রায়না: নিয়োগ দুর্নীতি কাণ্ডে জেরবার রাজ্যের স্কুল শিক্ষা দফতর। দুর্নীতিতে নাম জড়ানোয় বহু শিক্ষকের যেমন চকরি গিয়েছে, তেমনই শ্রীঘরে ঠাঁই হয়েছে প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী সহ শিক্ষা দফতরের একাধিক কর্তার। ঠিক এমনই সময়ে এই রাজ্যেরই পূর্ব বর্ধমানের এক স্কুলের প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে বেনজির আর্থিক দুর্নীতি ও জালিয়াতির অভিযোগ উঠল। ঘটনাটি ঘটেছে রায়না ২ ব্লকে চকচন্দন দুর্গাদাস উচ্চ বিদ্যালয়ে। এই অভিযোগে সোচ্চার হলেন সহ শিক্ষক ও অভিভাবকেরা।
স্কুলের প্রধান শিক্ষকের নাম প্রশান্ত দাস। শুধু স্বোচ্চার হওয়াই নয়, বৃহস্পতিবার জেলার স্কুল শিক্ষা দফতরের প্রতিনিধিনিরা দুর্নীতির তদন্তে স্কুলে গেলে গ্রামবাসী ও অভিভাবকরা তাঁদের ঘিরে বিক্ষোভ দেখান। যা নিয়ে এদিন স্কুলে হুলস্থুল পড়ে যায়। এমত পরিস্থিতিতে স্কুল ইন্সপেক্টর প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করার কথা জানালে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়।
আরও পড়ুন: উপনির্বাচনের জেরে নিরাপত্তার অভাব! ধূপগুড়িতে ফের পিছিয়ে গেল পঞ্চায়েতের বোর্ড গঠন
১৯৫৮ সালে প্রতিষ্ঠা পায় চকচন্দন দুর্গাদাস উচ্চ বিদ্যালয়। প্রতিষ্ঠার পর থেকে বিদ্যালয়টি স্বাভাবিক নিয়মেই চলছিল। কিন্তু ২০১৯ সালে প্রশান্ত দাস এই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক পদে দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই বিদ্যালয়টি সুনাম খোয়াতে শুরু করে বলে অভিযোগ অভিভাবকদের। বর্তমানে বিদ্যালয়ের ৩৭০ জন পড়ুয়ার জন্য রয়েছেন ১৭ জন শিক্ষক শিক্ষিকা ও দু’জন অশিক্ষক কর্মচারী। সবাই স্কুলে আসেন। কিন্তু বিদ্যালয়ে শুধু দেখা পাওয়া যায় না প্রধান শিক্ষক প্রশান্ত দাসের। এ কারণে পঠনপাঠন থেকে শুরু করে পরিকাঠামো গত উন্নয়ন সহ সবদিক থেকেই স্কুলটি পিছিয়ে পড়েছে। পড়ুয়াদের মিড ডে মিল পাওয়াও বন্ধ হয়ে গিয়েছে। এমনকি স্কুলের মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের রেজিস্ট্রেশন পর্যন্ত হয়নি বলে অভিযোগ গ্রামবাসী সহ শিক্ষক ও অভিভাবকদের।
জানা গিয়েছে, স্কুল পরিদর্শকের সই জাল করে প্রধান শিক্ষক স্কুলের একাধিক ফাণ্ড থেকে টাকা সরিয়ে নিয়েছেন বলে অভিযোগ। মিড-ডে মিলের খাতের টাকাও হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ ওঠে। এইসব দুর্নীতি ধরা পড়ার পর মুচলেখা দিয়ে প্রধান শিক্ষক জালিয়াতি করে টাকা হাতিয়ে নেওয়ার কথা স্বীকার করে নেন। কিছু টাকা ফেরৎ দিলেও বহুদিন পেরিয়ে যাওয়ার পরও মোটা অঙ্কের টাকা আজও প্রধান শিক্ষক ফেরৎ দেননি। গোটা বিষয় জেলা স্কুল পরিদর্শককে জানানো হলেও কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। প্রধান শিক্ষকই চকচন্দন দুর্গাদাস স্কুলের একমাত্র গণিতের শিক্ষক। তাঁর অনুপস্থিতিতে এখনও পর্যন্ত নবম ও দশম শ্রেণির পড়ুয়াদের অঙ্কের পরীক্ষাও নেওয়া যায়নি। এছাড়াও দীর্ঘদিন প্রধান শিক্ষক স্কুলে না আসায় স্কুলের প্রশাসনিক কাজ শিকেয় ওঠার পাশাপাশি এবছর মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের রেজিস্ট্রেশন হয়নি ।
জুলাইয়ের প্রথম সপ্তাহ থেকে বিদ্যালয়টি কার্যত অভিভাবকহীন। জেলা স্কুল দফতর এতদিন সব জেনেও কোনও ব্যবস্থা না নেওয়ায় সবাই হতাশ। তাই এদিন জেলা স্কুল দফতরের চার প্রতিনিধি স্কুলে আসতেই গ্রামবাসী ও অভিভাবকরা স্কুলের গেটে তালা ঝুলিয়ে দিয়ে তাঁদের বিক্ষোভ দেখায় ।