skip to content
Friday, June 28, 2024

skip to content
Homeচতুর্থ স্তম্ভFourth Pillar | রোটি কপড়া আউর মকান  

Fourth Pillar | রোটি কপড়া আউর মকান  

Follow Us :

১০ বছর হয়ে গেল, প্রথমে দো সাল কে অন্দর, তারপর পাঁচ সাল, তারপর ২০২১ কে অন্দর, তারপর গোলপোস্ট আরও পিছোল ২০২৩। এবার অমৃতকালে ঢুকে গেল দেশ, গোলপোস্ট আরও পিছিয়ে এখন ২০৩৫। হ্যাঁ, ২০১৪ থেকে মোদিজির প্রতিশ্রুতি তো নয়, যেন মরীচিকা, যেই ভাবছি কাছে আসছে, ওমনি সে পিছিয়ে নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে। বুঝিয়ে বলি। মোদিজি মানে আমাদের প্রধান সেবককে পুরোদস্তুর জাতীয় রাজনীতির মাঠে নামতে দেখা গিয়েছে ১৩ সেপ্টেম্বরের ঘোষণার পর থেকে। সেদিনই বিজেপির পার্লামেন্টারি বোর্ড মোদিজিকে দেশের পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী মুখ হিসেবে ঘোষণা করা হয়। যে বৈঠকে লালকৃষ্ণ আদবানি উপস্থিতও থাকেননি। এরপর থেকে এক সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা আকার নিতে থাকে। আজকের সমাজ বিপ্লবী পি কে, হ্যাঁ প্রশান্ত কিশোর পরিকল্পনার দায়িত্ব নেন, মোদিজিকে ঘিরে এক টিম মোদি তৈরি হয়। বিজেপির ফান্ডিংয়ের বাইরে এক বিরাট ফান্ডিংয়ের দায়িত্ব নেন গুজরাত শিল্পপতিরা, আদানি, আম্বানি ইত্যাদিরা। আদানি তাঁর প্রাইভেট প্লেন প্রায় দান করেছিলেন বললেও কম বলা হবে। মোদিজি সেই প্লেনে চেপে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে যাচ্ছিলেন, কিন্তু রাত্রিবাস আমেদাবাদে, এটাই ছিল রুটিন। আদবানি পড়ে থাকলেন ঘরে, তাঁর রামরথযাত্রার রথে ভিড় সামলাতেন যিনি সেই মোদিজি বের হলেন প্রতিশ্রুতি বিলোতে। এবং সেই তখন থেকেই তাঁর বক্তব্য খুব পরিষ্কার, ১৯৪৭ থেকে দেশে এক বংশানুক্রমিক শাসন চলেছে, দেশের মানুষের জন্য কোনও কাজই হয়নি, কেবল পাল্লা দিয়ে বেড়েছে দুর্নীতি। সেই দুর্নীতি বন্ধ করলেই, বিদেশে গচ্ছিত কালো টাকা ফেরত আনলেই আচ্ছে দিন আয়েঙ্গে। কে করবে সেই কাজ? 

