অমৃতসর: রবিবার ভোর। মোগা জেলার রোডে গ্রাম পুলিশে পুলিশ ছয়লাপ। যে গ্রাম এক সময় বিখ্যাত ছিল জার্নেল সিং ভিন্দ্রানওয়ালের (Jarnail Singh Bhindranwale) ‘পুরখোঁ কি’ ভিটে বলে। সেই একই গ্রাম থেকে বিস্ময়কর আত্মসমর্পণ আরেক খলিস্তানপন্থী (Pro Khalistan) নেতা অমৃতপাল সিংয়ের (Amritpal Singh)। কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাগুলির নজর এখন এই গ্রামের দিকে। অমৃতপালের কাছ থেকে এখন গোয়েন্দারা জানার চেষ্টা করবেন, কীভাবে পাক (Pakistan) চরবাহিনী আইএসআই (ISI) তাকে সাহায্য করত।
পুলিশ জানিয়েছে, গ্রেফতারের আগে ওয়ারিশ পঞ্জাব দে-র প্রধানকে পুরোপুরি ঘিরে ফেলা হয়। যদিও পুলিশ গুরুদ্বারের ভিতরে ঢোকেনি বলে জানিয়েছেন পঞ্জাবের আইজি। সুখচ্যায়েন সিং গিল জানান, পুলিশ গুরুদ্বার ঘিরে ফেললেও ভিতরে ঢোকেনি। অমৃতপালকে বাধ্য করা হয়েছে বেরিয়ে এসে আত্মসমর্পণ করতে।
আরও পড়ুন: Amritpal Singh | খলিস্তানপন্থী নেতা অমৃতপালের ‘আত্মসমর্পণ’, পাঠানো হচ্ছে অসমে
রবিবার খুব ভোরে অমৃতপাল এই গ্রামের গুরুদ্বারে আসে। সেখানে অনুগতদের সংক্ষিপ্ত ভাষণে বলে, সে আত্মসমর্পণ করতে চলেছে। গোয়েন্দা সূত্রে জানা গিয়েছে, অমৃতপালের ইচ্ছে ছিল জনসমক্ষে সে ধরা দেবে। কিন্তু, কেন্দ্রীয় এজেন্সিগুলি তার সেই প্রস্তাব নাকচ করে দেয়। এদিন অমৃতপাল বলে, গত এক মাসে সে পঞ্জাব পুলিশকে লোকচক্ষুর সামনে বেনকাব করে দিয়েছে। আপ মুখ্যমন্ত্রী ভগবন্ত মানের প্রকৃত মুখ প্রকাশ করে দিয়েছে। এজন্যই সে আত্মগোপন করে ছিল। আমাকে আদালতের সামনে অভিযুক্ত করা হবে জানি, কিন্তু ঈশ্বরের কাছে নিষ্পাপ। ভিন্দ্রানওয়ালের ভাগনে যশবীর রোডে একটি সংবাদ মাধ্যমকে জানিয়েছেন, শনিবার রাতেই অমৃতপাল পুলিশকে আত্মসমর্পণের কথা জানিয়েছিল। গুরুদ্বারে সকালে পুজোপাঠও করে সে। সকাল ৭টা নাগাদ পুলিশের কাছে ধরা দেয়।
এদিন পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণ করে অমৃতপাল সিং। রবিবার ভোরে মোগা জেলার রোডে গ্রামে পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে। প্রায় এক মাস পাঁচদিন পর পুলিশের কাছে ধরা দিল খলিস্তানপন্থী অমৃতপাল। গত ১৮ মার্চ থেকে পুলিশ তাকে ধরার চেষ্টা করেও বিফল হয়েছে। তবে অমৃতপালের তথাকথিত আত্মসমর্পণ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। দীর্ঘদিন পুলিশের চোখে ধুলো দিয়ে পালিয়ে বেড়ালেও হঠাৎ করে কেন ধরা দিল সে? কেউ কেউ মনে করছেন নিরাপদ জায়গা থেকে আশ্বাস পাওয়ার পরেই অর্থাৎ তার সঙ্গে একটি গোপন চুক্তির পরই নাকি সে ধরা দিয়ে থাকতে পারে।
অমৃতপালকে গ্রেফতারির যে ছবি পাওয়া গিয়েছে তাতে দেখা গিয়েছে, মাথায় তার গেরুয়া রঙের পাগড়ি। সাদা কুর্তা। জাতীয় নিরাপত্তা আইনে তাকে গ্রেফতার করার পর অসমের ডিব্রুগড়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। সেখানেই আপাতত পুলিশের হেফাজতে রয়েছে অমৃতপালের আরও ৮ শাগরেদ ও ঘনিষ্ঠ।
গত ৩১ মার্চ নতুন একটি ইউটিউব ভিডিয়োর মাধ্যমে অমৃতপাল বলেছিল, আমি পলাতক নই, আমি আত্মসমর্পণও করছি না। ইউটিউবে (Youtube) প্রকাশ করা একটি ভিডিয়োয় ওয়ারিশ পঞ্জাব দের পলাতক প্রধান বলেছিলেন, আমি বিদ্রোহী। আমি কোথাও পালিয়ে যাইনি। পাশপাশি তিনি আরও বলেন, আমি আত্মসমর্পণ করব না। ওই ভিডিয়োয় অমৃতপাল আরও বলেন, আমাকে গ্রেফতার নয়, বরং শিখ সম্প্রদায়ের উপর অত্যাচার চালাতেই অভিযানে নেমেছে পঞ্জাব সরকার (Punjab Government)। এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করার কথা জানিয়েছেন অমৃতপাল। তিনি বলেন, সরকারকে ভয় পাই না আমি। তারা যা খুশি করতে পারে। কেউ আমায় মারতে চাইলেও আমি ভয় পাই না। আমি খুব শীঘ্রই সবার সামনে আসব।
উল্লেখ্য, গত ২৩ ফেব্রুয়ারি অমৃতসরের উপকণ্ঠে অমৃতপালের সমর্থকরা অজনালা পুলিশে স্টেশনে (Ajnala police station) ইউনিফর্মধারী পুলিশ কর্মীদের সঙ্গে সংঘর্ষ ও হাতাহাতিতে জড়িয়ে পড়েছিল। অমৃতের ঘনিষ্ঠ সহযোগী লাভপ্রীত তুফানের (Lovepreet Toofan) মুক্তির দাবিতে ওয়ারিশ পাঞ্জাব দে গোষ্ঠীর সমর্থকরা সেদিন পুলিশ স্টেশন ঘেরাও করেছিল। এছাড়াও, অমৃতপালের বিরুদ্ধে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্টমন্ত্রী অমিত শাহকে (Amit Shah, Union Home Minister) হুমকি দেওয়ার গুরুতর অভিযোগ রয়েছে। অমৃত কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে হুঁশিয়ারি দিয়েছিল, খলিস্তানপন্থী আন্দোলনকে সরকার দমাতে চাইলে, তার পরিণতি (Consequences) ভুগতে হবে। এপ্রসঙ্গে সে প্রয়াত ও প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর (Former and Late Prime Minister Indira Gandhi) হত্যাকাণ্ডের পরিণতির কথাও উল্লেখ করেছিল।