কলকাতা: পাকিস্তান এবং বাংলাদেশ সীমান্ত লাগোয়া তিন রাজ্যে বিএসএফের ক্ষমতা বাড়িয়েছে কেন্দ্র। পঞ্জাব, অসম এবং পশ্চিমবঙ্গে আন্তর্জাতিক সীমান্ত থেকে ভারতীয় ভূখণ্ডে ৫০ কিলোমিটার পর্যন্ত এলাকায় তল্লাশি চালাতে পারবে বিএসএফ। প্রয়োজনমাফিক জিজ্ঞাসাবাদ, গ্রেফতার এবং বাজেয়াপ্ত করার কাজ করতে পারবে তারা।
বর্তমানে উপরের সবকটি ক্ষমতাই ভোগ করে থাকে বিএসএফ। তবে তা আন্তর্জাতিক সীমান্ত থেকে ভারতীয় ভূখণ্ডে ১৫ কিলোমিটার এলাকা পর্যন্ত। কিন্তু কেন্দ্র আইন সংশোধন করে বিএসএফের কাজের এলাকা বাড়িয়েছে। অমিত শাহের মন্ত্রক এভাবে আচমকা বিএসএফের ক্ষমতা এবং ব্যাপ্তি বাড়িয়ে দেওয়ায় দাঁনা বেধেছে বিতর্ক।
আরও পড়ুন: গুজরাতে কমলেও বাংলায় ক্ষমতা বাড়ল বিএসএফের, শাহের মন্ত্রকের নির্দেশ ঘিরে বিতর্ক
বিএসএফের ক্ষমতা বৃদ্ধির জেরে উত্তরবঙ্গের সিংহভাগ এলাকা সহ বাংলার ৩৩ শতাংশ এলাকার নিয়ন্ত্রণ চলে যাচ্ছে কেন্দ্রের হাতে। সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যম ‘দ্য ওয়্যার’ একটি প্রতিবেদনে এমনটাই দাবি করেছে। উত্তর-পূর্ব ভারতের শিলিগুড়ি সহ একাধিক বড় শহরের বিএসএফ তথা অমিত শাহের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের আওতায় চলে আসবে।
বাংলাদেশের সঙ্গে দীর্ঘতম আন্তর্জাতিক সীমানা রয়েছে পশ্চিমবঙ্গের (২২১৬.৭ কিমি)। ফলে বিএসএফের ক্ষমতা সংক্রান্ত আইন সংশোধনের বড় প্রভাব পড়তে চলেছে বাংলায়। দার্জিলিং পাহাড়ের কার্শিয়াং থেকে শুরু করে সুন্দরবন পর্যন্ত এলাকায় প্রয়োজনমাফিক জিজ্ঞাসাবাদ, গ্রেফতার এবং বাজেয়াপ্ত করতে পারবে বিএসএফ।
আরও পড়ুন: ফের ‘ভুয়ো’ ছবি, এ বার ভাইরাল আমেরিকার সংবাদপত্রে মোদির ছবি সহ ‘প্রশস্তি’
বাংলার ২৩ জেলার মধ্যে বাংলাদেশ সীমান্ত রয়েছে ১০টি জেলায়। কোচবিহার, জলপাইগুড়ি, দুই দিনাজপুর, দার্জিলিং, মালদহ, নদিয়া, মুর্শিদাবাদের সিংহভাগ এলাকা বিএসএফের আওতায় চলে আসবে। রাজ্যের বৃহত্তম জেলা উত্তর ২৪ পরগনার দুই তৃতীয়াংশ এবং দক্ষিণ ২৪ পরগনার এক তৃতীয়াংশ এলাকায় এর ব্যতিক্রম নয়।
৪২টি লোকসভা কেন্দ্রের ২১টিই এই জেলাগুলির অন্তর্গত। তৃণমূলের রাজ্যসভার সাংসদ সুখেন্দুশেখর রায় বলেন, সীমান্তবর্তী জেলাগুলির প্রায় সব শহরই সীমান্ত থেকে ৫০ কিলোমিটারের মধ্যে অবস্থিত। বিএসএফের আইন সংশোধনের পিছনে কেন্দ্রের কোনও গোপন পরিকল্পনা রয়েছে। জাতীয় স্বার্থে এই পদক্ষেপ হলে কেন রাজ্য সরকারের সঙ্গে কথা বলা হলো না?
