অটিজম(autism) বা অটিজম স্পেকট্রাম ডিসঅর্ডার(autism spectrum disorder) একটি মস্তিষ্ক ও স্নায়ুর বিকাশজনিত(brain and neurological development) সমস্যা। অন্যান্য নিউরোলজিক্যাল ডেভলপমেন্ট বা স্নায়ুরবিকাশজনিত একাধিক সমস্যা যেমন অ্যাসপার্গার ডিসঅর্ডার(Asperger Disorder) ও রেট্ট সিন্ড্রোমের(Rett Syndrome) মতো অটিজমও। এই সমস্যায় আক্রান্ত ব্যক্তির মধ্যে সামাজিক সম্পর্ক স্থাপন ও আশপাশের পরিবেশ সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপনে সমস্যা দেখা দেয়। পাশাপাশি অটিজম ব্যক্তিকে সীমাবদ্ধ আচরণ করতে দেখা যায়। ভাষা ব্যবহারে দক্ষতা অর্জনে সমস্যা হয়।
এই সমস্যার কারণ কি?
তবে ঠিক কি কারণে এই রোগ হয় তা এখনও জানা যায়নি। বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন জেনেটিক(genetic) বা হেরিটেবিলিটির(heritability) প্রভাব এই ক্ষেত্রে অনেকটাই কাজ করে। জন্মের প্রায় দ্বিতীয় বছরের মধ্যেই কোনও শিশু অটিজম সমস্যাগ্রস্ত কিনা তা বোঝা যায়। আবার কিছু ক্ষেত্রে এ এস ডি আক্রান্ত শিশুদের প্রায় ১৮ থেকে ২৪ মাস বয়স পর্যন্ত স্বাভাবিক বিকাশ হচ্ছে বলে মনে হয় এবং তারপর তারা নতুন দক্ষতা অর্জন বন্ধ করে দেয় অথবা পূর্বের অর্জিত দক্ষতা হারিয়ে ফেলে। আবার কিছু ক্ষেত্রে সমস্যা জটিল হলে আরও অল্প বয়সেই এই রোগ ধরা পড়ে। প্রত্যেক ১০হাজার শিশুদের মধ্যে প্রায় ৮ থেকে ১০ শিশু অটিজমের শিকার হয়। অটিজমে আক্রান্ত প্রায় ৩০ শতাংশ শিশুর মধ্যে বুদ্ধিবৃত্তিক বিকাশে(intellectual disability) সমস্যা দেখা যায়।
অটিজম স্পেকট্রাম ডিসঅর্ডার (autism spectrum disorder) ঠিক কি?
অ্যাসপার্গার ডিসর্ডারে ভাষা অর্জনের ক্ষেত্রে কোনও সমস্যা হয়। অটিজম যেমন মেল চাইল্ডদের(male child) মধ্যে তুলনামূলক বেশি দেখা যায়। তেমন আবার রেট্ট সিন্ড্রোম ফিমেল চাইল্ডের(female child) ক্ষেত্রে বেশি দেখা যায়। এ ক্ষেত্রে ৬ মাস বয়স থেকে এই রোগের লক্ষণ দেখা যেতে শুরু করে।
অটিজম (autism) আক্রান্ত শিশুর মধ্যে এই সমস্যাগুলো (problems)দেখতে পাওয়া যায়-
- এই শিশুরা অন্য মানুষের অনুভূতি বুঝতে বা তাদের নিজস্ব অনুভূতি নিয়ে কথা বলতে অসুবিধা অনুভব করে। এরা সাধারণত অন্যের চোখের দিকে সোজাসুজি তাকানো এড়িয়ে যায় এবং একা থাকতে পছন্দ করে
- এক বছর বয়সেও শিশুর নাম ধরে ডাকলে সে কোনও প্রতিক্রিয়া দেয় না।
- অটিস্টিক শিশুরা দেরি করে কথা বলা এবং ভাষা ব্যবহারের দক্ষতা অর্জন করতে সমস্যায় পড়েন। কোনও একটা শব্দ বা ছোটো ছোটো বাক্য বারবার বলতে থাকে। এই সমস্যাকে ইকোলালিয়া বলে।
- অটিস্টিক শিশুদের কোনও প্রশ্ন করা হলে প্রশ্নের সঙ্গে সম্পর্কহীন উত্তর দেয়।
- কিছু সময় তারা বিশেষ কোনও শব্দ, গন্ধ, স্বাদ, চেহারা বা অনুভবের ক্ষেত্রে বিশেষ প্রতিক্রিয়া করে আবার অনেক ক্ষেত্রে কোনও কোনও প্রতিক্রিয়ায় দেয় না। অটিস্টিক ব্যক্তির আচমকা মেজাজ খারাপ হয়ে যেতে পারে। তখন তারা কেঁদে ফেলে, অকারণেই হাসতে শুরু করে আবার অল্পতেই ভীষণ বিরক্ত হয়ে পড়ে। অনেক ক্ষেত্রে তাদের এই মানসিক অবস্থা দীর্ঘায়িত হয়। এই সব শিশুদের খারাপ মন সংযোগ থাকে আবার অনেক ক্ষেত্রে অতি সক্রিয় হয়। এদের মধ্যে অ্যাটেনশন ডেফিসিট হাইপারঅ্যাক্টিভিটি ডিসর্ডার দেখা যায়। অনেক ক্ষেত্রে অটিস্টিক বাচ্চাদের মধ্যে ইনসোমনিয়ার লক্ষণ দেখা যায়।
তবে অটিজমের সমস্যায় আক্রান্ত শিশুরা বিশেষ প্রতিভাসম্পন্ন হয় যেমন এদের অনেকেই ক্ষুরধার স্মৃতিশক্তির অধিকারী হয়। কেও কেও আবার তাদের বয়সের অন্য শিশুদের তুলনায় গণনা ক্ষমতায় বেশি দক্ষ হয়। প্রত্যেক বছর ২রা এপ্রিল অটিজিমের মতো স্নায়ুবিকাশজনিত সমস্যা নিয়ে সাধারণ মানুষকে সচেতন করে তুলতে বিশ্বজুড়ে পালিত হয় বিশ্ব অটিজম সচেতনতা দিবস(World Autism Awareness Day)।