প্রত্যেক জনসভায় মোদিজি বললেন, আমি, কংগ্রেসের এই বংশানুক্রমিক শাসন আর দুর্নীতিকে উখাড় ফেক কর আচ্ছে দিন লায়েঙ্গে। বিদেশি ব্যাঙ্কে রাখা কালাধন ফিরে আসবে, আমজনতার রোটি কপড়া মকানের স্বপ্ন বাস্তব হবে। কবে হবে? দো সাল চাহিয়ে, ইস ব্যবস্থা কো উখাড় ফেকুঙ্গা। অন্যদিকে বাকি বিরোধী দলগুলো? অকংগ্রেসি অবিজেপি দলগুলো, কমিউনিস্টরা? তাঁরাও সরব দুর্নীতি নিয়ে, তাঁরাও সরব বংশানুক্রমিক শাসন নিয়ে, তাঁরাও বলছেন স্বাধীনতার এতদিন পরেও কেন আম জনতা রোটি কপড়া আর মকানের হক পায়নি। তাঁদের কথা কি মানুষ বিশ্বাস করেনি? আলবত করেছে, কেবল সেই সব বিরোধী মতামত ভোটের বাক্সে জমা হয়েছে কংগ্রেসকে হারাতে পারে এমন শক্তপোক্ত রাজনৈতিক দল বিজেপির বাক্সে। যিনি জীবনে লোকসভার নির্বাচনে দাঁড়াননি, তিনি একসঙ্গে দুটো আসন, গুজরাতের ভদোদরা আর উত্তরপ্রদেশের বেনারস থেকে নির্বাচিত হয়ে আদানির বিমানে চেপে দিল্লি এলেন সেখান থেকে সোজা সংসদ ভবন। টিম মোদির মাথায় অমিত শাহ হয়ে উঠলেন চাণক্য, প্রশান্ত কিশোর হয়ে উঠলেন ভোটকুশলী আর মোদিজি প্রধানমন্ত্রী। সেদিন আমজনতার ভাগ্যে কী পরিবর্তন হবে তার হদিশ আমরা পাইনি কিন্তু লালকৃষ্ণ আদবানি বা মুরলী মনোহর জোশির রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ যে কালো দিঘির জলে ডুব দিয়েছে তা ছিল পরিষ্কার। ওনাদের মার্গদর্শক মণ্ডলীর সদস্য বানিয়ে দেওয়া হল। ভলান্টিয়ারি রিটায়ারমেন্ট। কিন্তু দু’ বছর কাটতে আর কত সময় লাগে, দু’ বছর কেটে যেতেই ২০১৬তে মোদিজির তাক লাগানো ঘোষণা ডিমনিটাইজেশন, নোটবন্দি। মিত্রোঁওওওওও, আচ্ছে দিনের আশায় হা-হুতাশ করতে থাকা মানুষজনের কাছে এক নতুন ইভেন্ট হাজির হল, এইবার, এইবার শিশু চোখ মেলবে। কালো টাকার ষষ্ঠীপুজো করে ছাড়বেন মোদিজি। বাজারে এসে ঝপাং করে হাজার হাজার টাকা ফেলে চিংড়ি আর চিতল? হুট বলতে ঝুট প্যারিস, নিউইয়র্ক? বড় বড় গাড়ি? বিশাল বাংলো? এইবার জব্দ হবে। মানুষের কাছে টাকা নেই, রোজ খেটে খাওয়া মানুষের রোজগার বন্ধ, যাদের কিঞ্চিৎ আছে তারা এটিএম-এর সামনে দাঁড়িয়ে। কিন্তু মোদিজি জিন্দাবাদ, এতদিন পরে বড়লোকেদের যাদের প্রচুর টাকা আছে, তাদের শায়েস্তা করতে পেরেছেন, এল বলে আচ্ছে দিন। 

