কলকাতা: বাংলার রাজনীতিতে ইন্দ্রপতন। রাজনীতিতে নবাগত এক প্রাক্তন ক্রিকেটারের কাছে পরাজিত হলেন কংগ্রেসের (Congress) বিদায়ী লোকসভার দলনেতা, টানা পাঁচবারের জয়ী সাংসদ অধীররঞ্জন চৌধুরী (Adhirranjan Chowdhury) । নির্বাচনী রাজনীতিতে প্রথবার বিধানসভা ভোটে দাঁড়িয়ে ১৯৯১ সালে মুর্শিদাবাদের (Murshidabad) নবগ্রাম বিধানসভায় ১৪০১ ভোটে হেরেছিলেন। পরে ১৯৯৬ সালে সেই বিধানসভা থেকেই ভোটে জেতেন। তারপরে বহরমপুর লোকসভা নির্বাচনে দাঁড়িয়ে টানা জয়ের ধারা অক্ষুণ্ণ ছিল তাঁর। মঙ্গলবার ভোট গণনার দিন সকাল থেকে কখনও এগিয়ে, কখনও পিছিয়ে এমনকী একবার তৃতীয় হয়েও হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ে ছিলেন। বিকেল গড়াতেই পরাজয়ের খবর। তৃণমূল প্রার্থী ইউসুফ পাঠানের কাছে হারলেন পশ্চিমবঙ্গ প্রদেশ কংগ্রেসের সভাপতি অধীর। শেষ পাওয়া খবর অনুযায়ী, ৮৫ হাজার ভোটে তিনি পরাজিত হয়েছেন। জয়ের পর অধীরের প্রতিক্রিয়া, মানুষের রায়কে মর্যাদা দিয়ে হার স্বীকার করছি। জয়ের জন্য ইউসুফ পাঠানকে অভিনন্দন জানাচ্ছি। রাজনীতিতে জয়, পরাজয় থাকে। আগামী দিনে আবার ভালো কিছু হতে পারে।
২০১৪ সালে নরেন্দ্র মোদি প্রথমবার কেন্দ্রে ক্ষমতায় আসার বছরেও পশ্চিমবঙ্গে সব থেকে বেশি রেকর্ড ভোটে জয়ী হয়েছিলেন অধীর। ২০১৯ সালে সেই মার্জিন কমলেও তিনি জয় পান। কিন্তু, ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে বহরমপুর লোকসভার মধ্যে থাকা সব কটি বিধানসভার বেশিরভাগ আসনে জয় পায় তৃণমূল। বহরমপুর বিধানসভায় জয় পায় বিজেপি। তারপর থেকেই চাপ বাড়ছিল। কিন্তু, সাগরদিঘি বিধানসভা উপ নির্বাচনে বাম কংগ্রেস জোটের প্রার্থী বাইরন বিশ্বাস জয় পাওয়ায় আশার আলো দেখেছিল কংগ্রেস শিবির। পরে বাইরন বিশ্বাসও তৃণমূলে চলে যান। বাস্তবে, একসময় অধীর চৌধুরীর তৈরি করা রাজনৈতিক নেতারা প্রায় সবাই কংগ্রেস ছেড়ে তৃণমূলে নাম লেখায়। সেই জায়গায় একা কুম্ভ রক্ষা করে পড়েছিলেন অধীরই।
আরও পড়ুন: নরেন্দ্র মোদি তৃতীয়বার প্রধানমন্ত্রী, ইতিহাসের খাতায় নাম লেখালেন
রাজনীতিতে অধীরের উত্থান ছিল চোখে পড়ার মতো। ফ্ল্যাশব্যাকে গেলে মুর্শিদাবাদের অনেকেই বলবেন প্রথম অধীরের ভোটে লড়তে আসা নদীতে ঢেউ আসার মতোই। প্রবল প্রতাপের বাম জমানায় গরিবের রবিনহুড হয়ে তিনি মুর্শিদাবাদে পরিচিতি পেয়েছিলেন। এমনকী জেলে থেকে ভোটে লড়েও জয় পেয়েছিলেন তিনি। যুব সমাজের কাছে তিনি ছিলেন অনুপ্রেরণা। অধীরের ছেলে বলে পরিচিতি পেতে এগিয়ে আসতেন যুব সমাজের অনেকেই। সেই তিনি মুর্শিদাবাদে পঞ্চায়েত সমিতি, জেলা পরিষদ একে একে সব দখল করে প্রথম কংগ্রেসের মুর্শিদাবাদ জেলার সভাপতির দায়িত্ব পেয়েছিলেন। পরবর্তীতে মুর্শিদাবাদের তিন লোকসভা আসনেই প্রার্থীদের জয়ী করত তাঁর ক্যারিশ্মা। এমনকী জঙ্গিপুরে কংগ্রেসের প্রবীণ নেতা প্রণব মুখোপাধ্যায়কে দিল্লি থেকে নিয়ে এসে জয়ী করে এনেছিলেন। পরবর্তীতে তাঁর ছেলেও সেখানকার সাংসদ হয়েছেন। অধীর পরবর্তীতে ইউপিএ জমানায় রেল দফতরের প্রতিমন্ত্রী হয়েছেন। ২০১৯ সালে কংগ্রেসের লোকসভার দলনেতার বড় দায়িত্ব সামলেছেন। বহু রাজনীতির ঝড় সামলে নিজের জেদেই রাজ্যে বাম কংগ্রেসের সঙ্গে জোট গড়ে কট্টর তৃণমূল বিরোধিতা জিইয়ে রেখেছিলেন। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা হারের বিশ্লেষণ করবেন। তাতে বলতে পারেন এবার বহরমপুরের বিজেপির প্রার্থী নির্মল সাহা ভালো ভোট টানায় রাজ্যে শাসক বিরোধী ভোট ভাগ হয়ে গিয়েছে। তাই জয় পেলেন ইউসুফ। ঘটনা যাই হোক, এবার অধীর চৌধুরীর রাজনৈতিক জীবন প্রশ্নচিহ্নের মুখে। কারণ ভোট চলাকালীনই অধীরের তৃণমূল বিরোধিতার প্রশ্নে কংগ্রেস হাইকম্যান্ড বুঝিয়ে দিয়েছিল তাঁরা অধীরের নীতিকে সমর্থন করছেন না। সংবাদমাধ্যমে বিবৃতি দিয়ে অধীরকে কড়া বার্তা দিয়েছিলেন কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়্গেও। তৃণমূল রাজ্যে ২৯টি আসনে এগিয়ে থেকে রাজ্যে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ম্যাজিক অটুট থাকার ইঙ্গিত দিয়েছে।
আরও খবর দেখুন