কোচবিহারের বাসিন্দা কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী নিশীথ প্রামানিক বলেন, রাজ্য সরকারের আপত্তির কোনও কারণ দেখতে পারছি না। জাতীয় নিরাপত্তা ও সীমান্তের সুরক্ষার স্বার্থে বিএসএফের ক্ষমতা এবং ব্যাপ্তি পরিবর্তন করা যেতে পারে। পশ্চিমবঙ্গের ক্ষেত্রে আলাদা করে কিছু করা হয়নি। পঞ্জাব ও অসমেও একই কারণে এই আইন সংশোধন করা হয়েছে।
ছোট্ট দুই জেলা কালিম্পং ও আলিপুরদুয়ার ছাড়া উত্তরবঙ্গের বাকি জেলাগুলির সিংহভাগ এলাকা বিএসএফের নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে। কোচবিহারের সামান্য কিছু এলাকা সীমান্ত থেকে ৫০ কিলোমিটারের বাইরে। জলপাইগুড়ি, মালদহ, উত্তর দিনাজপুরও এর ব্যতিক্রম নয়। বিজেপি পাখির চোখ যে উত্তরবঙ্গ, তা বলার অপেক্ষা রাখে না।
আরও পড়ুন: উন্নয়নের ছবি ‘চুরি’, উত্তরপ্রদেশের উন্নয়ন প্রচারে বাংলার ‘মা’-মমতাই ভরসা যোগীর
ফলে বিএসএফের এই ক্ষমতাবৃদ্ধির পিছনে রাজনৈতিক অভিসন্ধিও খুঁজে পাচ্ছেন অনেকে। বাংলার চার কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রীর দুজনই উত্তরবঙ্গের। সম্প্রতি উত্তরবঙ্গ থেকেই সুকান্ত মজুমদারকে রাজ্য সভাপতি করেছে বিজেপি। দক্ষিণবঙ্গের মুর্শিদাবাদ জেলার সদর শহর বহরমপুরও বিএসএফের আওতায় চলে আসবে।
নদিয়ার জেলা সদর কৃষ্ণনগর, উত্তর ২৪ পরগনার হাবড়া, বসিরহাট, অশোকনগর সীমান্ত থেকে ৫০ কিলোমিটারের মধ্যে অবস্থিত। সুখেন্দুর দাবি, এতোদিন পর্যন্ত আমাদের নেতাদের বিরুদ্ধে বিনা কারণে ইডি-সিবিআই লেলিয়ে দেওয়া হতো। এবার সেই তালিকায় জুড়তে চলেছে বিএসএফ। ড্রাগ, গরু পাচার, জাল টাকার মামলায় ফাঁসানো স্রেফ সময়ের অপেক্ষা।
আরও পড়ুন: নতুন দল গঠনের ঘোষণা অমরিন্দরের, বিজেপির সঙ্গে জোট বেঁধে লড়তে পারেন ভোটে
বাংলা সংস্কৃতি মঞ্চের সভাপতি সমীরুল ইসলাম বলেন, কেন্দ্রের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আমরা শীঘ্রই পথে নামব। ২০২৪-এর নির্বাচনকে নিয়ন্ত্রণ ও প্রভাবিত করার জন্য এমনটা করা হয়েছে। বিধানসভা নির্বাচনে বাংলা দখল করতে ব্যর্থ হওয়ার পিছনের দরজা দিয়ে ক্ষমতা দখল করার চেষ্টা চালাচ্ছে বিজেপি। অসমকে প্রক্সি হিসেবে ব্যবহার করে বাংলা ও পঞ্জাবকে টার্গেট করা হয়েছে।
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের বক্তব্য, দেশের নিরাপত্তার কথা মাথায় রেখেই সীমান্ত সংলগ্ন কয়েকটি রাজ্যে বিএসএফের ক্ষমতা কিছুটা বাড়ানো হয়েছে। যদিও কেন্দ্রের এই সিদ্ধান্তের ফলে পুলিশ এবং স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে বিএসএফের সংঘাত আরও বাড়বে বলে মনে করছে আরেকটি মহল। উত্তর-পূর্বের ৫ রাজ্যের ক্ষেত্রে কেন এই এলাকা নির্দিষ্ট করা হয়নি সেই প্রশ্নও তুলেছেন অনেকে।