কোহিমা: নাগাল্যান্ডবাসীর দাবিকে উড়িয়ে দিয়ে নাগাল্যান্ডে আফস্পার (AFSPA Extended In Nagaland) মেয়াদ আরও ৬ মাস বাড়াল কেন্দ্র। বিতর্কিত এই আইন প্রত্যাহারের দাবিতে নাগাল্যান্ড বিধানসভায় প্রস্তাবও পাস হয়ে। কেন্দ্রকে চিঠিও পাঠানো হয়। কিন্তু এ সব উপেক্ষা করে নাগাল্যান্ডকে ‘উপদ্রুত’ এবং ‘বিপজ্জনক’ হিসেবে চিহ্নিত করে সশস্ত্র বাহিনী বিশেষ ক্ষমতা আইন বা আফস্পার (AFSPA) মেয়াদ বাড়াল মোদি সরকার। প্রতি ৬ মাস অন্তর আফস্পার মেয়াদ বাড়ানো হয়।
ডিসেম্বরের শুরুতে নাগাল্যান্ডের মন জেলায় জঙ্গি নিধন অভিযানে সেনাবাহিনীর গুলিতে এবং পরবর্তী হিংসার ঘটনায় ১৪ জন নিরীহ নাগরিক প্রাণ হারিয়েছেন৷ বলা হচ্ছে, ভুল গোয়েন্দা রিপোর্টের জন্য এতগুলো নিরীহ মানুষের প্রাণ গিয়েছে৷ কার গাফিলতিতে এত বড় ঘটনা ঘটেছে তা নিয়ে ময়নাতদন্ত চলছে। এই ঘটনার পর আফস্পার প্রয়োজনীয়তা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে৷ নাগাল্যান্ডের মুখ্যমন্ত্রী নেউফিও রিও কেন্দ্রের কাছে এই বিতর্কিত আইন প্রত্যাহারের আর্জি জানানা।
এরপর কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের উপস্থিতিতে ২৩ ডিসেম্বর একটি বৈঠক হয়। সেখানে নাগালান্ডের বর্তমান পরিস্থিতি পর্যালোচনা করা হয়। নাগাল্যান্ডের মুখ্যমন্ত্রী নিফিউ রিও ছাড়াও অসমের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মা, নাগাল্যান্ডের উপমুখ্যমন্ত্রী ওয়াই পত্তন, এনপিএফএলপি নেতা টিআর জেলিয়াং গুরুত্বপূর্ণ ওই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে নাগাল্যান্ড থেকে ‘আর্মড ফোর্সেস স্পেশাল পাওয়ার অ্যাক্ট’ (AFSPA) প্রত্যাহার নিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে একটি প্যানেল তৈরি হয়।
আরও পড়ুন: AFSPA Nagaland: আফস্পা বাতিলের দাবিতে নাগাল্যান্ড বিধানসভায় প্রস্তাব পাস
আফস্পা কী? কী বলা আছে এই আইনে? দ্য আর্মড ফোর্সেস স্পেশাল পাওয়ার অ্যাক্ট সংক্ষেপে আফস্পা৷ উত্তর-পূর্বের রাজ্যগুলির বিচ্ছিন্নতাকামী শক্তি দমনে সেনাবাহিনীর হাতে বাড়তি ক্ষমতা তুলে দিতে ১৯৫৮ সালে এই আইন চালু করে কেন্দ্র৷ আজও অরুণাচল প্রদেশ, মিজোরাম, নাগাল্যান্ড, মণিপুর, মেঘালয়, অসম এবং ত্রিপুরায় চালু আছে৷ স্বাধীনতার এত বছর পরও এই আইন চালুর প্রয়োজনীয়তা নিয়ে হামেশাই প্রশ্ন উঠেছে৷ উত্তর-পূর্বের বহু মানুষের চোখে আফস্পা হল ‘কালা আইন’৷
উত্তর-পূর্বের মানুষদের একটা বড় অংশের অভিযোগ, আইনের অপপ্রয়োগ করে সেনাবাহিনী সাধারণ মানুষের উপরই দমন পীড়ন চালায়৷ এই আইনে বলা আছে, আইনশৃঙ্খলায় বিঘ্ন ঘটাতে পারে এমন কোনও ব্যক্তিকে স্রেফ সন্দেহের বশে সেনাবাহিনী গ্রেফতার এবং গুলি করতে পারবে৷ বিনা ওয়ারেন্টে যে কোনও জায়গায় তল্লাশি চালার অধিকারও দেওয়া হয়েছে সেনাবাহিনীকে৷ সন্দেহজনক গাড়ি থামিয়ে রাস্তায় তল্লাশি করতে পারবে৷ সর্বোপরি এই আইন সেনাবাহিনীকে রক্ষাকবচ দেয়৷ অভিযুক্ত কোনও সেনা অফিসারের বিরুদ্ধে তদন্ত করার কোনও ধারা এই আফস্পায় নেই৷
আরও পড়ুন: নাগাল্যান্ডে AFSPA প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নেবে কেন্দ্রীয় প্যানেল, ৪৫ দিনে রিপোর্ট