আরও পড়ুন: Fourth Pillar | সাহিদুলের মন কি বাত শুনলেন না মোদি    

সেদিন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, রাহুল গান্ধী বা অমর্ত্য সেন, রঘুরাম রাজন জোর গলায় বলেছিলেন, দেশের অর্থনীতি বিরাট ধাক্কা খাবে। কিন্তু যে যাই বলুক মানুষ দেখছিল রোটি কপড়া আর মকানের ছবি। কিছুদিন পরে মানুষ মানে ওই আম জনতা হাঁ করে দেখলেন, বাজারে সেই বিপুল মোটা সোনার চেন পরা লোকগুলো আবার হাজির, এবার গোলাপি রংয়ের নতুন ২০০০ টাকার নোট নিয়ে। আবার তাদের ব্যাগে গলদা চিংড়ি, ইলিশ মাছ, আবার তারাই বিদেশ ভ্রমণে। কাজেই আবার নতুন ইভেন্ট জিএসটি, নতুন ট্যাক্স ব্যবস্থা যা সিপিএম-এর প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী অসীম দাশগুপ্ত ছাড়া আর কেউ বোঝেননি, সেই জিএসটি চালু করা হল মধ্যরাতে, সংসদের সভা বসল, মধ্যরাতে কেন? দেবা ন জানন্তি, কুতো মনুষ্য? মানুষকে বলা হল, এইবারে ট্যাক্স ফাঁকি বন্ধ। দেখতে দেখতে পাঁচ বছর শেষের দিকে, নির্বাচন সামনে। মানুষ রোটি কপড়া মকান পায়নি, মূল্যবৃদ্ধি চূড়ান্ত সীমায়, মানুষ সবে ভরসা হারাতে শুরু করেছে মোদি সরকারের ওপর থেকে। সেই সময় পুলওয়ামা, ৪০ জন জওয়ান কাশ্মীরে রাস্তায় পড়ে আছে, ছিন্নভিন্ন তাদের শরীর, মোদিজি সভায় সভায় বলছেন ঘর মে ঘুস কর মারেঙ্গে। সেসব কিছু ছবিও এল, পাকিস্তানে নাকি সার্জিকাল স্ট্রাইক হয়েছে, রাহুল গান্ধী প্রমাণ চেয়েছেন। ধ্যাৎ তাই আবার হয় নাকি, ঘরে ঢুকে সার্জিকাল স্ট্রাইক হয়েছে সবকটা টিভি চ্যানেলে সেই ছবি, কীসের ছবি? কোথাকার ছবি? আরে ভাই অত জানার কী আছে, ছবি তো আছে, এই প্রথম পাকিস্তানে ঢুকে আমাদের সেনারা মেরে এল জঙ্গিদের, মোদি হ্যায় তো মুমকিন হ্যায়। খুব করুণ গলায় দু’ একজন বললেন বা বলা ভালো বলার চেষ্টা করলেন, এর আগে দু’ দুটো যুদ্ধে পাকিস্তানকে হারিয়েছিল ভারতবর্ষ, ওগুলো তাহলে কী ছিল? সৈন্যবাহিনী কি লাহোরে পৌঁছে যায়নি, জেনারেল নিয়াজি কি ঢাকায় বসে সারেন্ডার করেনি। কিন্তু কে শোনে কার কথা, এই প্রথম সার্জিকাল স্ট্রাইক হয়েছে, রোটি কপড়া মকান পরে আসবে, দেশ যুদ্ধে জিতেছে অতএব ২০১৯-এর মে মাসে বিজেপি ৩০৩। তাহলে এবার নিশ্চয়ই আসবে সেই স্বপ্নপূরণের দিন, রোটি কপড়া মকান আসবে ঘরে ঘরে। কিন্তু তা আসার আগেই আরও বড় সুখবর, এল নভেম্বর মাসে, রাম মন্দির তৈরি হবে। ব্যস মর্যাদাপুরুষোত্তমের রামের থেকে আগে তো রোটি কপড়া আউর মকান আসতে পারে না, কাজেই মোদিজির পাঁচ বছরের গোলপোস্ট সরে গ্যালো ২০২১-এ। 

