রাজিলের মার্সেলো শেষ আথ ঘণ্টার জন্য মাঠে ছিলেন। মূলত বাঁ পায়ের প্লেয়ার। প্রথম দিনের বিচারে তাঁর সর্ম্পকে ভাল বা মন্দ কিছুই বলা যাবে না। তবে চার গোলে পিছিয়ে থেকে নিজের কৃতিত্বে একটা পেনাল্টি আদায় করেছিলেন। ফ্রানিও পার্সে সেটা থেকেও গোল করতে পারেননি। তবে আধ ঘণ্টা মাঠে থাকার পর মার্সেলোকে দেখে মনে হচ্ছে একটু সময় পেলে দাঁড়িয়ে যাবেন। অন্তত ড্যানিয়েল চিমার মতো বোবা স্ট্রাইকার হবেন না।
বাকিদের কথা বেশি না বলাই ভাল। আসলে আগের চারটে ম্যাচে যে লড়াইটা ছিল সেটাই এদিন দেখা গেল না। আত্মতুষ্টি নাকি হায়দরাবাদের অনেক ভাল টিম হওয়া। হয়তো দুটোই। আশঙ্কা হচ্ছে পরের ম্যাচটা তো ডার্বি। এর প্রভাব না তার উপর পড়ে।