শেষ পর্যন্ত মোহনবাগান ক্লাবের সচিব সৃঞ্জয় বসুর পদত্যাগ পত্র গৃহীত হল। বৃহস্পতিবার বিকেলে ক্লাব তাঁবুতে অনুষ্ঠিত কার্যকরী কমিটির সভায় সৃঞ্জয়ের পদত্যাগ পত্র নিয়ে আলোচনা হয়। সভায় ক্লাবের সভাপতি স্বপনসাধন বসু ছিলেন না। সভাপতিত্ব করেন রাজ্যের সমবায় মন্ত্রী এবং ক্লাবের অন্যতম সহসভাপতি অরূপ রায়। ক্লাবের অর্থ সচিব দেবাশিস দত্ত সমিতিকে বোঝানোর চেষ্টা করেন সৃঞ্জয়ের পদত্যাগ কেন গ্রহণ করা উচিত। পদত্যাগ পত্রে সৃঞ্জয় লিখেছেন, ব্যক্তিগত কারণে তিনি পদত্যাগ করছেন। সদস্যরা মনে করেন সচিবের এই ইচ্ছেকে সম্মান জানিয়ে তাঁর পদত্যাগপত্র গ্রহণ করা উচিত। উপস্থিত সকলে তা মেনেও নেন। সৃঞ্জয়ের ভাই সৌমিক বসুকে কমিটির সহসভাপতি করা হয়েছে। শুধু ক্লাবের সচিব পদ থেকেই নয়, সৃঞ্জয় পদত্যাগ করেছেন এটিকে মোহনবাগানের ডিরেক্টর পদ থেকেও। এত দিন সৃঞ্জয় এবং দেবাশিসই এটিকে মোহনবাগানের ডিরেক্টর ছিলেন। এখন সৃঞ্জয়ের বদলে তাঁর ভাই সৌমিক সেই পদে যাবেন। আর আসন্ন নির্বাচনের কথা মাথায় রেখে নতুন করে আর কাউকে সচিব করা হয়নি। সহসচিব সত্যজিৎ চট্টোপাধ্যায়ই নির্বাচন পর্যন্ত সচিবের কাজ চালাবেন।
২০১৮ সালের আঠাশে অক্টোবর মোহনবাগানের নির্বাচন হয়েছিল। নির্বাচনের পর তিন বছর মেয়াদী কর্ম সমিতির মেয়াদও শেষ হয়ে গেছে গত অক্টোবরে। তাই নির্বাচনও আসন্ন। তার আগে করতে হবে বার্ষিক সাধারণ সভা। এবং সেই সভার জন্য দরকার বার্ষিক হিসেবনিকেশের অডিট রিপোর্ট। কিন্তু মোহনবাগানের অডিটর জানিয়েছেন, অডিট করা রিপোর্ট পেতে আরও কিছু দিন সময় লাগবে। তাই ঠিক হয়েছে এ মাসেরেই ১৫-২০ তারিখ নাগাদ আবার কার্যকরী কমিটির সভা ডেকে বার্ষিক সাধারণ সভার দিন ধার্য হবে। এবং তখনই নির্বাচনের দিন ক্ষণ ঠিক করা হবে। ফেব্রুয়ারি মাসে নির্বাচন হওয়ার কথা। নির্বাচনের জন্য প্রাক্তন বিচারপতি অসীম রায়ের তত্বাবধানে পাঁচ জনের কমিটি করা হয়েছে। কমিটিতে আছেন ক্লাবের প্রাক্তন ফুটবলার শ্যামল বন্দ্যোপাধ্যায়।
তবে এই সবের মধ্যেই অজানা থেকে গেল সচিব পদ থেকে সৃঞ্জয়ের পদত্যাগের কারণ। সৃঞ্জয় ক্লাবের নির্বাচিত সচিব নন। ২০১৮ সালের নির্বাচনে সচিব পদে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন সৃঞ্জয়ের বাবা স্বপনসাধন (টুটু) বসু । সহসচিব হন সৃঞ্জয়। সভাপতি হন আইনজীবী গীতানাথ গঙ্গোপাধ্যায়। ২০১৯ সালে গীতানাথবাবুর প্রয়াণের পর সভাপতি হন টুটুবাবু। সচিব হন সৃঞ্জয়। কিন্তু দু বছরের মাথায় তাঁকেও সচিবের পদ ছেড়ে দিতে হল। ক্লাবের অভ্যন্তরে সচিবের পদত্যাগের কারণ নিয়ে অনেক প্রশ্ন। সৃঞ্জয় তাঁর পদত্যাগের কারণ হিসেবে ব্যক্তিগত অসুবিধার কথাই লিখেছেন। এবং সেই চিঠিতে ধন্যবাদ জানিয়েছেন ক্লাবের সভাপতি তাঁর বাবা এবং রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে। ক্লাবের অন্দরে খোঁজ নিয়ে জানা গেল, সৃঞ্জয়ের পদত্যাগের পিছনে মোহনবাগান ক্লাবের কোনও ব্যাপার নেই। ক্লাবে সৃঞ্জয় এবং তাঁর বাবা টুটুর নিয়ন্ত্রণ একশো ভাগই নয়, তার চেয়েও বেশি। মোহনবাগান ক্লাবের সঙ্গে এটিকের সংযোগ সাধন নিয়ে ক্লাবের কোনও সাধারণ বা বিশেষ সাধারণ সভা হয়নি। যা হয়েছে তা সৃঞ্জয় এবং দেবাশিসই ঠিক করেছেন। বাকিরা সবাই তা মেনেও নিয়েছেন বা মেনে নিতে বাধ্য হয়েছেন। এই নিয়ে ক্লাবের সদস্য সমর্থকদের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভ আছে। মাঝে মাঝে তা প্রকাশ্যে আসে। ক্লাবের সামনে কিংবা ধর্মতলায় সি ই এস সি-র সামনে সমর্থকদের সমাবেশে এটিকে বিরোধী স্লোগানও শোনা যায়। তবে সৃঞ্জয়ের পদত্যাগের পিছনে এ সবের কোনও ভূমিকা নেই। ক্লাব অভ্যন্তরে খোঁজ নিয়ে জানা গেল, কারণটা রাজনৈতিক এবং সেটা সৃঞ্জয়ের ব্যক্তিগত। সেই ব্যক্তিগত কারণেই তিনি পদত্যাগ করেছেন।
মোহনবাগান ক্লাবে এ রকম পদত্যাগের নজির ভুরিভুরি। টুটু, তাঁর প্রয়াত বন্ধু এবং ক্লাবের দীর্ঘদিনের সচিব অঞ্জন মিত্র, অর্থ সচিব দেবাশিস দত্ত অসংখ্যবার পদত্যাগ করেছেন। আবার ফিরে এসে স্বপদে বহালও হয়েছেন। এখন দেখার সৃঞ্জয় সেই পথে হাঁটেন কি না। আসন্ন নির্বাচনে আবার তিনি সচিব পদে প্রার্থী হন কি না তাই এখন দেখার।