কিন্তু তার মধ্যে এল করোনা, কপড়া মকান বাদ দিন মারা যাবার পরেও যারা ভাগ্য বলেই বেঁচে থাকলেন সেই আমজনতার কাজ নেই, রোজগার নেই, অতএব খাবারও নেই। মোদিজির পোয়া বারো, ফুড কর্পোরেশন অফ ইন্ডিয়ার গোডাউনে কৃষকদের যে ফসল জমা হয়েছিল, তিনি তা বিলোতে শুরু করলেন। সোনার ফসল ফলায় যারা তারা এখন রেশনে ফ্রি চাল আর গম পেতে লাগল, তারা এখন লভ্যার্থী। মোদিজির সেই রোটি কপড়া আউর মকানের গল্প পিছিয়ে চলে গেছে ২০৩৫, মোদিজি তখন ৮৫ বছরে পা দেবেন। মধ্যের গল্প এসে হাজির, মোদিজি এখন বিশ্বের নেতা, বিশ্বকে শোনাচ্ছেন মন কি বাত। উনি জি টোয়েন্টির নেতা, ভক্তরা বলছে এই প্রথম ভারতের প্রধানমন্ত্রী এতবড় সন্মানের অধিকারী হলেন, মিডিয়াও তাই বলছে, কাজেই রোটি কপড়া আর মকানের বদলে আপাতত হাতে সন্মান। এখনও দেশের ৮১.৩৫ কোটি মানুষ তাকিয়ে থাকেন রেশনের ফ্রি চাল গমের দিকে, হ্যাঁ ১৪০ কোটি মানুষের মধ্যে ৮১.৩৫ কোটি মানুষের ভরসা ফ্রি রেশন, এটাই সরকারি হিসেব। কিন্তু অ্যাপেল কোম্পানি তার রিটেইল স্টোর খুলছে এই দেশে যে ফোনের দাম এক লক্ষের বেশি। ২৬টা দেশে অ্যাপেল-এর রিটেল স্টোর আছে, সেই ২৬টা দেশের মধ্যে মাথাপিছু রোজগারে ২৬ নম্বরে আছে আমার দেশ ভারতবর্ষ। বাজাজ অটোর বিক্রি ১০ শতাংশ কমেছে, মার্সিডিজ বেঞ্জ গাড়ির বিক্রি বেড়েছে উল্লেখযোগ্য হারে। ২০২৩-এর পিডব্লিউসি-র গ্লোবাল কনজিউমার ইনসাইট বলছে, ৬৩ শতাংশ দেশের মানুষ খরচা কম করছেন, খরচা করতে ভয় পাচ্ছেন, ৭৪ শতাংশ মানুষ নিজের রোজগার নিয়ে চিন্তিত। জীবনদায়ী ওষুধ আর অ্যান্টিবায়োটিকস-এর দাম এ বছরেই বেড়েছে ১২ শতাংশ, এটা একটা রেকর্ড। ফাস্ট মুভিং কনজিউমার গুডস, এমএমসিজি মার্কেটে দুটো নতুন ফিনোমেনা দেখা যাচ্ছে। প্রথমটা হল দাম না বাড়িয়ে ওজন কমিয়ে দেওয়া, মানে আপনি আগে দাঁতের মাজন কিনছিলেন ১০০ গ্রাম ১৮ টাকা, এখন ৯৫ গ্রাম ১৮ টাকাতেই কিনছেন, প্রায় সব প্রোডাক্টেই এটা চলছে। অন্য ফিনোমেনাটা হল ছোট প্যাকেট, ২ টাকা, ৫ টাকা, ১০ টাকার প্যাকেট বাজারে আসা, ১০০ গ্রাম সাদা তেল বা সর্ষের তেল বাজারে আসছে। এটা হল তাদের বিজনেস পলিসি। কেন? কারণ আমজনতার কেনার ক্ষমতা প্রতিদিন কমে যাচ্ছে। দুধ বা ডেয়ারি প্রোডাক্ট আর তেলের দাম আপাতত এক রেকর্ড। জামাকাপড়ের ক্ষেত্রে ছবিটা আলাদা নয়। ব্র্যান্ডেড শার্ট প্যান্ট বিকোচ্ছে দাম বাড়া সত্ত্বেও কিন্তু নন ব্র্যান্ডেড জামাকাপড়ের বিক্রি কমেছে ৩ শতাংশ। বাড়ি মানে মকানের কথায় আসি, এই বছরেই গুরুগ্রামে ডিএলএফ-এর ১১৩৭টা ফ্ল্যাট বা বাংলো বিক্রি হয়েছে যেগুলোর দাম ৭ কোটি বা তার চেয়েও বেশি, মানে এক রেকর্ড ব্যবসা মাত্র তিন দিনে ৮০০০ কোটি টাকার। ৪০ লক্ষের তলায় বাড়ি বিক্রি হচ্ছে না, পড়ে থাকছে, এমনকী রিসেল-এর বাজারও উঠছে না। 
মোদিজি তাঁর রোটি কপড়া আউর মকানের মাদারি খেলকে নিয়ে চলে গেছেন ২০৩৫-এ, আমাদের তো অপেক্ষা করা ছাড়া আর কোনও কাজ নেই, তাই না?

 

RELATED ARTICLES

Most Popular

Video thumbnail
Mamata Banerjee | জবরদখল দেখলে গ্রেফতার, কাউকে ছাড় নয়
02:55:41
Video thumbnail
Mamata Banerjee | কোন ৫ নেতাকে সার্ভে করার নির্দেশ দিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়
02:05:30
Video thumbnail
Mamata Banerjee | 'লোভ সংবরণ করুন' কাদের উদ্দেশে বললেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়?
01:12:50
Video thumbnail
Rahul Gandhi | স্পিকার ওম বিড়লাকে কী কথা বললেন রাহুল গান্ধী?
03:31:46
Video thumbnail
Mamata Banerjee | পুলিশ-পুরসভাকে কড়া বার্তা, কী কী বললেন?
01:00:15
Video thumbnail
Mamata Banerjee | রাজ্যপালের কাছে যেতে ভয় পাচ্ছে মেয়েরা! এ কী বললেন মমতা?
01:26:41
Video thumbnail
Mamata Banerjee | মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে জয়েন্ট ইনসপেকশন কাদের নির্দেশ? কী কী নির্দেশ?
34:06
Video thumbnail
Mamata Banerjee | ১টা রাস্তা ৫ বছর চলে না কেন? প্রবল ক্ষুব্ধ মমতা
26:01
Video thumbnail
Mamata Banerjee | রাস্তায় আবর্জনা ফেলা যাবে না আর কী কী বললেন মমতা?
36:06
Video thumbnail
Mamata Banerjee | জবরদখল দেখলে গ্রেফতার কাউকে ছাড় নয়
24:16